বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘গল্প বোঝাটাই হয়তো আমার ওপর শাকিবের আস্থার কারণ’

  •    
  • ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ১৬:৩৭

‘দেখেন শাকিব খানকে তো আমার নতুন করে কিছু শেখানোর নাই বা আমি তাকে কিছু শেখাইও নাই। তিনি যা পারেন, আমার মনে হয় তাও আমরা দেখাতে বা বের করে আনতে পারি নাই। তিনি চান ভালো কাজ, ভালো পরিকল্পনা এবং সর্বোপরি ভালো গল্প। আমার কাছে মনে হয় আমার গল্প বোঝার ব্যাপারটা শাকিব খানকে আস্থা রাখতে সাহায্য করেছে।’

দেশের সিনেমা অঙ্গনে যাকে নিয়ে চাপা উত্তেজনা এবং ‘হিংসা’ কাজ করছে, তিনি হিমেল আশরাফ। এ নির্মাতাকে দিয়ে তিনটি সিনেমা পরিচালনা করাচ্ছেন ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ নায়ক শাকিব খান, তাও আবার নিজের টাকা দিয়ে।

বিষয়টি শাকিব খানের ভক্তসহ সিনেমার অনেকের মধ্যেই চাপা উত্তেজনা তৈরি করিয়েছে। নতুন পরিচালক নিশ্চয়ই শাকিব খানকে দিয়ে নতুন কিছু করিয়ে নেবে, এটাই অনেকের ভালোলাগা।

একই কারণে অনেকে ‘হিংসা’ও করছেন তাকে। মাত্র তো সুলতানা বিবিয়ানা নামের একটি সিনেমা নির্মাণ করেছেন হিমেল। এ অভিজ্ঞতা নিয়েই শাকিব খানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে তিনটি সিনেমা তিনি কেন নির্মাণ করবেন।

সময় সর্বদা পরিবর্তিত, সময় নতুনের। তাই হয়তো তরুণ এ পরিচালকের ওপরেই ভরসা রাখছেন শাকিব খান।

পরিচালক হিমেল আশরাফ যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ২২ নভেম্বর দেশে এসেছেন। শরীয়তপুরের হিমেল ঢাকাতেই আছেন, থাকবেন ৩ অথবা ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সুযোগে হিমেল আশরাফের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। বিজয় সরণির একটি চা-শিঙাড়ার দোকানে বসে কথা হয় তার সঙ্গে।

৩ বছর ১ মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকছেন হিমেল। তবে ঢাকার চা-শিঙাড়া থেকে ভক্তি ওঠেনি তার। বসতে বসতে শিঙাড়া ও লেবু চা চাইলেন হিমেল।

এ বছরের জানুয়ারিতেই একবার এসেছিলেন দেশে কিন্তু সেভাবে কারও সঙ্গে দেখা না করে আবার চলে যান। এবার সিনেমার কিছু প্রি-প্রোডাকশনের কাজ করছেন। সঙ্গে চলছে পরিচিতদের সঙ্গে আড্ডা, দেখা-সাক্ষাৎ।

‘পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দেখা করছি। পুরোনো বন্ধু, নির্মাতা বা মিডিয়ার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে অবশ্য ব্যক্তিগত আলাপই বেশি। সাংবাদিকদের সঙ্গেও আড্ডা দিচ্ছি। আর সিনেমার কিছু লোকেশন দেখা, সিনেমা নিয়ে কিছু মিটিংও চলছে।’ হিমেল এসব বলতে বলতে চলে এলো শিঙাড়া। চা তখনও আসেনি।

হিমেলের ঠান্ডা লেগেছে। অনেকে ভাবছেন আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য ঠান্ডা লেগেছে, না, সে জন্য নয়। এ দেশের বাতাসে ধুলার কারণে ঠান্ডা লেগে গেছে তার। তাই কথা বলার সময় বসতে চাইলেন লেবু চা নিয়ে।

শাকিব খানের সঙ্গে পরিচালক হিমেল আশরাফ। ছবি: সংগৃহীত

শাকিব খানকে নিয়ে একাধিক সিনেমা করছেন হিমেল। অনেকে তো মনে করছেন শীর্ষ নায়ককে বশ করেছেন হিমেল আশরাফ।

‘দেখেন শাকিব খানকে তো আমার নতুন করে কিছু শেখানোর নাই বা আমি তাকে কিছু শেখাইও নাই। তিনি যা পারেন, আমার মনে হয় তাও আমরা দেখাতে বা বের করে আনতে পারি নাই। তিনি চান ভালো কাজ, ভালো পরিকল্পনা এবং সর্বোপরি ভালো গল্প। আমার কাছে মনে হয় আমার গল্প বোঝার ব্যাপারটা শাকিব খানকে আস্থা রাখতে সাহায্য করেছে।’ এতক্ষণে লেবু চায়ে চুমুক পড়ে গেছে হিমেলের।

অন্যভাবে ভাবলে হিমেলও কিন্তু শাকিব খানের ওপরে আস্থা রাখছেন। শাকিবের স্টারডম ব্যবহার না করে অন্য কাউকে নিয়ে কাজ করলে বোঝা যেত তার পরিচালনার মুনশিয়ানা।

‘আমি যখন যুদ্ধে যাব তখন তো চাইবই সবচেয়ে ভালো ঘোড়া, তলোয়ারটা নিয়ে যেতে। সে ক্ষেত্রে শাকিব খানের চেয়ে ভালো প্রযোজক, অভিনেতা কি আমি আর পাব? তা ছাড়া সুযোগ থাকলে সবাই চান শাকিব খানকে নিয়ে সিনেমা করতে। অনেকে পারেন না বাজেটের কারণে, অনেকের গল্পে হয়তো শাকিব খান যায় না, অনেকের গল্প হয়তো শাকিব খানের ভালো লাগে না।’

হিমেল লস অ্যাঞ্জেলেস ফিল্ম ইনস্টিটিউটে পরিচালনা বিষয়ে লেখাপড়া করছেন। এখনও সে শিক্ষা নেয়া শেষ হয়নি। সপ্তাহে তার ২৫ ঘণ্টা ক্লাস করতে হয়। হিমেল জানান, যদি এমন হতো যে শিক্ষা নেয়াটা শেষ করলে হিমেল সিনেমা বানাতে পারবেন, তাহলে অনেক আগেই কোর্সটি শেষ করে ফেলতেন তিনি। সেই তাগিদটা তীব্র না হওয়ায় ধীরে ধীরেই কোর্সটি করছেন হিমেল।

আউট অব দ্য বক্স কিছু করতে চান না হিমেল। তিনি চান পরিপূর্ণ বিনোদন দিতে। যেখানে প্রয়োজনে শিক্ষাও থাকতে পারে। শাকিব খানকে নিয়ে নির্মিতব্য সিনেমাগুলোতে সেটাই করবেন পরিচালক।

‘সিনেমায় প্রেম, ইমোশন, অ্যাকশন, কমেডি সবই রাখতে চাই আমি। লোকেশনেও গুরুত্ব দিতে চাই। শাকিব খানকে নিয়ে সিনেমাগুলো বানাব সেখানে এসব পাবেন দর্শকরা। এখনকার দর্শকরা ভালো গল্প খোঁজেন, তাই সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে সেটি। তাছাড়া শাকিব খানও চান ভালো গল্পে কাজ করতে।’ বলেন হিমেল আশরাফ।

চা-শিঙাড়ার দোকানে আরও একটি অর্ডার দেয়ার সময় হয়েছে মনে করে এবার হিমেল চাইলেন লেবুর শরবত। শরবতটা তিনি আগেই চেয়েছিলেন কিন্তু দোকানটিতে মূল কারিগর না থাকায় এতক্ষণ লেবু চা দিয়ে সারছিলেন হিমেল।

সিনেমা আপডেট জানিয়ে হিমেল বলেন, ‘প্রথমেই নাম চূড়ান্ত না হওয়া সিনেমাটির কাজ আমরা শুরু করছি। যার অধিকাংশ কাজ হবে যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর মায়া নামের সিনেমাটি করব, যার কাজ হবে বাংলাদেশে। তারপর শুরু হবে প্রিয়তমা। এই কাজটা দেরি হওয়ার কারণ হলো, সিনেমা তো শুধু দৃশ্যধারণেই হয় না, শুটিংয়ের আগে ও পরেও হয়। সিনেমাটির জন্য যে যে কাজ করতে চাচ্ছি তা হচ্ছে না। সে সময় আমি দেশের বাইরে চলে গেলাম, তখন একটা গ্যাপ হলো। সব মিলিয়ে সময় লাগছে।’

আগামী বছরের জানুয়ারিতে আবার আসবেন হিমেল। কাজ শুরু করলে নাকি প্রতি বছরের শীতকালে তাকে দেশে পাওয়া যাবে।

দেশের পরিচিত মিডিয়া ছেড়ে বিদেশে কেমন আছেন হিমেল আশরাফ? ‘ভালো আছি। জীবিকা ও জীবনযাত্রা খুবই ভালো। ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমি যে টাকা ইনকাম করেছি, ওখানে এ তিন বছরে তার চেয়ে বেশি ইনকাম করেছি। জীবনযাত্রার মান নিয়ে কী বলব! করোনার মধ্যে সরকার আমাদের নানাভাবে আর্থিক সাহায্য করেছে। তবে হ্যাঁ, দেশকে মিস করি, মিডিয়া মিস করি। ভালো আছি বলেই হয়তো মিস করি। খারাপ থাকলে এসব মনে হতো না।’

নির্মাতা হিমেল আশরাফ। ছবি: সংগৃহীত

আর কোর্স করে নতুন কিছু শিখছেন কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে হিমেল বলেন, ‘আমি যদি আগে থেকে এ দেশে নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত না থাকতাম, তাহলে বিস্মিত হতাম। আমি বিস্মিত হই, যখন দেখি যে কাজটা আমাদের দেশে ৫ জন দিয়ে করেছি, ওরা সেই কাজ আরও অনেক মানুষ দিয়ে করায়। এতে করে আরও পারফেকশন আসে। তাছাড়া ওদের বাজার বড় হওয়ায় খরচ করতে অসুবিধা হয় না। ওখানে একজন ক্রু প্রতি ঘণ্টায় ২৫০ ডলার পায়। সময়মতো আসে, সময়মতো কাজ করে চলে যায়। আমাদের এখানকার অবস্থা আর নাই বললাম।’

এখন পরিকল্পনাতেই ব্যস্ত হিমেল আশরাফ। নানা রকম গল্প লিখছেন, ভাবছেন। এরই মধ্যে কিছু প্রযোজক যুক্তরাষ্ট্রেই তার সঙ্গে আলাপ করেছেন সিনেমা নির্মাণ নিয়ে। কিন্তু হিমেলের কাছে আপাতত বিদেশের গল্প নেই, যা আছে সব বাংলাদেশের।

চা-শিঙাড়া আর শরবতের বিল দেয়া হয়ে গেলে হিমেল বলেন, ‘আগে হলে আমি এ কাজগুলো ছাড়তাম না কিন্তু এখন কাজ করতে চাই সন্তুষ্টি, যুক্তি ও কনফিডেন্ট নিয়ে। দেশে যখন নিয়মিত ছিলাম, তখন আমার টাকার চিন্তা ছিল। অনেক কাজ করতে হয়েছে কিন্তু এখন তো আমি আগের চেয়ে ভালো আছি, এখন সময় নিয়ে ভালো কাজই করতে চাই। কী চাই, সেটা বুঝে তারপর কাজে নামতে চাই।’

নাম চূড়ান্ত না হওয়া শাকিব খানের যে সিনেমাটি করতে যাচ্ছেন হিমেল, তার প্রথম লাইন তিনি লিখেছিলেন ২০২০ সালের মার্চ মাসে। সেটির চিত্রনাট্য এখনও শেষ হয়নি। এখনও রি-রাইট চলছে।

নতুন ভাবনায়, নতুন শক্তি নিয়ে পরিচালক হিমেল আশরাফ চলতে চান বাকিটা পথ। সমস্যা এবং সম্ভাবনা দুই তার কাঁধে। আগামীর কাজে বিফল হলে মুখ ফিরিয়ে নেবে দর্শক। প্রযোজক আস্থা হারাবে নতুন পরিচালকের ওপর থেকে। আর সফল হলে নতুন মাত্রা পাবে দেশের সিনেমা। হবে নতুন নতুন পরিকল্পনা।

এ বিভাগের আরো খবর