শুরু হয়েছে বাংলাদেশ-তুরস্কের যৌথ প্রযোজনার নেত্রী- দ্য লিডার সিনেমার দ্বিতীয় লটের শুটিং। সাভারে চলছে এর দৃশ্যধারণ। এতে অংশ নিয়েছেন অনন্ত জলিল, বর্ষা, ভারতের প্রদীপ রাওয়াত, তরুণ আরোরাসহ অনেকে।
২৪ নভেম্বর সিনেমাটি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অনন্ত বর্ষা। সেখানে তুলে ধরেন সিনেমা নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা এবং পরিকল্পনার কথা।
সিনেমায় নেত্রী চরিত্রে অভিনয় করছেন বর্ষা এবং তার বডিগার্ডের চরিত্রে অনন্ত জলিল।
বর্ষা-
বেশি কিছু বলতে চাই না কারণ আমি যেটা বিশ্বাস করি, আমার কাছে যেটা মনে হয় যে, মানুষকে কাঁদানো খুব সহজ কিন্তু হাসানো অনেক কঠিন। মানুষকে খুশি করা খুব কষ্টের একটা কাজ। মানুষকে অল্প কিছু বললেই কষ্ট পায় কেঁদে দেয়।
নেত্রী- দ্য লিডার সিনেমার দ্বিতীয় ধাপের শুটিং শুরু করে যেটা মনে হচ্ছে, এত কষ্ট এত যন্ত্রণা এত চ্যালেঞ্জিং একটা ক্যারেক্টার আমার। খুব বেশি কষ্টে থাকলে মানুষ যেমন সবকিছু ছেড়ে দিয়ে বসে যায়, একা হয়ে যায়। আমার কাছে তেমনটাই মনে হচ্ছে।
ইয়াং একজন লিডার। সে কীভাবে তার জীবন, তার ফ্যামিলি, তার স্বামী, তার সংসার, তার সবকিছুকে ব্যালেন্স করে মানুষের জন্য কাজ করা, দেশের জন্য কাজ করা। ভীষণ ভালো লাগছে। বিদেশি আর্টিস্টের সঙ্গে আগেও কাজ করেছি, এবার অন্য রকম অভিজ্ঞতা অবশ্যই।
প্রদীপ রাওয়াত স্যার, আপনার সবাই চেনেন, বাংলাদেশেও তিনি অনেক পরিচিত। তরুণ আরোরাও ঢাকাতে আছেন। তারা এত বেশি হেল্পফুল! কোনো সমস্যা হলে বুঝিয়ে দেবে, ম্যাডাম জি এ রকম করে করেন। খুব ভালো লাগছে।
আরেকটা জিনিস বলতে চাই, হায়দরাবাদে আমার এমন মনে হয় নাই কিন্তু দেশে শুটিং শুরু করার সময় এটা আমি মনে বসিয়ে নিয়েছি যে, এই ধরনের চরিত্র আমি আর কখনোই করতে পারব না এবং এই চরিত্র বাস্তব জীবনেও আমি কখনও পাব না বা হওয়ার ইচ্ছাও নাই।
তাই এই সিনেমায় আমি এমন কিছু করতে চাই, এমন অভিনয় করতে চাই যেন মানুষ বলে যে করছে, বর্ষা তার জীবনের সেরা অভিনয়টা করেছে। এর পরেও যদি আমি সিনেমায় অভিনয় করি, তারপরও যেন মানুষ এটাই মনে রাখে।
এই চরিত্রের জন্য কাউকে না কাউতে ফলো করতে হবে। আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি সব সময় পছন্দ করি। এত সুন্দর হাসি, এত সুন্দর করে শাড়ি পরেন, এত সুন্দর করে ম্যাচিক করে অলংকার পরেন। এত সফট, পোলাইট, এত সুন্দর করে কথা বলেন।
আমি যদি তাকে আমার রোল মডেল মনে করি তাতে তো দোষের কিছু দেখি না।
অনন্ত জলিল-
নেত্রীকে প্রোটেকশন দেয়া আমার কাজ। আমি বডিগার্ড। (প্রদীপ রাওয়াত পাশ থেকে- খুব হ্যান্ডসাম বডিগার্ড)।
এটা আমি রাতেও চিন্তা করি। ধরেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বডিগার্ড আছে, তাদের কী এক্টিভিটিস থাকে, তারা কীভাবে কাজ করে, আমি কী সেভাবে করতে পারতেছি কি না। এগুলো নিয়ে চিন্তা করি। তারা কীভাবে দাঁড়ায়। তাকে কোথাও যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করলে কীভাবে হাতটা দেখায়। এগুলো নিয়ে আমি খুব টেনশনে আছি, মানুষ যেন আবার ট্রল না করে যে এগুলো হচ্ছে না।
এটা সত্যি খুব চ্যালেঞ্জিং একটা ক্যারেক্টার। নেত্রীকে সব সময় প্রোটেকশন দেয়া, নেত্রীকে সব সময় রেসপেক্ট করা আমার দ্বারা হচ্ছে কি না, এগুলো ভাবছি আর করে যাচ্ছি।
সঙ্গে আমার মাথায় তো ধরেন অনেক কিছু কাজ করে, শট দেয়ার সময় থাকে না। সিনেমার স্ক্রিপ্ট আমার লেখা, ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ না, একদম শতভাগ আমার অ্যারেঞ্জমেন্ট করা।
২০ নভেম্বর এখানে পুরোটা সেট ছিল। আপনারা ইউটিউবে দেখে থাকবেন। ওগুলো পুরো ডিজাইন আমার করা। নেত্রীর অফিস রুম, কনফারেন্স রুম- সব ডিজাইন আমার করা।
নেত্রীর বাবা একজন লিডার ছিলেন, তার মেয়ে হচ্ছে এখন নেত্রী, তিনি সৎ, জনগণের টাকা তিনি খরচ করতে চান না, তাহলে তার লাইফস্টাইল কেমন হওয়া উচিত। ওই লাইফস্টাইলের সঙ্গে ম্যাচ করে তার কস্টিউম ডিজাইন করা, তার গাড়ি, তার সহশিল্পীদের পোশাক কেমন হবে- সবকিছুর কাজ আমি করেছি।
তিনি (প্রদীপ রাওয়াতকে দেখিয়ে) সিনেমায় একজন পলিটিশিয়ান। দলে থেকে তিনি চাচ্ছেন লিডার হতে। তার চরিত্রের সঙ্গে কস্টিউম ডিজাইন করা, তরুণ অরোরার ক্যারেক্টারের সঙ্গে ম্যাচ করে পোশাক ডিজাইন করা, পুরো বিষয়টা আমি পরিকল্পনা করছি।
দেশের বাইরে মানে তুর্কিতে যে শুটিং হবে, সেখানকার লোকেশন, আমাদের গল্প তাদের বোঝানো, এমন কোনো কাজ নেই যে আমি করি না।
এই এক মাস ধরে আমি তিন ঘণ্টা সাড়ে তিন ঘণ্টা করে ঘুমাই কি না, সন্দেহ আছে। আমি শট দেব কী, সারাক্ষণ এসব নিয়েই কাজ করি।
আমার টিম আছে, তারা তো করছেই কিন্তু আমার পক্ষ থেকে আমিও করছি। তারা বাংলাদেশে এসেছে, তাদের অবশ্যই খুশি থাকতে হবে। যখন তারা ফেরত যাবে, অনেকেই তাদের জিজ্ঞেস করবে যে, বাংলাদেশ কেমন লাগল? বাংলাদেশকে তো আমরা ছোট করতে পারব না।
তারা কোথায় থাকবে, কী খাবে, প্রতিটা জিনিস আমার মাথায়। তারপর শট দেয়ার সময় আমি শট দিয়ে যাচ্ছি।
যা বললাম, সব দর্শককে দেখায় দেন, তাহলে বুঝবে, যারা এই লাইনে আছে, তারা বুঝবে এত বড় একটা সিনেমা করতে, ইন্টারন্যাশনাল সিনেমা করতে কী অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে হয় আর কী অনন্ত জলিল করেছে, তাহলে ওরা বুঝবে।
আমার হায়দরাবাদে বেটার অ্যাকশনের জন্য বাংলাদেশের কিছু শুটিং করেছি এবং বাংলাদেশেও করছি। দুই জায়গা মিলিয়ে পঞ্চাশ থেকে পঞ্চান্ন ভাগ হবে। বাকি কাজ হবে তুর্কিতে।
সিনেমার বাংলাদেশের অংশের খরচ আমার এবং তুর্কির অংশের খরচ তাদের। এখানে ভারতীয় শিল্পী ও কলাকুশলী আছেন, তাদের সম্মানী বেশি এবং এই খবর আমার। তবে ভারতীয় শিল্পী ও কলাকুশলীদের সম্মানীর একটা অংশ তুর্কি প্রযোজকও দেবেন। মোট কত টাকা খরচ হবে, সেটা এখনই বলতে পারছি না। সঙ্গে তো আছেন, জানাব।
এই যেমন সামনের শুটিংয়ে পরিচালক পাঁচ ক্যামেরা চেয়েছেন। শুটিং হবে দুই জায়গায়। তখন খরচ এমনিতেই বেড়ে যাবে।