বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাসান আজিজুলের শেষ উপন্যাস ‘তরলাবালা’ আসছে বইমেলায়

  •    
  • ১৭ নভেম্বর, ২০২১ ২০:৫৮

“এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা। তিনি চাচ্ছিলেন সেখানে আবার যাবেন। সে যাওয়াটা আর হয়নি ওনার। পরে সেটিকে ছোট আকারে আমাদের দিয়েছেন। ‘তরলাবালা’ আমাকে গত বছর দিয়েছেন স্যার। আমি চেয়েছিলাম স্যার যদি আর একটু সুস্থ হন, স্যারকে দিয়ে আর একটু লেখাব। সে জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম।”

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক গত প্রায় তিন বছর ধরেই সেভাবে লেখালেখি করতে পারছিলেন না। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তার লেখালেখি সেভাবে হয়নি। মনের ভেতর অনেক ভাবনা উঁকি দিলেও তা লেখা হয়নি কাগজে।

এ সময়টাতে তিনি লিখেছেন ছোট ছোট কিছু লেখা। গভীর ভাবনার এই লেখক গত প্রায় দেড় দশক আগে একটি উপন্যাস লেখার কাজ শুরু করেছিলেন। চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সেটি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু শেষ করতে পারেননি।

খারাপ শারীরিক অবস্থার কারণে বড় উপন্যাসের বদলে তিনি সেটিকে ছোট করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। উপন্যাসটির নাম ‘তরলাবালা’।

উপন্যাসের একটি পান্ডুলিপি তিনি জমা দিয়ে রেখেছেন ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশে। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গুণী এই লেখকের শেষ উপন্যাস ‘তরলাবালা’ আগামী বইমেলাতেই তারা প্রকাশ করবে।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের যেসব গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে, তার অধিকাংশই বেরিয়েছে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে। হাসান আজিজুল হকের বিখ্যাত উপন্যাস ‘আগুনপাখি’ও প্রকাশ করেছে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ। বই প্রকাশের সূত্র ধরে ইত্যাদির সঙ্গে ছোটগল্পের বরপুত্র হাসান আজিজুল হকের একটা গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

অন্যদিকে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ এ পর্যন্ত যেসব লেখকের বই প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে সব থেকে বড় মাপের লেখক হাসান আজিজুল হক। গুণী এই লেখকের মৃত্যুর খবর শুনে রাজশাহীতে ছুটে আসেন ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক জহিরুল আবেদীন জুয়েল। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে। সেখানেই কথা বলেন নিউজবাংলার সঙ্গে।

ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক জহিরুল আবেদিন জুয়েল বলেন, ‘প্রথমেই বলতে হবে যে আমার প্রকাশনা সংস্থা একজন অভিভাবক হারাল। আমি প্রকাশনা শুরু করেছি ২০০৩ সালে। স্যারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ২০০৬ সাল থেকে। তার পর থেকে ওনার ২৪-২৫টি বই আমি ছেপেছি।

‘আমার সঙ্গে স্যারের বেশ আলোচনা হতো। প্রতিটি লেখার বিষয়ে আলোচনা হতো। স্যারের জন্ম ২ ফেব্রুয়ারি। প্রতিবছর আমার টার্গেট থাকত স্যারের নতুন বইটা আসবে ২ ফেব্রুয়ারি। সেভাবেই আমার প্রকাশনা থেকে রি-প্রিন্ট ছাড়া যতগুলো বই এসেছে, বেশির ভাগ বই-ই ২ তারিখে এসেছে।’

জহিরুল আবেদীন জুয়েল আরও বলেন, ‘আমি তো আগে প্রায়ই রাজশাহী আসতাম। একটা সময় ছিল স্যারের এখানে মাসে বা দুই মাসে একবার আসতেই হতো। দুপুরবেলায় আসতাম। স্যারের সঙ্গে খেতাম। রাতে যেতে যেতে ১০টা-১১টা পর্যন্ত বেজে যেত আমার। অনেক সময় স্যার ঢাকায় গেলে একই রকম আড্ডা হতো। আড্ডা দিতে ও গল্প করতে খুব পছন্দ করতেন তিনি।

“ওনার ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসটি নিয়ে স্যারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এত কঠিন ভাষা ব্যবহার করছেন, নতুন প্রজন্মের পাঠকের পড়তে একটু কঠিন হবে। তখন স্যার বলেন, কী করব বলো? এটাই ছিল আমাদের বর্ধমানের ভাষা। বর্ধমানের ভাষাটাকে তুলতে গিয়েই আমি এটি ব্যবহার করেছি। তিনি আমার কাছে স্বীকার করেছেন যে, ‘আগুনপাখি’ তার মায়ের আত্মজীবনী। স্যার বলেছিলেন, কীভাবে দেশ বিভাগের সময় তার মা মাটি আঁকড়ে ধরেছিলেন, সেই বিষয়টি এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

“এটি শোনার পর স্যারকে তার নিজের আত্মজীবনী শুরু করতে বলেছিলাম। স্যার সেটি শুরু করলেন। ওনার আত্মজীবনী প্রথম খণ্ড লিখলেন ‘ফিরে যাই ফিরে আসি’, তারপর লিখলেন ‘উঁকি দিয়ে দিগন্ত’, এরপর তৃতীয় খণ্ড লিখলেন ‘এই পুরাতন আখরগুলি’। শেষ খণ্ড লিখলেন ‘দুয়ার হতে দূরে’, এটিই শেষ। এই অংশ লিখেই স্যার বললেন, আর মনে হয় পারব না। এরপর আত্মজীবনীর কোনো অংশ লেখেননি।”

হাসান আজিজুল হকের স্মৃতিচারণামূলক লেখা ‘একাত্তর করতলে ছিন্ন মাথা’ প্রসঙ্গে প্রকাশক জুয়েল বলেন, “আমি মূলত প্রকাশনার আগে থেকেই তার ভক্ত। আমি যখন ওনার লেখা পড়া শুরু করি, তখন ওনার কোনো বড় উপন্যাস ছিল না, সবই ছোট উপন্যাস। ওনার ‘একাত্তর করতলে ছিন্ন মাথা’ বইটা পড়লে গা শিউরে ওঠে। আমার মনে হয় যে আমি প্রকাশ্যে দেখছি।’

তিনি বলেন, “স্যারের সবশেষ লেখা ছেপেছি তিন বছর আগে। স্যার একটি উপন্যাস লেখা শুরু করেছিলেন প্রায় ১৫ বছর আগে। উপন্যাসটির নাম ‘তরলাবালা’। সর্বশেষ এই পান্ডুলিপি তিনি আমাকে দিয়েছেন। এটি এখনও ছাপা হয়নি। আমি স্যারকে বলেছিলাম, উপন্যাসটা আরও একটু বড় হোক। উপন্যাসটা তিনি বড় প্লট নিয়েই লিখছিলেন কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আর এগোতে পারেননি।

“এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা। তিনি চাচ্ছিলেন সেখানে আবার যাবেন। সে যাওয়াটা আর হয়নি ওনার। পরে সেটিকে ছোট আকারে আমাদের দিয়েছেন। ‘তরলাবালা’ আমাকে গত বছর দিয়েছেন স্যার। আমি চেয়েছিলাম স্যার যদি আর একটু সুস্থ হন, স্যারকে দিয়ে আর একটু লেখাব। সে জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম। স্যার আমাকে বলেছেন, তুমি বের করে ফেলো। আগামী বইমেলায় স্যারের এই শেষ বই ‘তরলাবালা’ আসবে।”

বইটি প্রকাশের জন্য কাজও শুরু হয়ে গেছে বলে জানান প্রকাশক।

এ বিভাগের আরো খবর