একাত্তরে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা পাকিস্তান চিরকালই চাপা দিয়ে এসেছে। পাকিস্তানের পাঠ্যপুস্তকেও এড়িয়ে যাওয়া হয় তাদের নৃশংসতার অধ্যায়টিকে।
এবার দেশটির একটি নির্মীয়মাণ সিনেমা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে এ দেশের মানুষের মধ্যে। এর নাম খেল খেল মে। ইতোমধ্যে সিনেমাটির ট্রেলার প্রকাশ হয়েছে। সেটুকু দেখেই ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাই এ ছবির মূল উপজীব্য। আর এতে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার দিকটি তুলে ধরা হয়েছে, যা দেখে মনে করা হয়, চলচ্চিত্রটি পাকিস্তানের সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনেকটাই সরে আসতে পেরেছে।
সিনেমাটির ট্রেলারে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অডিটরিয়াম’ লেখা দেখা গেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের পতাকা মাথায় বাঁধা মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকার সদরঘাট, ঢাকা লেখা শব্দটি দেখা গেছে। ট্রেলারের শুরুতেই একটি কণ্ঠে শোনা গেছে, ‘আমরা কখনোই ভাবিনি যে একটি স্ফুলিঙ্গ পুরো বনকে পুরিয়ে ফেলবে।’
ট্রেলারের একটি দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অডিটরিয়াম। ছবি: সংগৃহীতআর ট্রেলারের শেষে একজন তরুণ নারী কণ্ঠে শোনা যায়, ‘আমরা কেন প্রশ্ন করছি না? একটা মিথ্যা অভিযোগ কেন বয়ে বেড়াচ্ছি আমরা? কেন প্রশ্ন করছি না যে কী হয়েছিল? নাকি আমরাও সেই মিথ্যার অংশীদার হয়ে গেছি, যেটা ষড়যন্ত্রকারীরা চেয়েছিল?’
এমন সব সংলাপ থেকে ধারণা করা যায়, হয়তো সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে সিনেমায়।
ট্রেলারে এটা স্পষ্ট যে দুটি ভিন্ন সময় ও প্রজন্মের গল্প বলা হয়েছে সিনেমায়। একটিতে দেখানো হয়েছে যুদ্ধের বর্বরতা, অপরটিতে মিথ্যা তথ্যের নিচে চাপা পড়া ইতিহাসের ওই অধ্যায়টি খুঁড়ে তুলে আনা একদল তরুণের গল্প। ওই তরুণদের সঙ্গেই যুক্ত করা হয়েছে পুরোনো সময়কে। যাদের মাধ্যমে হয়তো উঠে আসবে নতুন কোনো বার্তা।
নাবিল কুরেশির পরিচালনায় সিনেমার প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী সজল আলি ও অভিনেতা বিলাল আব্বাস খান। দুজন শিল্পীই এখন তুমুল জনপ্রিয় পাকিস্তানে।
ট্রেলারে রয়েছে ওপর থেকে সদরঘাটের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীতসিনেমাটি প্রসঙ্গে আইএমডিবিতে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের খেল খেল মে নামের বাণিজ্যিক সিনেমায় দুটি প্রজন্মকে দেখানো হয়েছে, যার একটি বাংলাদেশিদের ওপর চরম বর্বরতা ও নির্যাতন চালিয়েছে এবং আরেকটি প্রজন্ম যারা বয়সে তরুণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, তাদেরকে দেয়া হয়েছে মিথ্যা তথ্য।’
ট্রেলারে আরও লেখা হয়েছে, ‘৫০ বছরের অবিশ্বাসের স্মৃতি ও মিথ।’
খেল খেল মে সিনেমার অন্যতম মিডিয়া পার্টনার এআরওয়াই নিউজ। সিনেমার নির্মাতা নাবিল কুরেশি সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, ‘ক্ষমতার বিপরীতে ভালোবাসা কীভাবে বিরাজ করে এবং কীভাবে দেশের সৃজনশীল তরুণ-তরুণীদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে পারে, তা দেখানো হবে সিনেমাটিতে।’
কপালে দেশের পতাকা বেঁধে মুক্তিযুদ্ধ করছেন এক যোদ্ধা। ছবি: সংগৃহীতবিনোদন ও এর মূল্যায়ন নিয়ে পাকিস্তানের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রিভিউউইট ডট পিকে তে সিনেমাটি নিয়ে লেখা প্রকাশ হয়েছে। সেখানে ট্রেলারটি নিয়ে দর্শকেরা অনেকগুলো মন্তব্য করেছেন। প্রায় সবাই ট্রেলার বা সিনেমাটির প্রশংসা করেছেন।
একজন দর্শক লিখেছেন, ‘সিনেমাটি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ভাগ হয়ে যাওয়ার গল্প নিয়ে নির্মিত। কী ঘটেছিল সে সময়। অপেক্ষা করছি দেখার জন্য।’
পাকিস্তানের আরেক সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন সিনেমাটিকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ঘটনা বলেছে।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, খেল খেল মে সিনেমাটির সেট এবং শিল্প নির্দেশনা বলিউডের আমির খান অভিনীত রাঙ দে বাসন্তি সিনেমার কথা মনে করিয়ে দেয়। ডকুমেন্টেশন এবং নাট্য বিনোদনের মাধ্যমে সিনেমা নির্মাণের পদ্ধতিটি এ সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই সিনেমাতেও একটি শক্তিশালী নারী নেতৃত্ব ছিল, যিনি কিছু বিভ্রান্ত যুবককে একত্রিত করার চেষ্টা করেন। খেল খেল মে সিনেমাতেও এখন পর্যন্ত তেমনটাই মনে হচ্ছে।
সিনেমাটি পাকিস্তানে মুক্তি পাবে ১৯ নভেম্বর। করোনায় সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর খেল খেল মে সিনেমা দিয়ে খুলছে প্রেক্ষাগৃহ। সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে সিনেমাওয়ালার ব্যানারে।