অ্যাপার্থাইড বা বর্ণবৈষম্যের শেষ সময়ে সাউথ আফ্রিকায় এক শ্বেতাঙ্গ পরিবারের গল্প লিখে বুকার প্রাইজ পেলেন ডেমন গ্যালগুট। দ্য প্রমিস নামের উপন্যাসটিকে এ পুরস্কারে ভূষিত করতে গিয়ে বিচারকরা বলেছেন, ‘কী করে একটা উপন্যাস আমাদের নতুনভাবে ভাবতে ও দেখতে শেখাতে পারে, (এটি) তার দর্শনীয় এক উদাহরণ।’এটিকে তারা তুলনা করেছেন উইলিয়াম ফকনার ও ভার্জিনিয়া উলফের লেখার সঙ্গে।এর আগে দুইবার পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পেলেও এবারই প্রথম গ্যালগুট ৫০ হাজার পাউন্ড (৫৮ লাখ টাকা প্রায়) সমমূল্যের পুরস্কার জিতলেন। ‘দ্য প্রমিস’ সাত বছর বিরতিতে বের হওয়া তার নবম উপন্যাস। জে এম কোয়েটজি ও ন্যাডিন গোরডিমারের পর তৃতীয় সাউথ আফ্রিকান হিসেবে তিনি এ পুরস্কার জিতলেন।চার দশকের চারটি অনুক্রমিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখানোর মাধ্যমে দ্য প্রমিস সোয়ার্ট নামে একটি পরিবারের গল্প বলে। তারা সাউথ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া শহরের বাইরে একটি ফার্মে বসবাস করে। যে প্রমিস বা প্রতিশ্রুতি নিয়ে উপন্যাসটির নামকরণ, সেটিও সোয়ার্ট পরিবারের করা।এক কৃষ্ণাঙ্গ নারী যে তাদের জন্য সারা জীবন কাজ করেছে, তাকে একটি বাড়ি ও একখণ্ড জমি দেয়ার প্রতিশ্রুতি করেও বছরের পর বছর তা পালন করতে পরিবারটি ব্যর্থ হয়।বুকারের বিচারকদের মতে উপন্যাসটি ‘সাউথ আফ্রিকার ইতিহাস ও সর্বোপরি মানবতা নিয়ে একটি শক্তিশালী ও স্পষ্ট আখ্যান, যা শেষ পর্যন্ত একটি প্রশ্নই তোলে: সত্যিকার বিচার বলে পৃথিবীতে আদৌ কিছু কি আছে?’বুকার বিচারকদের প্রধান মায়া জেসানফ ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘বইটা যে আসলে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে লেখা, সেটা আমাদের কাছে পরিষ্কার। অসাধারণ গল্প ও থিম নিয়ে সাউথ আফ্রিকার গত ৪০ বছরের ইতিহাসের দারুণ মোড়কে লেখা এ উপন্যাস।‘দ্য প্রমিস-এ চমৎকারভাবে গল্প বলার সবগুলো বৈশিষ্ট্যই আছে। এ বইয়ে ভাবনার খোরাকও প্রচুর। এতে গাঁথুনি ও সাহিত্যশৈলীর ওপর অসাধারণ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিবার পড়ার সময়ই নতুন একটা কিছু নিয়ে হাজির হচ্ছে বইটি।’দ্য প্রমিস উপন্যাসের প্রেক্ষাপট প্রিটোরিয়া, যেখানে গ্যালগুট বেড়ে উঠেছেন। বর্তমানে কেপটাউনে বসবাসরত এই লেখক সোয়ার্ট পরিবারকে নিয়ে বলেন, ‘প্রিটোরিয়ার বেড়ে ওঠার সময়ে আমার অভিজ্ঞতায় সংমিশ্রণে নির্মাণ করা হয়েছে তাদের। ইংরেজ ও আফ্রিকানসের মিশেল এবং ধর্মবিশ্বাস ও প্রচলিত বিশ্বাসের মিশ্রণ, যেটা আসলে এই অঞ্চলের জন্য অস্বাভাবিক নয়।‘তবে এ বৈশিষ্ট্যগুলো নয়, বরং তারা যে সময়ে বাস করছেন, সেটার জন্যই তারা এ অঞ্চলের প্রতিনিধি হয়ে ওঠেন।’পুরস্কার পাওয়ার পর গ্যালগুট বলেন, ‘আফ্রিকার লেখকদের জন্য এটি দারুণ একটা বছর। যেখানে আমার জন্ম, সেই অসাধারণ মহাদেশের সব জানা-অজানা লেখক ও বলা না বলা গল্পের পক্ষ থেকে আমি এ পুরস্কার গ্রহণ করছি। আশা করি এরপর থেকে সবাই আফ্রিকার লেখাগুলোকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেবে।’গ্যালগুট জানান, বইটাতে হাস্যরস থাকা তার জন্য জরুরি ছিল। তিনি বলেন, ‘দ্য প্রমিস শেষকৃত্য, মৃত্যু, ক্ষয় ও বিয়োগান্তক বিষয় নিয়ে লেখা। যে বইটা লিখতে আমার চার বছর লেগেছে, সেটা আমাকে বিষণ্ন করে তুলুক তেমনটা আমি চাইনি। হাস্যরস আমার জন্য নানা বিষয়ের মানবিক দিকটা তুল ধরার একটা উপায় ছিল। বইটা আসলে মৃত্যু নিয়ে নয়, যাপিত জীবন নিয়ে।’উপন্যাসের কাঠামোটি নতুন ধরনের, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের সঙ্গে বর্ণনাও পরিবর্তন হতে থাকে।বুকার পুরস্কারের বিচারকদের মতে, এটি ‘একটি অপ্রচলিত স্টাইল, যা ২১ শতাব্দীতে উপন্যাসের প্রসারের কথাই মনে করিয়ে দেয়।’গ্যালগুট অবশ্য বলেছেন, তিনি প্রচলিত ধারাতেই উপন্যাসটি লেখা শুরু করেন। একটি সিনেমার চিত্রনাট্য লেখার কাজ তার উপন্যাস লেখায় সাহায্য করেছে বলে জানান তিনি।তিনি বলেন, ‘গল্পের কথক একটা সিনেমা ক্যামেরার মতো আচরণ করতে পারেন। কাছে যেতে পারেন। সেখান থেকে হুট করে দূরে সরে যেতে পারেন। কোনো দৃশ্য বা কোনো বাক্যের মাঝখানেই এক চরিত্র থেকে আরেক চরিত্রে লাফ দিতে পারেন। কিংবা কোনো পার্শ্বঘটনার দিকে মনোযোগ দিতে পারেন যার সঙ্গে মূল গল্পের কোনো যোগ নেই।’তিনি যোগ করেন, ‘সিনেমায় হুট করে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। আমি ভাবলাম উপন্যাসে কেন নয়? এটা ভাবার পর নিজেকে উপন্যাসের কঠোর ঐতিহ্যের হাত থেকে বেশ স্বাধীন মনে হচ্ছিল। যে কণ্ঠস্বরগুলো সব সময় অবদমিত থাকে, সেগুলোকে মুক্ত করে দেয়া সম্ভব হলো আমার পক্ষে।’গ্যালগুট ২০০৩ সালে ‘দ্য গুড ডক্টর’ ও ২০১০ সালে ‘ইন আ স্ট্রেঞ্জ রুম’-এর জন্যও বুকার পুরস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন।জেসানফ বলেন, ‘উপন্যাসে অসুখী পরিবার, তাদের এলাকা ও তাদের মধ্যে গন্ডগোলের বর্ণনা প্যানেলকে ফকনারের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।’‘দ্য প্রমিস প্রমাণ করেছে কীভাবে একটা উপন্যাস আমাদেরকে নতুনভাবে দেখতে ও চিন্তা করতে বাধ্য করে। যে উত্তরাধিকারগুলো আমরা পাই বা যেগুলোকে আমরা ছেড়ে যাই, সেগুলো নিয়ে এই বই। এ বছরের বুকার পুরস্কারে ভূষিত করায় আশা করি এটি আগামী দশকগুলোতেও পাঠকের কাছে সমাদৃত হবে।’
‘দ্য প্রমিস’ লিখে বুকার পেলেন ডেমন গ্যালগুট
এর আগে দুইবার পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পেলেও এবারই প্রথম গ্যালগুট ৫০ হাজার পাউন্ড (৫৮ লাখ টাকা প্রায়) সমমূল্যের পুরস্কার জিতলেন। দ্য প্রমিস সাত বছর বিরতিতে বের হওয়া তার নবম উপন্যাস।
-
ট্যাগ:
- গ্যালগুট
এ বিভাগের আরো খবর/p>