বর্ণিল আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে গুণিজন আসাদুজ্জামান নূরের ৭৫তম জন্মদিন।
‘আসাদুজ্জামান নূর জয়ন্তী জাতীয় উদযাপন কমিটি’ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘শুভ ৭৫’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
‘তোমারই হোক জয়’ শিরোনামে এ আয়োজনে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন সারা দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
আলোচকরা আসাদুজ্জামান নূরের জীবনের কথা তুলে ধরেন। তাদের ভাষায়, সময়ের সীমানা অতিক্রম করে জীবন আর সমাজকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনে চলা গুণীদের মধ্যে তিনি অগ্রগণ্য।
আসাদুজ্জামান নূর শিল্পের ভুবনে মানবিক জীবনবোধ আর সুন্দরের আরাধনায় নিমগ্ন শক্তিমান ব্যক্তিত্ব বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।
জন্মদিনের আয়োজনের শুরুতে তার জনপ্রিয় পরিবেশনা সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যনাট্য ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ এর মুখবন্ধের আবৃত্তির সঙ্গে নৃত্যশিল্পীরা তাকে মঞ্চে উপস্থাপন করেন। এই পর্বের গ্রন্থনা ও নির্দেশনা করেন হাসান আরিফ।
বাংলাদেশের সংস্কৃতিকর্মীদের পক্ষে আসাদুজ্জামান নূরকে শুভেচ্ছা জানান জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক অনুপম সেন ও সদস্য সচিব গোলাম কুদ্দুছ। আসাদুজ্জামান নূরকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
আসাদুজ্জামান নূরকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনার পোশাক তুলে দেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আহকাম উল্লাহ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব গোলাম কুদ্দুছ।
আসাদুজ্জামান নূরকে নিবেদন করে কবিতা আবৃত্তি করেন হাসান আরিফ। প্রশংসাবচন পাঠ করেন নাট্য ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ।
আসাদুজ্জামান নূরের কর্মময় জীবনের চিত্রকল্প উপস্থাপন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।
আসাদুজ্জামান নূর ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুঁড়িতে জন্ম নেন। তার মা আমিনা বেগম ও বাবা নাজেম মোহাম্মদ আলী। ১৯৪৮ সালে পরিবারের সঙ্গে তিনি নীলফামারী চলে আসেন।
দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে আসাদুজ্জামান নূর সবার বড়। ১৯৬২ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন তিনি।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও সামনের সারিতে ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। শিক্ষাজীবনেই রাজনীতির পাশাপাশি থিয়েটার ও আবৃত্তিচর্চায় যুক্ত হন তিনি। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত আশি ও নব্বইয়ের দশকে
টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান আসাদুজ্জামান নূর। তার অভিনয় করা বহু উল্লেখযোগ্য টেলিভিশন নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘এই সব দিনরাত্রি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নিমফুল’, ‘নক্ষত্রের রাত’ ও ‘আজ রবিবার’। মঞ্চনাটকের মধ্যে রয়েছে ‘নূরলদীনের সারা জীবন’ ও ‘গ্যালিলিও’।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আসাদুজ্জামান নূর বর্তমানে নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
টানা চার মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত আসাদুজ্জামান নূর এর আগে সংস্কৃতি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। রয়েছেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে।
মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ও সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আহ্বায়কও আসাদুজ্জামান নূর।