নীলফামারীর আবু নাজেম মোহাম্মদ আলী এবং আমেনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে আসাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী। অভিনয় করতে এসে হয়ে যান আসাদুজ্জামান নূর।

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি। এরপর ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ; তারপর চাকরি এবং সেখান থেকে নাটকে অভিনয় শুরু।

অভিনয় করেছেন এক শরও বেশি টিভি নাটকে। রেডিওতে প্রচারিত তার নাটকের সংখ্যা ৫০-এরও বেশি। পরিচালক হিসেবে ৫০-এরও বেশি বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেছেন নূর।

তাকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সারা যাকের বলেছিলেন, ‘আমার অভিনীত প্রথম যে নাটকটি অনেক জনপ্রিয় হলো, তার নাম ছিল সৎ মানুষের খোঁজে। সেই নাটকে আসাদুজ্জামান নূর আমার সহ-অভিনেতা ছিলেন।

‘নাটক, মঞ্চ পাশাপাশি নূর ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটা অফিসে। আমরা একসঙ্গে অফিস করেছি, অ্যাডভার্টাইজিং করেছি। এ ছাড়া, আমার যে অভিজ্ঞতা সেটা হচ্ছে অয়োময় নাটকে। সেখানে আমি তার দ্বিতীয় স্ত্রী এলাচি বেগমের চরিত্রে অভিনয় করি।’

‘আমার মনে হয়েছে অয়োময়ে নূর ভাই যে অভিনয় করেছিলেন সেটি খুবই উঁচু মানের। যদিও বাকের ভাই হিসেবে সবাই তাকে বেশি চেনে, জানে ও ডাকে’,-যোগ করেন সারা।

বাকের ভাই চরিত্রটি কোথাও কেউ নেই নাটকের একটি চরিত্র, যার লেখক নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। নাটকের আরেকটি কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো মোনা । সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুবর্ণা মুস্তাফা।

তিনি স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘কোথাও কেউ নেই কিন্তু একটা প্রিন্টেড উপন্যাস। কিন্তু বাকের ভাই চরিত্রটির প্রতি এমন একটি মায়ার সৃষ্টি হয়ে গেল পর্দায়, এমন ভালোবাসা সৃষ্টি হয়ে গেল যে টেলিভিশনের দর্শক একটা ফিকশনকে একটা গল্পকে গল্পের জায়গা থেকে সরিয়ে নিজেদের জীবনে ঠাঁই দিয়ে দিল।’

অভিনয়ের পাশাপাশি নূর আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। দায়িত্ব পালন করেছেন ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে।

আসাদুজ্জামান নূরের দীর্ঘদিনের বন্ধু আলী যাকের। পেশাজীবনের পাশাপাশি মঞ্চের জীবনেও দুজন মিলে দারুণ এক জুটি। নূরলদীনের সারাজীবন নাটকটিতে একসঙ্গে অভিনয় করেন তারা।

জুটি ভেঙে গেছে। প্রয়াত হয়েছেন আলী যাকের। নূরলদীনের সারাজীবন নাটকে নূরের অভিনয় প্রসঙ্গে আলী যাকের বলেছিলেন, ‘আমি আর নূর যখন একসঙ্গে মঞ্চে দাঁড়াতাম নূরলদীনের সারাজীবন নাটকের জন্য, প্রথম দৃশ্য থেকেই আমাদের মধ্যে একটা কেমিস্ট্রি তৈরি হয়ে যেত।

‘কোনো দিন যদি এমন হয় যে আব্বাস (আসাদুজ্জামান নূর) অন্য কেউ বা নূরলদীন অন্য কেউ, তাহলে আমাদের সেই যূথবদ্ধ অভিনয় সম্ভব হবে না। এত অসাধারণ অভিনেতা নূর।’

আসাদুজ্জামান নূর এখনও কাজ করে চলেছেন ঠিক যেন তার অভিনয় করা জনপ্রিয় চরিত্র বাকের ভাইয়ের ‘লেস টক মোর ওয়ার্ক’ (কথা কম কাজ বেশি) সংলাপের মতোই।

২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তিনি সংস্কৃতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আসাদুজ্জামান নূর ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর নীলফামারীতে জন্মগ্রহণ করেন। আজ গুণী এ মানুষটির ৭৫তম জন্মদিন।