একজন অভিনয়শিল্পীর স্পিরিচুয়ালি এবং মেন্টালি হেলদি অ্যান্ড কানেকটেড (আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তি এবং সত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত) থাকা খুবই আবশ্যক। তা না হলে সেই শিল্পী তার স্বয়ং সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। আপনি আপনার দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে দেশের জন্য কেমন উদাহরণ নির্ধারণ করবেন, তার চয়েস অবশ্যই আপনার হাতে, কিন্তু সবকিছুর আগে আপনার প্রয়োজন আপনাকে আপনার সত্তার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা।
আমাদের সবার জীবনে কোনো না কোনোভাবে নানান রকমের ঘটনা ঘটে যায়, যা হয়ত আমরা ডিজার্ভ (প্রাপ্য) করি না, যে ঘটনার বা পরিস্থিতির ওপর হয়ত আমাদের কোনো হাত থাকে না; নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আমরা হয়ে যাই ভিকটিম। সেইসব ঘটনা বা দুর্ঘটনা দিন দিন আমাদের নিজেদের সত্তা থেকে আস্তে আস্তে বিছিন্ন করে দেয়, আমরা টের পাই না।
সবকিছুই স্বাভাবিক চলছে, এমন হিসাব করে জীবন চালাতে থাকি। আপনার জীবনেও একটার পর একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, আর আপনি আপনার স্পিরিচুয়াল পাওয়ার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থেকেছেন। আপনার সেই সত্তা, যেই সত্তা আপনার আত্মশক্তি বহন করে। কেউ সেটি তখনও কানেক্ট করার জন্য আপনাকে সাহায্য করেনি, এখনও নয় এবং হয়ত কখনও করবে না। সুতরাং আপনার সময় আপনার ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করছে, আপনি নিজেকে হিল (আরোগ্য) করে অন্য উচ্চতায় পৌঁছাবেন নাকি মনের অজান্তেই অন্যদের আদর/ভালোবাসা/যত্ন/মনোযোগ পেতে অন্যদের অ্যাপ্রুভালের (সমর্থন) জন্য পথ চেয়ে বসে থাকবেন?
আমরা ভুলে যাই, আমরা যখন নিজের শক্তি (আত্মশক্তি) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই, তখন আমরা আরেকজনের অ্যাপ্রুভাল খুঁজি, ক্ষণস্থায়ী সুখী হবার আশায়, যেখানে আমাদের সারাক্ষণই সুখী থাকার কথা।
পরিচিত/অপরিচিত যে কোনো মানুষকে আমি যখন দেখি তার আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নেয় বিভিন্ন মাধ্যমে কিংবা কোনো অনুষ্ঠান উদ্যাপন করে, সেটি আমার দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। আমি তাদের আনন্দে আনন্দিত হই, যেন তাদের আনন্দের অনুভূতিগুলো অনুভব করতে পারি। আমি তাদের চোখে আনন্দগুলো যেন স্পর্শ করতে পারি।
নেট দুনিয়াতে যেই অভিনেত্রীর জন্মদিনের উদ্যাপনের ভিডিও/ছবি নানান ধরনের সাদাকালো ক্যাপশনের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমি আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করেছি। যার জন্মদিন তার চোখে, আমি যেটা দেখেছি, সেটা হলো ওনার প্রয়োজন স্পিরিচুয়াল অ্যান্ড মেন্টাল হিলিং (আত্মিক ও মানসিক নিরাময়)। ওনার জীবনে অতীতে এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ওনার ন্যাচারাল (স্বাভাবিক) অবস্থান থেকে বিচ্যুত করে রেখেছে। তাই তিনি সব কাজ করছেন ঠিকই, কিন্তু যেহেতু তিনি বিচ্ছিন্ন, তাই ওনার কিছু কাজ প্রতিফলিত হচ্ছে বিক্ষিপ্তরূপে।
দুর্ভাগ্য এই যে, পুরো দেশ ওনাকে নিয়ে কথা বললেও ওনাকে হিল (নিরাময়) করার জন্য কোনো মানুষ নেই ওনার পাশে, যে ওনাকে ধরিয়ে দিয়ে মেন্টালি অ্যান্ড স্পিরিচুয়ালি হিল করতে সাহায্য করে ওনাকে ওনার ন্যাচারাল স্টেইটে (স্বাভাবিক অবস্থা) নিয়ে আসবে। হয়ত তিনি মনে করছেন ওনার কাউকে দরকার নেই। ওনার আসলে কারও দরকারও নেই, যদি তিনি নিজেকে ধরতে পারেন এবং হিল করার পদক্ষেপ নিজেই নেন।
আমরা ভুলে যাই, কাগজে-কলমের সার্টিফিকেটের শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে মনের শিক্ষার দিকে রিচ হওয়ার ইচ্ছা থাকা বেশি জরুরি। একজন অভিনেত্রীর তার অভিনয় দক্ষতা যেমনই হোক না কেন, ইনডোর/আউটডোর সেটে এত এত মানুষের ভিড়ে, তার চরিত্রের প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে, স্ক্রিপ্টের লাইন মনে রেখে, পরিচালকের নির্দেশনা মনে রেখে ক্যামেরার সামনে ডেলিভারি দেয়া সহজ বিষয় নয়।
এটা প্রতিভার বিষয়, যা দিন দিন চর্চার ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শার্প অ্যান্ড শাইনি (তীক্ষ্ণ ও উজ্জ্বল) হয়, কিন্তু আমরা আমাদের সেই প্রতিভাকে ছোট করে দেখতে থাকি; আপন শক্তির ওপর বিশ্বাস হারাতে থাকি যখন আমরা আমাদের নিজ সত্তার সাথে বিচ্ছিন্ন হতে থাকি। প্রতিক্রিয়াশীল না হয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, প্রশ্ন করুন। আপনার জগতে অনেক মানুষ আসবে আবার চলে যাবে।
কিন্তু আপনার আপন সত্তার মাঝে বসবাস চিরকাল আপনাকেই করতে হবে, যার সাথে হবে না কোনো প্রতিযোগিতা কিংবা প্রতিশোধের খেলা। সুতরাং তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন আগে নিশ্চিত করুন, তাকে রিচ (সমৃদ্ধ) করুন। পরিস্থিতি আপনা আপনি বদলে যাবে।
লেখক: সাবেক মিস আয়ারল্যান্ড ও মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল