তার নামের সঙ্গেই চমক শব্দটি জুড়ে আছে। যে কাজগুলো করছেন, সে কাজেও চমক দিচ্ছেন তিনি। তার অভিনয়ে চমকে যাচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে মহানগর ওয়েব সিরিজে অল্প সময়েই পর্দায় উপস্থিতিতেই দাপটের সঙ্গে মনোযোগ কেড়েছেন এই অভিনেত্রী।
তিনি রুকাইয়া জাহান চমক। টিভি নাটক, ওয়েব কনটেন্টে তুমুল ব্যস্ত এই অভিনেত্রী। এক বছরও হয়নি অভিনয় শুরু করেছেন। এরই মধ্যে নামকরা অনেক পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করা হয়ে গেছে তার। সম্প্রতি অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিমের বিপরীতে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই শিক্ষার্থী আপাতত অভিনয়টাই চালিয়ে যেতে চান। কারণ এটি তার আত্মার খোরাক হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে পরিবার চায় চিকিৎসক হিসেবে নিয়মিত হোন চমক।
এমন সব বিষয় নিয়ে নিউজবাংলা কথা বলেছে রুকাইয়া জাহান চমকের সঙ্গে।
- চমক, আপনার পরিবার ও বেড়ে ওঠা নিয়ে একটু জানতে চাই।
আমি সে রকম একটি পরিবার থেকে এসেছি, যেখানে লেখাপড়াকে খুব গুরুত্ব দেয়া হয়। ক্লাসে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হতে হবে এমন ফ্যামিলি আমার। তো সেভাবেই বেড়ে ওঠা।
ক্লাসে আমি প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়র মধ্যেই থাকতাম সব সময়। এরপর সরকারি মেডিক্যালে ভর্তি হওয়া (কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ, মানিকগঞ্জ)।
আমার বাবা ছিলেন বন বিভাগের সরকারি কর্মকর্তা। লেখাপড়ার বিষয়টাই আমার ফ্যামিলিতে বেশি ছিল। তারপরও কিছু এক্সট্রা কারিকুলাম তো ছিলই। আমি নৃত্য শিখেছি বুলবুল ললিতকলা একাডেমি (বাফা) থেকে। মেডিক্যালে আমি নৃত্যের জন্য অনেক পুরস্কার পেয়েছি। আবৃত্তি শিখেছিলাম। গানও করতাম টুকটাক। স্কুল-কলেজের কালচারাল অনুষ্ঠানগুলোতে আমি সব সময় চার-পাঁচটা করে পুরস্কার পেতাম।
অভিনয়ে একটা ঝোঁক ছিলই। নায়িকা হব- এমন ভাবতাম। এখন একটু চেঞ্জ হয়েছে ভাবনাটা। এখন কোনো কাজ দেখলে মনে হয় কীভাবে নিজেকে অভিনেত্রী হিসেবে গড়ে তোলা যায়। এটাই এখন আমার মেইন কনসার্ন।
- মেডিক্যালে পড়ার ইচ্ছাটা কার? আপনার না পরিবারের?
পরিবারের একটা চাওয়া ছিল। লেখাপড়া ভালো করতে হবে, ও রকম একটা প্রেশার ছিল ফ্যামিলি থেকে। প্রেশার না থাকলে হয়তো আমি ফিল্ম মেকিং বা সিনেমাটোগ্রাফি বা লিটারেচার নিয়ে লেখাপড়া করতাম।
- আপনি কী এটি বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন যে, আপনি লেখাপড়ার কোন স্টেজে আছেন?
আমার ইন্টার্নশিপ বাকি এখনও। কী বলা যায়, আমি শেষ পর্যায়ে আছি এখন।
- লেখাপড়া শেষ করেছেন বলেই কি এখন অভিনয়টা করতে পারছেন? আপনার শুরুটা জানতে চাই?
অবশ্যই লেখাপড়াটা শেষ করেছি। এখন নিচের যেটা ইচ্ছা সেটা করছি। আর আমার শুরুটা লেখালেখির মাধ্যমে। নাম বলব না, আমি একজনকে স্ক্রিপ্ট দিতে গিয়েছিলাম। যাকে স্ক্রিপ্টটা দিতে গিয়েছিলাম তিনি বললেন, কেন তুমি এটাতে অভিনয় করছ না?
আমি বলেছিলাম যে, না আমি আমার স্ক্রিপ্টে কাজ করব না। অন্য কারো ভালো গল্পে যদি আমাকে কাস্ট করা হয়, তাহলে আমি হয়তো কাজ করতে পারি এবং পরে আমি অভিনয় শুরু করি।
ইন্ডাস্ট্রিতে আমার বয়স আট থেকে নয় মাস। খুবই অল্প সময় হলো কাজ শুরু করেছি। খুবই ভালো লাগছে আমার। এরই মধ্যে আমি ৫০+ নাটকে অভিনয় করেছি কেন্দ্রীয় চরিত্রের অভিনেত্রী হিসেবে। ২০টার বেশি টিভি কমার্শিয়াল (টিভিসি) করে ফেলেছি। ওয়েব সিরিজ করা হয়ে গেছে, হাউস নম্বর ৯৬ নামের সিরিয়াল করা হয়েছে।
শিগগিরই মিজানুর রহমান আরিয়ানের পরিচালনায় একটি সিরিয়াল শুরু করতে যাচ্ছি। যার নাম শুভ রাত্রি। সেখানে নাম-ভূমিকায় কাজ করছি আমি।
অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক। ছবি: সংগৃহীত- মহানগর ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছেন। দারুণভাবে সবার নজর কেড়েছেন আপনি।
আমি খুবই লাকি যে আমার অভিনীত প্রথম ওয়েব সিরিজটি এত জনপ্রিয় হয়েছে। পর্দায় আমার উপস্থিতি কম ছিল, তবু সবাই আমাকে নোটিশ করেছেন এবং সবাই আমাকে অনেক অনেক শুভকামনা জানিয়েছেন, ভালো বলেছেন।
অন্য যারা অভিনয়শিল্পী ছিলেন, তারা প্রত্যেকেই অনেক গুণী। তার মধ্যে আমাকেও খেয়াল করেছেন দর্শকরা। আমার কাছে এটা একটা অ্যাচিভমেন্ট।
- বাংলাদেশের কনটেন্ট অনেকেই দেখেন না বলে শোনা যায়। এখানে কী ধরনের কাজ হয় তাও অনেকে জানেন না। আপনার চারপাশের মানুষজন কি এই প্রকৃতির?
আমি নিজেও কিন্তু আগে বাংলা কনটেন্ট তেমন দেখতাম না। নেটফ্লিক্সের এই যুগে বাংলা অ্যাপগুলো কতটুকু জনপ্রিয় হতে পারবে তা নিয়ে একটা প্রশ্ন ছিল।
এখন আমার মনে হয়, আমরা অনেক ভালো কনটেন্ট উপহার দিতে পারছি। যেমন, হইচই একটা বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। সেখানে অন্যতম সফল প্রজেক্ট হলো মহানগর। আমার মনে হয় এটা গর্বের বিষয়। এখন বাংলা কনটেন্ট দেখছে সবাই।
আমার মনে হয় এখন আমাদের স্বর্ণযুগ এসেছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আসার পর বাংলা কনটেন্টের স্বর্ণযুগ এখন। দর্শকদের উচিত এই কনটেন্টগুলো দেশে শিল্পী-নির্মাতাদের উৎসাহ দেয়া।
- আপনার পরিবার ও বন্ধুরা কি আপনার মতোই মনে করছেন?
না না, আমার পরিবার এখনও মনে করছেন ‘তুমি ডাক্তারি করো’। তাদের মাইন্ডসেট হচ্ছে যে, ভালো করে লেখাপড়া করে সুন্দর কিছু করা।
মানুষের হয়তো এমন মনে হতে পারে যে বাংলাদেশের মিডিয়াতে কেমন কাজ হয়, কী হয়। সে ক্ষেত্রে আমি বলব যে, মিডিয়াতে এখন অনেক ভালো কাজ হচ্ছে, কোয়ালিটি ওয়ার্ক হচ্ছে এবং আমরা তো সুন্দর-সুস্থভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমার তো কোনো সমস্যা ফেস করতে হচ্ছে না।
- মেডিক্যালের লেখাপড়াও অনেক কষ্টের শুনেছি, সেটি শেষ করে অভিনয় করছেন, সেটিও অনেক কষ্টের। মেনে নিচ্ছেন কীভাবে?
ঠিক বলেছেন। তবে কাজ শেষে আমার ফেসবুক পেজে ঢুকে যখন দেখি যে পোস্ট করা ছবির নিচে সবাই এত এত ভালোবাসা জানিয়েছে, ভালো লাগার কথা লিখেছে, তখন কষ্ট অনেকটা কমে যায়। কোথাও গেলে যখন মানুষ বলে যে আপনার অভিনয় ভালো লাগে, তখন মনে হয় পরিশ্রমটা ঠিকমতো করছি। কষ্টটা তখন জাস্টিফাই হয়ে যায়।
- আপনি কখনও চিকিৎসা পেশায় যাবেন কি না?
অবশ্যই করব, কিন্তু এখন অভিনয়টা আমার আত্মার খোরক হয়ে গেছে। সোল ফুড যে বিষয়টি, সেটা সংগ্রহ করতে আমার কাজটি করে যেতেই হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর আমি ডাক্তারি শুরু করব। এখন আমি অভিনয়টাই নিয়মিত করতে চাইছি।
অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক। ছবি: সংগৃহীত- বিজ্ঞাপন, নাটক, ওটিটিতে কাজ করলেন। এখন কোন ধরনের কাজ আপনাকে বেশি টানছে।
যদি নির্মাতারা আমাকে নিয়ে সেভাবে ভাবেন, তাহলে অবশ্যই আমি কাজ করব। এমন চরিত্র যা আমি কখনও চিন্তাই করতে পারিনি, সেই চরিত্র চ্যালেঞ্জ নিয়ে করার চেষ্টা আমার থাকবে। নিজেকে ভেঙে যে কাজগুলো করতে হবে, সেগুলো করতে চাই। অফট্র্যাক কাজ করতে আমি বেশি পছন্দ করব।
- বলছিলেন খুব অল্প সময় ধরে কাজ করছেন আপনি। এই সময়ের মধ্যে যতটুকু দেখলেন, তাতে মিডিয়ার পরিবেশ কেমন লাগছে আপনার?
এটা এখন আমার আরেকটা পরিবার হয়ে গেছে। আমি আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে যতটা না সময় কাটাই, এখানকার মানুষদের সঙ্গে তার চেয়ে বেশি সময় কাটাতে হয়।
- কাজ করতে করতে কখনও মনে হয়, কোনো একটা বিষয় যেটা পরিবর্তন হলে ভালো হতো।
হ্যাঁ, কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো উচিত। আমার মনে হয় শিল্পীদের কাজের সময়টা কমানো দরকার। আমরা কাজ করি অনেক বেশি সময়। সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত। এত বেশি সময় যে ইফিসিয়েন্ট ওয়ার্ক তখন দেয়া যায় না আসলে। এটা মাথায় রেখে কাজ করলে মনে হয় আরও ভালো কাজ করা সম্ভব।
আর ভালো কাজ করার জন্য প্রতিদিন শেখার চেষ্টা করছি। আমি শিখতে পছন্দ করি। আমি সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে বই পড়ার চেষ্টা করি। ফিল্ম মেকিং নিয়ে আমার আগ্রহ আছে। ইউটিউবে অ্যাক্টিং স্কুলের ভিডিও পাওয়া যায়। সেগুলো দেখে নিজেকে একটু একটু করে গ্রুম করার চেষ্টা করছি।
একজন অভিনয়শিল্পী জীবন থেকে বেশি শেখে। অভিনয়ের কোনো ব্যাকরণ নেই। অভিনয় হতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত, অভিনয় মানেই প্রতিক্রিয়া এবং অভিনয় না করাটাই অভিনয়। আমি শিখছি এবং মজা করে শিখছি।