ষোড়শ শতকের ময়মনসিংহ গীতিকার সমকালীন পটে বয়ান করা চলচ্চিত্র চন্দ্রাবতী কথা। বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারীবাদী কবি চন্দ্রাবতীকে উৎসর্গ করে এটি করেছেন এন রাশেদ চৌধুরী।
১৫ অক্টোবর মুক্তি পেতে যাচ্ছে সিনেমাটি। সিনেমার কাহিনি মনসা ভাষাণের (মনসা মঙ্গল) প্রখ্যাত কবি দ্বীজবংশী দাসের কন্যা চন্দ্রাবতীকে ঘিরে।
পার্শ্ববর্তী গ্রামের আরেক কবি জয়ানন্দের প্রতারণার শিকার হন চন্দ্রাবতী। দুঃখ ভারাতুর চন্দ্রাবতী এই ঘটনায় বিমর্ষ হয়ে পড়েন ও কঠিন ব্রত গ্রহণ করে, বাকিজীবন অবিবাহিত থেকে শিবমন্দিরেই আরাধনা করে কাটাবে। বাবার পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী, নিজভাষায় রামায়ণ রচনায় নিজেকে আত্মনিয়োজিত করে চন্দ্রাবতী।
বাবার নির্মিত শিবমন্দিরে শুরু হয় চন্দ্রাবতীর নতুন, একাকী, কঠিনব্রত সাধনার এক জীবন। সেখানে বসেই তিনি ভাবতে থাকেন প্রচলিত রামায়ণ সমূহে সীতার প্রতি অবহেলা আর বৈষম্যের রীতি।
রাবণের হাতে বন্দি সীতাকে উদ্ধারে রামের বীরত্ব গাথাকে ঘিরেই যেন এতকাল আবর্তিত হয়েছে রামায়ণের পুরুষতান্ত্রিক আখ্যান। সেখানে দেখা যায়, অপহৃত সীতাকে রথে ফিরিয়ে আনার পর গ্রামের অধিবাসীদের লোক-লজ্জার ভয়ে রাম নিজেই সীতাকে পাঠায় বনবাসে!
এসব ভাবনা ক্রমশ দানা বাঁধতে থাকে চন্দ্রাবতীর মনে। নিয়ত ওকে দেখতে আসা, ছেলেবেলার সই বিশাখা আর প্রিয় বাবার কাছে তাই সুযোগ পেলেই ভাগাভাগি করে, রামায়ণে সীতার পরিণতিকে ঘিরে মনের সব দুঃখ-বেদন।
এমন আরও অনেক ঘটনা সম্মিলনে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। এতে চন্দ্রবতী চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিলরুবা দোয়েল। আরও আছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ, নওশাবা, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, গাজী রাকায়েত, আরমান পারভেজ মুরাদসহ অনেকে।
সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গলবার। সিনেমাটি নিয়ে সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘বাঙলার ঐতিহ্যবাহী পালাগাণের কাঠামো, গল্প কথনরীতি, নান্দনিক অভিলাষ চন্দ্ৰাবতী কথা সিনেমায় সুনিপুণ কুশলতায় এন. রাশেদ চৌধুরীর চলচ্চিত্র-দৃশ্যকাব্যে রূপান্তরিত। এই প্রথম হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী পালাগানের অনুপ্রেরণায় একটি নতুন আঙ্গিকের চলচ্চিত্র আমাদের চলচ্চিত্রের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিল।’