বাতব্যথায় আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে রিউমাটোলজি বিভাগ চালুর দাবি করেছেন চিকিৎসকরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্বিবদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মিলনায়তনে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারে রিউমাটোলজি বিশেষজ্ঞরা এ দাবি করেন।
বিএসএমএমইউর রিউমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ রোগের চিকিৎসকরা বলেন, দেশের একটি বড় অংশ বাতব্যথায় ভুগলেও সেই তুলনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এতে অনেকেই ভুল চিকিৎসার স্বীকার হচ্ছেন।
এছাড়া বয়সের সাথে সাথে বাতের ব্যথার প্রকোপ ও ব্যথা বাড়তে থাকে। শতাধিক ধরনের আর্থ্রাইটিস রোগে বিভিন্ন বয়সী মানুষ ভোগেন। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষরা বেশি এ সমস্যায় পড়ছেন। যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ার কারণে আক্রান্তদের অনেকেই অসহায় ও অক্ষমতার জীবন যাপন করেন। তাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সঠিকভাবে রোগটি শনাক্ত করা।
বাতের অন্যান্য সমস্যার মধ্যে হাঁটুব্যথা বাত, কোমরব্যথা ও গিরাব্যথায় মানুষ বেশি মানুষ ভোগেন বলে জানান চিকিৎসকরা।
সভায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকদের মেধা আছে। এখন ইচ্ছা শক্তি বাড়াতে হবে। বিশেষ করে ডেডিকেশন বাড়াতে হবে। তরুণ চিকিৎসকদের অনুরোধ করবো আপনাদের শিখতে হবে। আপনার শেখা আপনাকেই শিখতে হবে। ভালো শেখার প্রশিক্ষণ নিতে হবে৷ সেক্ষেত্রে আপনার বস হবে মূল প্রশিক্ষক।’
তিনি বলেন, ‘ভালো ডাক্তার হলে দেশ বিদেশে কদর আছে৷ ফাঁকি দিলে বুঝতে হবে নিজেকে ফাঁকি দিচ্ছেন। কারণ রোগীরা বুদ্ধিমান। তারা আপনাকে ধরে ফেলবে৷’
চিকিৎসকদের মানসম্মত প্রশিক্ষণের অভাববোধ করছেন জানিয়ে কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা আসলে মানসম্মত ট্রেনিংয়ের জায়গায় আটকে আছি। এজন্য ছাত্রদের চেয়ে ফ্যাকাল্টিদের দোষ বেশি। কারণ তারা ফাঁকি না দিলে ছাত্ররা ফাঁকি দিতে পারবে না।’
চিকিৎসকরা যে যে বিভাগেই কাজ করুক তাকে ইন্টারনাল মেডিসিনের ওপর দক্ষতা অর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন এই প্রবীণ চিকিৎসক।
সেমিনারে বাত রোগের চিকিৎসায় সাধারণ ভুল নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. নাহিদুজ্জামান সাজ্জাদ।
বাতের কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে সুচিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. সরফুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, সবাইকে সচেতন হতে হবে৷ শুরুতেই ভালো চিকিৎসা নিতে হবে৷ কারণ ব্যথার কষ্টে থাকা মানুষ কোনো কাজ করতে পারে না। ফলে এটি দেশের অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর।
বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় জোর দিচ্ছে এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রিউমাটোলজি বিভাগ নানা সংকটের মধ্যে আছে। এরপরও বিভাগের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করতে সবসময় কাজ করা হচ্ছে। আমরা গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াচ্ছি। এই বিভাগের জন্য বরাদ্দ আরও বাড়ানোর ব্যবস্থা করবো।’
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে বাতব্যথার ওপর শিক্ষা কার্যক্রম অপ্রতুল। বর্তমানে বাতব্যথা রোগের চিকিৎসকের (রিউমাটোলজিস্ট) সংখ্যা দেশের জনসংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত কম।
তবে ২০২০ সালে দেশের পুরাতন আটটি মেডিক্যাল কলেজে ও হাসপাতালে ৩৩টি রিউমাটোলজিস্টের পদ সৃষ্টি হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে শুধু সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া আর কোথাও এই বিভাগ চালু নেই।
অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও বিএসএমএমইউর রিউমাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএসএমএমইউ এখন পর্যন্ত ৬০ জন বিশেষজ্ঞ রিউমাটোলজিস্ট তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। আরও ৩০ জন রিউমাটোলজিস্ট সেবা দিয়ে আসছেন।
‘তবে বাতের রোগীদের দোরগোড়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা পৌঁছানো সময়ের দাবি। এজন্য পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ যেমন দরকার, তেমনি পাস করা রিউমাটোলজিস্টদের যথাযথ পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।’
রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রহিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মেডিসিন ও রিউমাটোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়াসহ অনেকে।
বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বাত রোগের চিকিৎসায় সাধারণ ভুল নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. নাহিদুজ্জামান সাজ্জাদ ও জয়েন্টে ইনজেকশন ব্যবহারের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।