ড. ইনামুল হক অভিনয় জগৎ, শিক্ষা জগৎ সর্বত্র মানুষকে জড়িয়ে ধরে কথা বলতে শিখিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
নাট্যব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. ইনামুল হককে শেষ শ্রদ্ধা জানানো শেষে তিনি বলেন, ‘কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এ সময়ে আমরা হাসতে ভুলে গেছি। ইনামুল হক মানুষকে সব সময় আনন্দ দিয়েছেন। হাসতে শিখিয়েছেন। তার প্রস্থানে দুঃখের মধ্যে সামান্যটুকু আনন্দ আর কে দেবে?’
দেশবরেণ্য এ অভিনেতা সোমবার দুপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ইনামুল হককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তার মরদেহ আনা হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ফুল ও অশ্রু দিয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
শ্রদ্ধা জানানো শেষে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘অন্তর থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। অনেক দিন তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
শ্রদ্ধা জানানো শেষে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
ইনামুল হককে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানীসহ কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্য বলেন, ‘ইনামুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের একজন গর্বিত শিক্ষার্থী ছিলেন। এরপর বেশ কিছুদিন তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উজ্জীবনে তিনি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। তার মৃত্যুতে জাতি একজন বিদগ্ধ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে হারাল। তার অসাম্প্রদায়িক ও উদার চিন্তন দৃষ্টিভঙ্গি এবং মূল্যবোধ নতুন প্রজন্মকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করবে সেই প্রত্যাশা রাখছি।’
নাট্য অভিনেতা ও ড. ইনামুল হকের জামাতা সাজু খাদেম বলেন, ‘বর্তমানে নানা সুবিধার কারণে মানুষ বাচ্চা নিতে আমেরিকা, কানাডায় চলে যান। কিন্তু আমার শ্বশুর যখন পিএইচডি করতে ম্যানচেস্টারে যান, তখন তিনি বিবাহিত ছিলেন। চাইলে সেখানে সন্তান নিতে পারতেন।
‘কিন্তু তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন তার সন্তান হবে স্বাধীন বাংলাদেশে। এ রকম একজন দেশপ্রেমিককে আমরা হারালাম। এটি আমাদের দেশের বড় ক্ষতি। সবাই ওনার জন্য দোয়া করবেন।’
এর আগে ইনামুল হকের মরদেহে শ্রদ্ধা জানান তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে অসীম কুমার উকিল ও সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপসসহ অনেকে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার-টেলিভশন শিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, টেলিভিশন নাট্যকার সংস্থাসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধার প্রতিক্রিয়ায় ইনামুল হকের মেয়ে হৃদি হক সাংবাদিকদের বলেন, বাবার ভাবনায়, চিন্তা-চেতনায় ছিল দেশ ও দেশের মানুষ। তিনি আমাদের সকলের নাট্যগুরু ও নাট্যপ্রাণ মানুষ। সারা জীবন নাটক, থিয়েটার, শিল্পচর্চা, সেই গণ-আন্দোলনের সময় থেকে শেষ দিন পর্যন্ত বাবা অনুবাদের কাজ করে গেছেন। যেই ভালোবাসা তিনি মানুষকে দিয়েছেন, মানুষ তাকে সে ভালোবাসাই দিচ্ছে।’