বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আবদুরাজাক গুরনাহর ‘প্যারাডাইস’: একটি পাঠপ্রতিক্রিয়া

  •  আনিতা ম্যাসন   
  • ৮ অক্টোবর, ২০২১ ১৯:১২

পৃথিবীর সমস্ত উদ্বাস্তুদের হতভাগ্য, উপনিবেশবাদ ও সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বৈষম্য নিয়ে তিনি কলম ধরেছেন বার বার। এর প্রমাণ গুরনাহর বহুল পঠিত বই ‘প্যারাডাইস’-এ পাওয়া যায়।

চলতি বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তানজানিয়ার বংশোদ্ভূত ঔপন্যাসিক আবদুরাজাক গুরনাহ। প্রতিবছর এ সময়টির জন্য বলা যায় সবাই অপেক্ষা করে থাকে; বিশেষ করে সাহিত্যের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন লোকজন তো বটেই। তবে গুরনাহর নোবেল পাওয়াটা এক রকম অপ্রত্যাশিতই ধরা যায়। কারণ তার নামটি, সচরাচর যা হয়- পুরস্কার ঘোষণার আগে হওয়া জল্পনা-কল্পনাতে একেবারেই শোনা যায়নি। তিনি মূলত, উপনিবেশবাদ আর উদ্বাস্তুদের নিয়ে লেখালেখি করার জন্যই বিশেষভাবে পরিচিত।

তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা তানজানিয়ার জানজিবার আইল্যান্ডে। যদিও পরবর্তীকালে ১৯৬০-এর দিকে উদ্বাস্তু হয়ে ইংল্যান্ডে চলে যান। প্রসঙ্গত বলা যায়, মূলত একারণেই পৃথিবীর সমস্ত উদ্বাস্তুদের হতভাগ্য, উপনিবেশবাদ ও সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বৈষম্য নিয়ে তিনি কলম ধরেছেন বার বার। এর প্রমাণ গুরনাহর বহুল পঠিত বই ‘প্যারাডাইস’-এ পাওয়া যায়।

‘বইটির বক্তব্য মূলত এ শতাব্দির প্রথমদিকে, পূর্ব আফ্রিকার এক মুসলিম বালককে ঘিরে। যে নিজস্ব এক জগতে বাস করে আর সবসময় নানারকম অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে। একপর্যায়ে তাকে তার কথিত এক চাচার কাছে কাজ করতে পাঠানো হয়, যিনি সমুদ্র উপকূলের একজন নামজাদা বণিক। এখানে দুঃখের বিষয় এই যে, সেখানে গিয়ে প্রথমেই ছেলেটি যা জানতে পারে তা হলো- ওই বণিকটি আসলে তার চাচা নন। গল্পের ছেলেটির নাম ইউসুফ, যে কাজ করতে গিয়ে জানতে পারে সে আসলে দাস ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।

তার বাবা পাহাড়সমান ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিক্রি করে দেয় তাকে। ইউসুফের জন্য এটা ছিল প্রথম শিক্ষা যা নির্মমতায় ভরা। যে পৃথিবীটা সবসময় মিথ্যা সৌন্দর্য, করুণা আর প্রেমের আড়ালে তার প্রচণ্ড কুৎসিত রূপটি নিয়ে ঘাঁপটি মেরে লুকিয়ে থাকে।

ইউসুফকে সমুদ্রপথে পাচার করে দেয়া হয় ইউরোপে। সেখানে তাকে কিনে নেয়ার পর প্রথমে তেমন কোনো কাজ দেয়া না হলেও সে নিজে থেকেই তার মালিকের বাগানে কাজ করতে থাকে এবং বাগানটির প্রতি ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। বাগানটি বাহির থেকে দেখা যায় না, এমন একটি উঁচু দেয়ালের আড়ালে সব সময় চারটি ফোয়ারার পানি শুষে বেঁচে থাকে। ইউসুফের কাছে দেয়ালঘেরা এই বাগান এবং এর বাইরের সেই মহাপৃথিবী উভয়ই সমানভাবে রহস্যময়।

গুরনাহ তার এই বইয়ে যে বক্তব্য রাখতে চেয়েছেন তার সারমর্ম হলো- পৃথিবীটা ঝলমলে আর উজ্জ্বল হলেও আদতে নানারকম ধর্মের হাতের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত পুতুল; এর বায়ুমণ্ডলের নিচে- প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে থাকে বর্বরতা আর এগুলোতে বাস করে পৌত্তলিকেরা।

তিনি বলতে চান, তার পরিচিত পৃথিবীর নিচে কী লুকায়িত আছে আমরা সেসব গল্প অনেক শুনেছি। যেমন, বরফের সমুদ্র, ইয়াজুজ- মাজুজের তৈরি প্রকাণ্ড দেয়াল, আগুনের ফটক-সংবলিত এক পার্থিব স্বর্গ ইত্যাদি। তবে এসব প্রাচুর্যের মাঝে, এই অসাধারণ আধা বাস্তব আর আধা কাল্পনিক দুনিয়ার টানে সময় সময় হিংস্র আর বুভুক্ষু এক ধরনের মহাজগতিক প্রাণী আসে। এদেরকে দেখলে মনে হয়, প্রায় সবকিছুর ওপরেই এদের দাবি আছে, সবকিছুর মালিকানা চায় এবং এদেরকে বুঝে ওঠা অসাধ্য। এই প্রাণীগুলোর ডাকনাম ‘ইউরোপীয়’।

১৭ বছর বয়সি ইউসুফ একসময় এই দেয়ালঘেরা দুনিয়ায় তার নিজস্ব এক কাল্পনিক রাজত্ব গড়ে তোলে। যে রাজ্যের সবচেয়ে বড় বণিক হলো সে এবং তার মালিকের সঙ্গে একটা বাণিজ্যের উদ্যোগ নেয়। তার ওই অনন্ত যাত্রা, সৃষ্ট হতাশা, তার ফলে জন্ম নেয়া চিরায়ত অসুখ, জংলি প্রাণী এবং অত্যাচারী স্থানীয় শাসকদেরকে বাধ্য হয়ে দেয়া খাজনা- এসবই তার জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে।

তবুও যেহেতু তার মতো মানুষের এটাই চূড়ান্ত ভাগ্য, যেহেতু তাদেরকে এখানে শেষমেশ পৌঁছাতেই হয়; এক্ষেত্রে এসমস্ত ঘটনার কোথাও না কোথাও একটা বিপর্যয় তো থেকেই যায়। সেটা আসলে কী?

ইউসুফ নামের স্বপ্নবাজ ছেলেটি এক ঝলকে দেখে নেয় সেই অগ্নিময় দেয়াল আর অশান্ত অনন্ত জলরাশি, যেগুলো আসলে স্বর্গকে ঘিরে থাকার কথা ছিল। এ পর্যায়ে এসে তার মনে হয় স্বর্গ হয়ত তার যত্নে টিকে থাকা সেই বাগানটিকেই বলা সংগত।

সে একসময় তার এই বাড়ি এবং বাগানকেন্দ্রিক জীবন যাপনের ভেতর হঠাৎই তার মালিক এবং এই বাড়ির এক অপ্রত্যাশিত গোপন রহস্য জেনে ফেলে। যা পরে তার জীবনের জন্য জন্য হুমকি মনে করে। তবে এ ব্যাপারটি ইউসুফের সামনে নতুন এক দিগন্তও উন্মোচন করে দেয়- যেখানে ওই আশ্চর্য গ্রন্থটি আমাদেরকে সূক্ষ্মভাবে এক উন্মত্ত সিদ্ধান্তের জন্য তৈরি করে থাকে।

এটা আবদুরাজাক গুরনাহর চার নম্বর উপন্যাস। এই উপন্যাস বহু স্তরের, উদ্দাম, আশ্চর্য এবং সৌন্দর্যে ভরা। এটি ভিন্ন উপাদান আর আঙ্গিকে ভরপুর। এখানে রূপকথা, লোককাহিনি, একটি ধর্মগ্রন্থের নান্দনিকতা মিলেমিশে পাঠকের চিন্তাকে বেদিশা করে তোলে। সঙ্গে যোগ দেয় এক বিশেষ সংস্কৃতির সূক্ষ্ম অথচ একটা প্রবল ফুঁৎকার।

এটা শুধু একটা নীরস আখ্যান বা বর্ণনাধর্মী কোনো গল্প নয় কিংবা নিছক উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদমঞ্চ তৈরির চেষ্টা ও তারচেয়েও অধিক কিছু। কিছু অনুচ্ছেদ পড়ে মনে হতে পারে জবরজং কিছু লেখক পেশ করার চেষ্টা করছেন, মনে হতে পারে লেখক লিখতে লিখতে হঠাৎ বধির হয়ে গেলেন কি না! তবে গল্পের বুনটে নিজেকে প্রবেশ করাতেই পাঠক আবিষ্কার করবেন যে, এই অংশগুলো বরং এক বিশদ নাটিকার যবনিকামাত্র যা অল্প কিছুক্ষণ পরই সরে যাবে এবং শুরু হবে কোনো মহানাটকের মঞ্চায়ন। যেখানে এই কাব্যময় বইটি আফ্রিকার গভীর এবং অনেকাংশেই অজানা এক জখম নিয়ে কথা বলতে চায়।’

ইংল্যান্ডের ইনডিপেন্ডেন্ট থেকে ভাষান্তর: আবির আবরাজ

এ বিভাগের আরো খবর