মুক্তি পেতে যাচ্ছে সিনেমা পদ্মাপুরাণ। প্রকাশ পেয়ে গেছে সিনেমার ট্রেলার। তার আগে মুক্তি পেয়েছে সিনেমার অ্যানিমেটেড টিজার। পরিচালকের দাবি- এমন টিজার দেশের সিনেমায় প্রথম।
টিজারে ৭ ধরনের অ্যানিমেটেড ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এই ছবিগুলো সিনেমাটির বৈশিষ্ট্য ও ধরন সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছে দর্শকদের।
সেই ছবিগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে নিউজবাংলা কথা বলেছে সিনেমাটির পরিচালক রাশিদ পলাশের সঙ্গে।
আলাপচারিতায় উঠে এসেছে সিনেমাটির নান্দনিক ও দর্শনগত দিক।
অ্যানিমেটেড টিজারের প্রথমেই আমরা দেখতে পাই একটি পাহাড়ি জায়গা। দৃশ্যটি এসে শেষ হয় একটি জলাশয়ে। কী বোঝাতে চেয়েছেন?
দৃশ্যটির মাধ্যমে আমরা পদ্মা নদীর উৎপত্তিস্থল বোঝাতে চেয়েছি। হিমালয় থেকে উৎপন্ন হওয়া নদী ভারতে গঙ্গা হয়ে এ দেশে এসে পদ্মা হয়েছে।
সিনেমাতেও কী এভাবে বর্ণনা শুরু হয়েছে?
না, সিনেমায় আমরা এত কিছু দেখাচ্ছি না। সিনেমার ঢংটা অন্যরকম।
এর পরের ছবিগুলোতে দেখছি, কিছু মানুষ নৌকা বানাচ্ছে, সেখানে ঘর-বাড়ি আছে, মাছ ধরছে, গান গাইছেন শিল্পীরা।
হ্যাঁ, এসব ছবির মাধ্যমে আমরা পদ্মা নদীকে কেন্দ্র করে মানুষের যে জীবন-যাপন, সংস্কৃতি সেটা বোঝাতে চেয়েছি। সিনেমাতে এ বিষয়টি বেশ ভালোভাবে উঠে আসবে।
অ্যানিমেটেড টিজারে বাঁধের মতো একটি জিনিস দেখতে পেলাম। সেখানে নৌকা পড়ে আছে মাটিতে, একজন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন।
বাঁধের কারণে আমাদের যে সমস্যা সেটা তো আমরা সবাই জানি। ক্ষরার সময় বাঁধ আটকানো থাকে। পানির অভাবে কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারে না। তাদের মাথায় হাত দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। আবার পরের ছবিতেই দেখবেন যে, প্লাবিত জনপদ। ভেলা নিয়ে কিছু মানুষ পানিতে ভাসছে। আমাদের দেশে যখন প্রাকৃতিকভাবে পানি চলে আসে, তখন বাঁধও খুলে দেয়া হয়। বন্যায় আমরা ভেসে যাই।
আর লাঠি দিয়ে মারামারি করার মতো দৃশ্যটি?
যখন চর জাগে, তখন চর দখল নিতে মারামারি হয়। রক্তপাত হয়, লাশও পড়ে। এমন ঘটনা অনেক আগে থেকেই ঘটে আসছে। সেটা বোঝাতেই শেষ ছবিটি।
সিনেমার ধারণাটি যত সহজে শুরু হয়েছিল, শেষে এসে সেটি আরও অনেক কঠিন হয়ে উঠল। এখানে সামাজিক, রাজনৈতিক বিষয়ের বড় একটি অংশ আছে বলে মনে হচ্ছে।
অবশ্যই। আমি সব সময় বিশ্বাস করি, সিনেমা শুধু বিনোদনের জন্য না। সিনেমা অনেক ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। সেই জায়গায় আমি নক করতে চেয়েছি। আর আমি কোনো মতামত দেয়ার পক্ষে না। আমি একটা ওপেন এন্ডিং রাখতে চাই। যার মাধ্যমে দর্শক যে যার মতো করে ভেবে নেবে।
জীবন-যাপন, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতি তো সব জায়গায় আছে। নদীর পারে যেমন আছে, সমতলেও আছে। সে ক্ষেত্রে নদীকেন্দ্রিক জীবন-যাপন কেন সিনেমার প্লট হিসেবে বেছে নিলেন?
নদী হচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য। নদীমাত্রিক এ বাংলাদেশ। দেশের সব বড় বড় শহর কিন্তু নদীকেন্দ্রিক। এখন হয়তো অনেক জায়গায় নদীর সেই জৌলুস পাওয়া যাবে না, কিন্তু প্রত্যেক বড় শহরের পাশ দিয়েই বড় একটি নদীর নাম শুনতে পাবেন। সেখানকার জীবন-যাপন, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতিই কিন্তু সেখান থেকেই আসা। সেখান থেকে আমরা এখন কত দূরে সরে এসেছি, কিন্তু সেখানে এখনও কিছু মানুষ বাস করে, জীবন ধারণ করে।
সেই মানুষজন কেমন আছে, সেখানকার জীবনাচরণ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং রাজনীতির অবস্থা দেখানোর একটা বাসনা আছে এ সিনেমায়।
পদ্মা পারের জীবন নিয়ে খুবই জনপ্রিয় উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ রয়েছে। সেখান থেকে সিনেমাও হয়েছে। পদ্মাপুরাণ কি প্রচ্ছন্নভাবে সেই চরিত্রগুলোকে মনে করিয়ে দিতে পারবে? বা নতুন প্রজন্মকে নতুন কুবের, কপিলা, মালা উপহার দিতে পারবে?
আমরা যারা ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ পড়েছি বা সিনেমাটি দেখেছি, তারা আশা করি কুবের, কপিলা, মালাকে প্রচ্ছন্নভাবে খুঁজে পাবেন। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাস বা সিনেমার প্রেক্ষাপট আগের হলেও পদ্মা পারের শাশ্বত কিছু বিষয় আছে, যা যুগে যুগে একই রকম থাকবে। তাই সেখানে বারবার কুবের, কপিলা বা মালার উপস্থিতি থাকবে।
তাদের জীবনাচরণে পরিবর্তন আসবে কিন্তু সেই দুঃখ-কষ্ট বা সামান্য আনন্দের খোঁজ পাওয়া যাবে চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে।
সিনেমার দুটি বিষয় চোখে পরার মতো। একটি ‘হার না মানা নদীর গল্প’, আরেকটি ‘নদী হলো নারীর মতো’ সংলাপটি। দুটি বিষয়ের ব্যাখ্যা দেবেন কি?
দেখেন, পদ্মা নদীর পারে কত জনপদ এসেছে আবার চলেও গেছে, কিন্তু পদ্মা নদী রয়ে গেছে। নদীতে খরা আসে আবার জেগে ওঠে। পানি নামলে চরে ফসল ফলিয়ে বা পানি থাকলে মাছ শিকার করে মানুষ সেখানে জীবন ধারণ করে। অর্থাৎ পদ্মা কিন্তু দিয়ে যাচ্ছে তার পারে বাস করা মানুষগুলোকে। মানুষ হেরে গেলেও নদী কিন্তু হেরে যাচ্ছে না।
আর নদী ও নারীর সম্পর্কটা সিনেমা হলে বেশি ভালো করে বোঝা যাবে। তবে এটা বলতে পারি যে এটা গল্প বলার একটা ঢং। আমরা যে গল্পটা বলতে চেয়েছি, সেটা একটা নারীর সঙ্গে নদীর তুলনা করে। তাই ‘নদী হলো নারীর মতো’ বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করা জরুরি।