স্মৃতিকাতরমিশ্রিত বিরহী মুখ নিয়ে এক সুন্দরী রমণী ছোট ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে আসতে আসতে থেমে গেলেন। যে ঘরটিতে তাকে পাওয়া গেল, সেটিও একদমই স্বাভাবিক ছিল না। ধীরে ধীরে মেয়েটি দূরে সরে যেতে লাগলেন। একটা সময় আবিষ্কার করা গেল সেই মেয়েটি আসলে পৃথিবীতে নেই; তিনি আসলে মহাকাশে।

জেফার রহমান ও ‘আরেকটা রক ব্যান্ড’-এর যৌথ গানের মিউজিক ভিডিওর একদম শেষ ভাগের দৃশ্যটি অনেকটা ওপরের বর্ণনার মতো। আর যে মেয়েটির কথা বলা হচ্ছে, তিনি সংগীতশিল্পী জেফার রহমান।

নতুন যৌথ গানটির শিরোনাম ‘অজানা’। আর সে কারণেই হয়তো জেফারের মহাকাশের মতো অজানায় চলে যাওয়া।

যেহেতু অজানা একটি যৌথ গান, তাই গানটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে ‘আরেকটা রক ব্যান্ড’-এর ভোকাল রিয়াসাত আজমির কণ্ঠ ও দ্বিতীয় ভাগে শোনা যায় জেফারের কণ্ঠ।

গানে জেফারের অংশবিশেষ এমন- যদি চাও মনে রাখব না/ দূরে রেখেও সব প্রেরণা/ নিয়ে যেয়ো আমার- স্মৃতিগুলো সাথে/ যাও চলে।

যে মিউজিক ভিডিওটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানেও এমন একটা আবহ তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওর শেষটা দেখলে তেমনটাই মনে হবে। দুটি চরিত্র দুটি ভিন্ন জায়গায় আছে। অর্থাৎ তারা অজানায় অথবা জেফারের গানের কথার মতো স্মৃতিগুলো সব নিয়ে দুজন চলে গেছে ভিন্ন দুটি প্রান্তে।

জেফারের মতে, ‘আমি কিছু একটা বললেই হলো না। এটা একেক জন একেক রকম ব্যাখ্যা করতে পারবেন।’

গান ও মিউজিক ভিডিওর মধ্যে কোনো একটিকে এগিয়ে রাখা মুশকিল। শিল্পী হিসেবে জেফারের কাছে তো সেটা আরও কঠিন। শ্রোতা-দর্শকরা দুটি বিষয়কেই গুরুত্ব দিয়েছেন গানটির মন্তব্যের ঘরে।

জেফার জানালেন, অজানা গানটি সিন্থ ওয়েভ ঘরানার। এটি এখন আন্তর্জাতিক সংগীতে বেশ জনপ্রিয়। সেই ঢঙেই তারা গানটি করতে চেয়েছেন।

জেফার বলেন, ‘আমরা যারা কাজটি করেছি তারা সবাই বন্ধু। আমরা অনেকগুলো কাজই করব বলে ভেবে রেখেছিলাম। তার মধ্য থেকে এই গানটি করতে চেয়েছি আমরা। নতুন জনরার কাজ করা নিয়ে একটা বাড়তি আগ্রহ ছিল। তা ছাড়া আমি সিঙ্গেল শিল্পী হয়ে একটি ব্যান্ডের সঙ্গে কোলাবরেট করলাম, এটিও কিন্তু সাধারণত হয় না। ওদের সঙ্গে আমার যে ভয়েস বা মিউজিক একটা পয়েন্টে এসে মিলে যায় বলে মনে হয়েছে আমার। সব মিলিয়ে কাজটি হয়েছে।’

সব বেশ ভালো হলেও গানের কথাগুলো বুঝতে একটু কষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন কিছু শ্রোতা। তাদের উদ্দেশে জেফার বলেন, ‘আমরা যতটুকু ক্ল্যারিটি রাখা যায় রেখেছি। তবে সিন্থ ওয়েভ ঘরানার গানে সব সময় দেখবেন মিউজিকের প্রাধান্য থাকে। মানে মিউজিকটাই ডমিনেট করে।’

জেফারের যে সহশিল্পীকে দেখা গেছে ভিডিওতে, তিনি রিয়াসাত আজমি। তিনি ‘আরেকটা রক ব্যান্ড’ ব্যান্ডের ভোকাল। আর গানটির ভিডিওর একটি জায়গায় দেখা যায় অনেক জন মিলে আড্ডা দিচ্ছেন, গিটার বাজাচ্ছেন আরও কয়েকজন। তারা হলেন ব্যান্ডটির অন্য সদস্য। আজমিকে দেখে অবশ্য অনেকে জেফারকে জিজ্ঞেস করেছেন যে তিনি মডেল কি না।

জেফার জানান, না, তিনি মডেল নন, তিনি রকার। আজমির নাকে নথ ও নখে নেইলপলিশ আলাদা আবেদন তৈরি করেছে দর্শকদের মধ্যে।

গানটি নিয়ে প্রচারের সময় একটা মজার ঘটনা ঘটেছে। জেফার একটি কাপল ছবি পোস্ট করেছিলেন তার ফেসবুক পেজে। যেখানে ছেলেটির মুখ ইমোজি দিয়ে ঢাকা ছিল। এই ছবি দেখে অনেকেই মনে করেছেন প্রেমের খবর জানাচ্ছেন জেফার। কিছুটা সাসপেন্স রাখার জন্য ছেলের মুখ ঢেকে রাখা হয়েছে।

পরে জানা গেছে ছেলেটি আসলে আজমি। সেটি কোনো কাপল ছবি ছিল না; মিউজিক ভিডিও বানানোর সময় তোলা একটি ছবি ছিল সেটি।

জেফার বলেন, ‘অনেকে মনে করেছে আমি প্রেম করছি আর ছেলেটি হলো সালমান মুক্তাদির। অনেকে তো ভেবেছে এবার আমি এনগেজমেন্ট বা বিয়ের খবর দিতে যাচ্ছি। বিষয়টা নিয়ে মজা হয়েছে বেশ।’

ভিডিওতেও অনেক নতুনত্ব ছিল। তবে মজা করে জেফারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ডিম পোচ করতে করতে রোমান্স ব্যাপারটা কেমন লাগে?

জেফার জানালেন, কাপলরা তো কত কিছুই করতে পারে (হাসতে হাসতে)। তবে ভিডিওটি নাকি একদম ন্যাচারালভাবে ধারণ করা হয়েছে। দৃশ্যধারণের সময় কেউ জানতেন না, এই দৃশ্যটিই রাখা হচ্ছে।

গানটি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আরও এক বছর আগে কিন্তু নানা কারণে সেটি প্রকাশ পেয়েছে অক্টোবরের ১ তারিখে। আরও কিছু গান নিয়ে আসছেন বলে জানালেন জেফার।

বললেন, ‘আমার একসময় রিয়েলাইজ হলো, আমি কেন বসে আছি। জীবন তো ছোট। তাই কাজ করতে হবে। কাজ হয়তো সব ভালো হবে না কিন্তু এটা নিয়ে এত চিন্তা করারও তো কিছু নাই। এখন আমি একটা বোর্ড করেছি। সেখানে কোন কাজ কত দিন পর্যন্ত করব, সেগুলো লিখে রেখেছি।’

ন ডরাই সিনেমায় এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করেছেন জেফার। সিনেমায় আরও কাজের ইচ্ছে আছে, তবে তাকে হয়তো পাওয়া যাবে নতুন পরিচয়ে। কোনো সিনেমার সঙ্গে এখনও চুক্তিতে নেই তিনি, তবে সিনেমার সংগীত নিয়ে ভালো প্রস্তাব পেলে অবশ্যই করবেন।

জেফারের নতুন গান শিগগিরই আসবে। মিউজিক ভিডিওর শুটিং শেষ করেছেন। সেখানেও নতুন কিছু দেবার ইচ্ছা আছে এই সংগীতশিল্পীর।