বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কোনো স্কেল দিয়ে সেরা হওয়ার সীমা নির্ধারণ করা যায় না: প্রিয়তী

  •    
  • ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৭:৩৯

প্রিয়তী বলেন, ‘অবশ্যই আমার বাংলাদেশের সিনেমায় কাজ করার ইচ্ছে আছে, এটা সব সময় ছিল, আছে এবং আমার দরজা খোলা। যদি কেউ মনে করেন আমাকে ইউটিলাইজ করা যাবে, অবশ্যই তাদের জন্য আমার দরজা খোলা।’

‘মিস আয়ারল্যান্ড’-খ্যাত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মডেল ও অভিনেত্রী মাকসুদা আখতার প্রিয়তী এখন সারা বিশ্বে শোবিজ অঙ্গনের পরিচিত মুখ। মডেল ও অভিনেত্রী হিসেবে সবাই তাকে চিনলেও প্রিয়তীর আরও দুটি পরিচয় আছে। তিনি একজন লেখক এবং কর্মজীবনে পাইলট।

৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে ইনটিগ্রিটি ম্যাগাজিন আয়োজিত প্রতিযোগিতায় টপ মডেলের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন প্রিয়তী। এর পরই গত ১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ‌্যের লন্ডনে ‘টপ মডেল-২০২১’ প্রতিযোগিতাতেও জয় করেছেন টপ মডেলের পুরস্কার।

মডেলিং জগতে বিশ্বব্যাপী পরিচিত হলেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রেও অভিনয়ের আগ্রহ রয়েছে প্রিয়তীর।

নিউজবাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মডেলিং, অভিনয়, লেখালেখিসহ নানা বিষয়ে আলাপ করেছেন প্রিয়তী।

মডেল হিসেবে আপনার যাত্রার শুরুটা জানতে চাই? ঠিক কীভাবে নিজের মডেল হওয়ার ইচ্ছেটা জাগল?

মডেল ও অভিনেত্রী সাদিয়া ইসলাম মৌকে দেখে মডেল অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রিয়তী। ছবি: সংগৃহীত

প্রিয়তী: মডেল হিসেবে আমার যাত্রা আসলে অনেক ছোটবেলায়। আমি একজন শিশু মডেল হিসেবে কাজ করেছি একটা বিস্কুট কোম্পানির বিজ্ঞাপনে।

আর ঠিক কীভাবে মডেল হওয়ার ইচ্ছে জাগল, সেটা আসলে আমরা কারও না কারও পদচিহ্ন অনুসরণ করি বা কারও দ্বারা অনুপ্রাণিত হই। আমি যখন বড় হতে থাকি, তখন আমাদের দেশের রিনাউন মডেল সাদিয়া ইসলাম মৌ। উনি খুব বিখ্যাত একজন মডেল ছিলেন এবং তখন উনি খুব স্ট্রংলি কাজ করছেন মিডিয়াতে, মডেলিং জগতে। ওনাকে দেখে আমি খুব অনুপ্রাণিত হতাম।

ওনার সৌন্দর্য আমাকে খুব আলোড়িত করত। সো আমি যদি একদম বলি যে মডেল হওয়ার ইচ্ছে জাগা, অনুপ্রাণিত হওয়ার জাগাটা ওনার স্ট্রং একটা ইফেক্ট রয়েছে আমার ওপরে।

‘মিস আয়ারল্যান্ড-২০১৪’-এর আগে মডেল হিসেবে প্রথম যে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন?

২০১৩ সালে টেক্সাসে মিস ইউনিভার্সেল রয়েলিটি বিউটি প্রেজেন্ট নামে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রথম অংশ নেন প্রিয়তী। ছবি: সংগৃহীত

প্রিয়তী: ‘মিস আয়ারল্যান্ড-২০১৪’ হওয়ার আগে আমি আসলে ‘মিস ইউনিভার্সেল রয়েলিটি বিউটি প্রেজেন্ট-২০১৩’-এ ইউএসের টেক্সাসের একটা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। এটা সম্ভবত ২০১৩-এর সেপ্টেম্বরে ছিল। এর পরে মিস আয়ারল্যান্ড প্রতিযোগিতায়।

কানের টপ মডেলের পরপরই যুক্তরাজ‌্যের ‘টপ মডেল-২০২১’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হলেন, আপনার এই দুই বিজয়ের অনুভূতি জানতে চাই?

৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে টপ মডেলের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন প্রিয়তী। ছবি: সংগৃহীত

প্রিয়তী: আসলে আমি এই দুটির পার্থক্য বলি, যেমন টপ মডেল ইউকের যে প্রতিযোগিতা, সেটা শুরু হয়েছে গত বছরই। এক বছর থেকে এটার কার্যক্রম চলছে। প্রতিযোগিতার যে ধাপগুলো থাকে, সেগুলো চলছে গত এক বছর ধরেই। সো এটার জন্য আমি প্রস্তুত হচ্ছিলাম। যেমন আপনি যদি এখন একটা পরীক্ষা দিয়ে যান, সেই পরীক্ষার জন্য আপনি নিজেকে যেভাবে প্রস্তুত করবেন, সে পরীক্ষার ফলাফল জানতে আপনি যে রকম আগ্রহী হবেন বা আপনি যে রকম এক্সসাইটেড থাকবেন, সেই ব্যাপারটা হচ্ছে এ রকম। আর কানের টপ মডেল হচ্ছে আমার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে। যেমন আপনি এখন একটা অফিসে কাজ করছেন, যেখানে আপনি প্রমোশন পেলেন, আপনার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে আপনাকে অ্যাওয়ার্ড দেয়া হলো, সেটা হচ্ছে কানের আমার টপ মডেলের অ্যাওয়ার্ডটা।

গত ১৮ সেপ্টেম্বরে লন্ডনে ‘টপ মডেল-২০২১’ প্রতিযোগিতায় টপ মডেলের অ্যাওয়ার্ড পান প্রিয়তী। ছবি: সংগৃহীত

তাই দুটি হচ্ছে দুই রকমের অনুভূতি। একটা কাজের স্বীকৃতি, আরেকটা হচ্ছে প্রতিযোগিতার ফসল। আপনার যত শ্রম, যত সময়, আপনি যতখানি ফোকাস দিয়েছেন, দুটিই দুই রকমের সফতার আনন্দ।

আরেকটা ব্যাপার যেটা বলব, কানে যেটা হয়েছে, কানে তো আমি গিয়েছিলাম আমার কাজে, ফ্যাশন শো, ফটোশুটে এবং মুভির কিছু ব্যাপারে। সবকিছু মিলে আমার কানে যাওয়া হয়েছিল। তো এই অ্যাওয়ার্ডটা আমার জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল। আমি জানতাম না যে আমাকে এ রকম একটা অ্যাওয়ার্ড দেয়া হতে পারে বা আমি একটা অ্যাওয়ার্ড পাব, এত বড় একটা অ্যাওয়ার্ড ইভেন্ট। কারণ সেখানে ফ্রান্সের মডেলরা ছিলেন, তাদের টপকে আমাকে অ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে আমি এটা কল্পনাও করতে পারিনি। আমার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এটা পেয়েছি, এটা আমার জন্য অনেক সৌভাগ্যের, কানের মাটি থেকে সেই স্বীকৃতি নিয়ে আসা। তো দুটির অনুভূতি আসলে অন্য রকম কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস, আমার রেসপন্সিবিলিটি, আমার কাজ করার আগ্রহ বা কাজের প্রতি নিজেকে আরও ডেডিকেট করার মনমানসিকতার যে স্থিরতা লাগে, সেটা আরও বেড়েছে।

মডেল হিসেবে নিজেকে আর কোনো সেরা জায়গায় দেখা বাকি রইল কি?

‘মিস আয়ারল্যান্ড’-খ্যাত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মডেল ও অভিনেত্রী মাকসুদা আখতার প্রিয়তী। ছবি: সংগৃহীত

প্রিয়তী: আসলে সেরা হওয়ার কোনো লিমিট নেই। আপনি কখনও কোনো স্কেল দিয়ে সেরা হওয়ার লিমিট করতে পারবেন না, যেকোনো সেক্টরে। এটা শুধু মডেল হওয়ার ক্ষেত্রে না। যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে বলেন, বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে ডাক্তার, সাংবাদিক, অ্যাক্টর যেকোনো সেক্টরে একদম বলতে পারবেন না, এটাই শেষ স্কোর সেরা হওয়ার। তাই মডেল হিসেবে নিজেকে সেরা জায়গায় দেখার বাকি রইল কি না, সেটার উত্তর আমি এখনও দিতে পারব না।

প্রিয়তীর মতে, কোনো স্কেল দিয়ে সেরা হওয়ার সীমা নির্ধারণ করা যায় না। ছবি: সংগৃহীত

কারণ আমার এখনও মনে হয় যে আমাকে আরও ওপরে নিতে হবে। তাই এই প্রক্রিয়ায় থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার যখন এই প্রক্রিয়াটা থাকে, তখন আপনি নিজেকে চেঞ্জ করতে থাকেন, নতুনভাবে নিজেকে আবার উপস্থাপন করতে থাকেন। নিজেকে আরও বেশি আবিষ্কার করতে থাকেন। আপনার কাজের গুণ চেঞ্জ হতে থাকে, আপনার স্টাইল চেঞ্জ হতে থাকে। সো হুইচ ইজ বিউটিফুল, হুইচ ইজ ওয়ান্ডারফুল।

তাই মডেল হিসেবে নিজেকে সেরা জায়গার বাকি রইল কি, সেই প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাচ্ছে না। অবশ্যই সেরা হওয়ার অনেক অনেক স্তর আছে, অনেক অনেক জায়গা আছে, অনেক অনেক ধাপ আছে।

একজন সফল বৈমানিক ও মডেলের পর আর কোন ক্ষেত্রে নিজেকে সফল হিসেবে দেখতে চান?

মডেলিংয়ের পাশাপাশি পোল ডান্সেও পারদর্শী প্রিয়তী। ছবি: সংগৃহীত

প্রিয়তী: আমি আসলে নিজেকে এখন সফল একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে দেখতে চাই। আমি নিজেকে এখনও অভিনেত্রী বলতে পারি, কিন্তু এখনও অভিনয়শিল্পী হয়ে ওঠার প্রসেসের মধ্যে আছি। সেটা যখন মনে করব যে, একজন অভিনয়শিল্পী হয়ে উঠতে পেরেছি। আমার মনে হয় আরেকটা সফলতার ধাপ পার করার পথে আছি, হয়তো আমি তা পার করতে পারব।

বাংলাদেশের কোনো সিনেমায় কাজ করার ইচ্ছে আছে?

দেশের সিনেমায় অভিনয়ের ইচ্ছে আছে ‘মিস আয়ারল্যান্ড’-খ্যাত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মডেল ও অভিনেত্রী প্রিয়তীর। ছবি: সংগৃহীত

প্রিয়তী: অবশ্যই আমার বাংলাদেশের সিনেমায় কাজ করার ইচ্ছে আছে, এটা সব সময় ছিল, আছে এবং আমার দরজা খোলা। যদি কেউ মনে করেন আমাকে ইউটিলাইজ করা যাবে, অবশ্যই তাদের জন্য আমার দরজা খোলা। এখন কথা হচ্ছে যে, আমাদের প্রফেশনাল টিম এখনও রেডি আছে কি না, সেটা হচ্ছে আসল ব্যাপার।

আপনার ‘প্রিয়তীর আয়না’ ও ‘ছোবল’ বেশ সারা ফেলেছিল পাঠক মহলে, লেখক প্রিয়তীর আর কোনো বই আসছে সামনে?

নিজের লেখা বই ‘প্রিয়তীর আয়না’ হাতে মডেল ও লেখক প্রিয়তী। ছবি:সংগৃহীত

এই দুই বইয়ের পরে এ বছর আমার আরও বইটি বের হয়েছে ‘কণ্টক শয্যা’। এরপর অবশ্যই আমার আরেকটা বই আসবে, এখনও আমি সেটা নিয়ে কোনো ঘোষণা করিনি, আমার আরেকটা বই সামনে আসবে।

এত কিছুর মধ্যে সন্তান-সংসার কীভাবে সামলান?

দুই সন্তান আবরাজ ও মৌনিরার সঙ্গে প্রিয়তী। ছবি: সংগৃহীত

প্রিয়তী: আসলে এটা অবশ্যই অনেক কঠিন এবং আমার মতো সিঙ্গেল মায়ের জন্য বেশ কঠিন। এর মধ্যে যদি পরিবারের সদস্য বা কেউ আশপাশে না থাকে, ভিনদেশে এটা আরও বেশি কঠিন অবশ্যই। হয়তোবা আমার সব এনার্জির ৭০ থেকে ৮০ ভাগ চলে যায় আমার পরিবার আর সন্তানদের সামলাতে, তাদের দায়দায়িত্বে। এটা আমি ভালোবাসি, অবশ্যই এটা আমি এনজয় করি। আমি যদি সেভাবে বলি, আর বাকি ২০ ভাগ দিই আমার কাজে। কারণ এই রেসপনসিবিলিটির ভারটা একটু কম হলে হয়তোবা আমি আমাকে আরও বেশি ফুটিয়ে তুলতে পারতাম বা হয়তো আমি আরও বেশি কাজে যুক্ত হতে পারতাম বা আমি মনে হয় আরেকটু বেশি সফলতার পথে আগাতে পারতাম।

কিন্তু যেহেতু আমি একজন মা, মা হিসেবে আমার সন্তানদের দেখাশোনা করার দায়িত্বটা প্রথম, তাদের নিরাপত্তাটা প্রথম। আমি খুব লাকি এবং আমি ওপরওয়ালার কাছে হাজার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি যে আমি সেটা করতে পারছি। সেই সক্ষমতা আমাকে ওপরওয়ালা দিয়েছেন এবং আমাকে সুস্থ রেখেছেন আমার সন্তানদের সুস্থ রেখেছেন।

একজন মা, মডেল, বৈমানিক ও লেখক প্রিয়তী যে কথাটা তার ভক্ত-অনুরাগীদের বা সবার উদ্দেশে বলতে চান?

কর্মজীবনে মডেল প্রিয়তী একজন পাইলট। ছবি: সংগৃহীত

প্রিয়তী: আমি একটা কথা প্রায় বলে থাকি, নিজে স্বাবলম্বী হওয়াটা অনেক বেশি জরুরি। নিজে যখন আমরা স্বাবলম্বী হই, তখন আমরা নিজেদের হ্যাপি রাখতে পারি এবং অন্যদেরও হ্যাপি রাখতে পারি। আর আমরা যখন অন্যের ওপরে নির্ভরশীল হই, তখন আমাদের আসলে মেইন ফোকাসটা থাকে সেই অন্য মানুষটাকে, অন্য মানুষদের হ্যাপি রাখার, তাকে দেখভাল করার। তাই নিজে নির্ভরশীল হওয়াটা খুব জরুরি নিজের লাইফের জন্য। নিজের সুখের জন্য, নিজের মনের সুখের জন্য এবং কাছের মানুষদের সুখের জন্য। এটার সঙ্গে কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজ করা উচিত না। সেটা যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই হোক না কেন। সেটা ভাই-বোন, বাবা-মা, স্বামী-প্রেমিক যেটাই হোক না কেন, নিজে আত্মনির্ভরশীল হওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এ বিভাগের আরো খবর