গত বছর অক্টোবরে মরণোত্তর দেহদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন দুই বাংলার জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও গবেষক কবীর সুমন। দেহদানের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ করেছেন ৭২ বছর বয়সী এই শিল্পী।
বুধবার দেহদানের অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সেই অঙ্গীকারপত্রের ছবি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেন সুমন।
ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকারপত্রে সই- গতকাল, ২২.০৯.২১ সন্ধ্যে।’
এর আগে, ২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নিজের হাতে লেখা একটি ইচ্ছাপত্রের ছবি পোস্ট করেন। এতে তিনি মরণোত্তর দেহদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
ইচ্ছাপত্রে তিনি লেখেন, ‘সকলের অবগতির জন্য - সজ্ঞানে, সচেতন অবস্থায়, স্বাধীন ভাবনাচিন্তা ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমি জানাচ্ছি; আমার কোনও অসুখ করলে, আমায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে অথবা আমি মারা গেলে আমার সম্পর্কিত সবকিছুর, প্রতিটি বিষয় ও ক্ষেত্রে দায়িত্ব গ্রহণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার থাকবে একমাত্র মৃন্ময়ী তোকদারের (মায়ের নাম প্রয়াত প্রতিমা তোকদার, বাবার নাম দেবব্রত তোকদার), অন্য কারও কোনো অধিকার থাকবে না এইসব বিষয় ও ক্ষেত্রে।’
২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর মরণোত্তর দেহদানের ইচ্ছা প্রকাশ করে এই ইচ্ছাপত্রের ছবি পোস্ট করেন কবীর সুমন। ছবি:ফেসবুক
মৃতদেহ গবেষণার কাজে ব্যবহার হোক এমনটা চান সুমন। তার মৃত্যুর পর কোনো ধরনের স্মরণসভা করতেও নিষেধ করেন এই জনপ্রিয় গায়ক। এমনকি নিজের সৃষ্টি ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়ে গেছেন তিনি।
লেখেন, ‘আমার মৃতদেহ যেন দান করা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে। কোনো স্মরণসভা, শোকসভা, প্রার্থনাসভা যেন না হয়। আমার সমস্ত পাণ্ডুলিপি, গান, রচনা, স্বরলিপি, রেকর্ডিং, হার্ড ডিস্ক, পেনড্রাইভ, লেখার খাতা, প্রিন্ট আউট যেন কলকাতা পুরসভার গাড়ি ডেকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় সেগুলো ধ্বংস করার জন্য-হাতে লেখা সব কিছু, অডিও ও ভিডিও ফাইল- সব। আমার কোনও কিছু যেন আমার মৃত্যুর পর পড়ে না থাকে। আমার ব্যবহার করা সব যন্ত্র, বাজনা, সরঞ্জাম যেন ধ্বংস করা হয়। এর অন্যথা হবে আমার অপমান।’
১৯৪৯ সালের ১৬ মার্চ ভারতে ওডিশায় জন্ম কবির সুমনের। ৯০ দশকের শুরুতে ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবাম দিয়ে বাংলা আধুনিক গানের জগতে আবির্ভাব হয় তার।
সেই অ্যালবাম দিয়ে দুই বাংলায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। অসংখ্য অ্যালবামের সঙ্গে উপহার দিয়েছেন ‘গানওলা’, ‘জাতিস্মর’ ‘নিষিদ্ধ ইস্তেহার’-এর মতো তুমুল জনপ্রিয় সব গান।