অনেক বছর ধরেই টালিউডে কাজ করছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। সম্প্রতি এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন দেশের আরও দুই গুণী অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও আজমেরী হক বাঁধন।
২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া আবর্ত সিনেমা দিয়ে টালিউডে যাত্রা শুরু হয়েছিল জয়ার। এরপর জয়া অভিনীত মুক্তি পাওয়া সিনেমার মধ্যে রয়েছে রাজকাহিনী, বিসর্জন, বিজয়া, কণ্ঠ, বিনিসুতোয়। এ ছাড়া জয়ার গোটা তিনেক সিনেমা এখনও মুক্তির অপেক্ষায়।
এদিকে রেহেনা মরিয়ম নূর খ্যাত অভিনেত্রী বাঁধন অভিনীত সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ওয়েব সিরিজ় রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি মুক্তি পেয়েছে সম্প্রতি। এতে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন বাঁধন।
অন্যদিকে পরপর মায়া ও অ্যা রিভার ইন হেভেন নামের দুই সিনেমায় যুক্ত হয়ে বেশ পাকাপোক্তভাবেই টালিউডে নাম লিখিয়েছেন মিথিলা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই তিন অভিনেত্রীর এভাবে টানা কাজ করা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন টালিউডের অনেক অভিনেত্রী।
জয়া-মিথিলা-বাঁধনরা টালিউডের যে ঘরনার সিনেমাতে কাজ করছেন, এই ঘরানার সিনেমায় এর আগে সাধারণত পাওলি দাম, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, রাইমা সেনদের দেখা যেত।
অন্যদিকে টালিউডের মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমার চাহিদা কমে যাওয়ায় শুভশ্রী, শ্রাবন্তী, মিমি, নুসরাতও ঝুঁকেছেন ভিন্ন ধারার সিনেমার দিকে। ফলে অল্প পরিসরে প্রতিযোগিতা বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নায়িকা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এমন অনেক চরিত্রই বাংলাদেশি অভিনেত্রীদের দেয়া হয়, যেটা এখানকার যে কেউ করতে পারত।’
জয়া আহসান অবশ্য এই প্রতিযোগিতা নিয়ে ভাবতে চান না। তার মতে, কাজের সুযোগ সবারই আছে।
সম্প্রতি কলকাতায় মুক্তি পাওয়া বিনিসুতোয় সিনেমায় অভিনয় ও গান গেয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়াচ্ছেন বাংলাদেশি অভিনেত্রী জয়া আহসান। ছবি: সংগৃহীত
আনন্দ প্লাসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা তো ভালোই। আমার মতে শিল্পের কোনো সীমারেখা থাকা উচিত নয়।’
এদিকে দুই বাংলার শিল্পের আদান-প্রদানের ওপরে জোর দিলেন মিথিলা।
মিথিলা বলেন, ‘কেউ কারও কাজ, জায়গা কেড়ে নিতে পারে বলে মনে হয় না। সবাই নিজের যোগ্যতা দিয়ে কাজ পাচ্ছেন। আমি বৈবাহিক সূত্রে কলকাতায় থাকছি, তাই এখানেই কাজ করছি এখন। তবে আমি এখানে সদ্য কাজ শুরু করেছি। আমাকে বোধহয় কারও প্রতিযোগী হিসেবে দেখাটা ঠিক হবে না।’
এই মুহূর্তে টালিউডের দুটি সিনেমায় কাজ করছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিথিলা। ছবি: সংগৃহীত
সেই সঙ্গে মিথিলা মনে করিয়ে দিলেন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকেই বাংলাদেশে কাজ করেছেন।
বাংলাদেশের সিনেমা কমান্ডোতে কাজ করেছেন দেব। আবার কলকাতায় গিয়ে একাধিক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন বাংলাদেশের নুসরাত ফারিয়া।
বাংলাদেশে কাজ করেছেন টালিউডের এমন এক নায়িকা বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশের শিল্পীরা যত সুযোগ পান, সেই তুলনায় বাংলাদেশে আমাদের কাজের সুযোগ বেশ কম।’
এসব নিয়ে বাঁধন মনে করেন, এই চর্চাগুলো অভিনেত্রীদের ওপরে বাড়তি চাপ তৈরি করে।
বাঁধন বলেন, ‘অনেকে বলছেন, বাংলাদেশ থেকে অভিনেত্রীরা এসে কাজ করায় টালিউডের কিছু অভিনেত্রীর মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আসলে আমাদের সমাজ এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে দেয়। বিশেষ করে নারীদের ওপরেই বেশি চাপ তৈরি করা হয়। কেন এই চাপগুলো আমাদের নিতে হবে?’
টালিউড নির্মাতা সৃজিতের ওয়েব সিরিজ় রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি-তে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত
তিনি বলেন, ‘এগুলো এড়িয়ে ভালো দিকগুলো ভাবলে, সবারই ভালো হবে। সবাই যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাবেন। কথাটা কলকাতা-বাংলাদেশ সব ইন্ডাস্ট্রির নিরিখেই বলছি।’