ওয়েব ফিল্ম নেটওয়ার্কের বাইরে চাপা পড়ে থাকা এক শাশ্বত অনুভূতিকে যেন উসকে দিয়ে গেছে। বন্ধুত্বের চিরচেনা ক্ষেত্রগুলোকে যেন উর্বর করে দিয়ে গেছে নতুন করে।
যে চরিত্রগুলো দিয়ে নানা ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে, সেই চরিত্রগুলো যেন তরুণ দর্শকদের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে। নানা ক্ষেত্রে তাদের মতোই নিজেদের ভাবতে ভালোবাসছেন দর্শকরা।
মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত ওয়েব কনটেন্টটিতে অভিনয় করেছেন তরুণ অভিনেতা খায়রুল বাসার।
কিছুদিন আগে নেটওয়ার্কের বাইরে কনটেন্টটির অভিনয়শিল্পী রাজ, তুষি ও জুনায়েদের সঙ্গে খায়রুল বাসারও আহত হন। তবে এখন তিনি ভালো আছেন, সুস্থ আছেন।
নেটওয়ার্কের বাইরে মুক্তি হওয়ার কিছুদিন পরেই এবং দুর্ঘটনার দুই দিন আগে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় খায়রুল বাসারের।
- আপনার অভিনীত নেটওয়ার্কের বাইরে কনটেন্টটি বেশ প্রশংসা পাচ্ছে। আপনি এর আগেও নানা কাজে প্রশংসা পেয়েছেন। এবারের ভালো কথাগুলো কি আপনার কাছে নতুন?
প্রতিটা কাজ তো নতুন। প্রতিটি কাজেই একটা প্রেম নিয়ে করতে যাই। ভাবতে থাকি চরিত্রটা কীভাবে সুন্দর করে তৈরি করা যায়। কীভাবে দৃশ্যায়ন করলে চরিত্রটি আরও ফুটে উঠবে। এ বিষয়গুলো বেশ চ্যালেঞ্জিং।
নতুন কাজ আমার কাছে নতুনের মতোই। আমি নতুন করে ফিল করি। প্রতিবার প্রেমে নতুন জনম যে রকম, অনেকটা সে রকম।
সেই দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বলি, নেটওয়ার্কের বাইরে নিয়ে যে রকম সবাই মন্তব্য করছেন, ফিডব্যাক দিচ্ছেন, ইনবক্সে লিখছেন, এটা অন্য রকম একটা অনুভূতি। এটা একটা বন্ধুত্বের গল্প ছিল এবং এটা যে চমৎকারভাবে সবার আপন হয়ে উঠল, সেটা সত্যি খুব আনন্দের। সবাই খুব ভালো রিলেট করে নিচ্ছেন গল্পটা। সবাই ভালোবাসা জানাচ্ছেন, আমি সেই ভালোবাসার প্রতি কৃতজ্ঞ।
অভিনেতা খায়রুল বাসার। ছবি: সংগৃহীত- আপনার নিজের একটা বন্ধুর সার্কেল রয়েছে নিশ্চয়ই। কনটেন্ট তো আমরা দেখলাম, কিন্তু যেটা দেখলাম না, সেটা হলো আপনার বন্ধু সত্তা। কেমন সেটা?
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে আমার প্রচুর বন্ধু ছিল। আমরা বন্ধুরা এখনও আছি। আমরা ট্যুরে যেতাম। ইদানীং যেটা হচ্ছে, নেটওয়ার্কের বাইরের ছবি আর আমাদের রিয়েল লাইফের ছবি দিয়ে অনেকে পোস্ট করছেন। সেটা দেখে নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছি। আমরা এমনটাই করতাম।
নেটওয়ার্কের বাইরে কনটেন্টের স্ক্রিপ্টটা যখন পড়লাম, তখন মনে হয়েছে অবশ্যই আমার কাজটা করা উচিত। এখানে আমাদের সবার কম ইমোশন জড়িত।
- ঝলমলে রুপালি জগতের হাতছানি, এই জগতের বন্ধুত্বকে ছাপিয়ে আপনার কি ক্যাম্পাসজীবনের বন্ধুত্বকে বেশি মনে পড়ে, নাকি রুপালি জগৎই ঠিক আছে?
আমাকে আমার ক্যাম্পাসজীবনের বন্ধুত্বটাই বেশি টানে। সেটাই বেশি পীড়া দেয়।
ক্যাম্পাসজীবনটা আমাদের অনেক কিছু শেখায়। একটা বিভাগে পড়লাম সেখান থেকেও শিখলাম। কিন্তু সেটা আসলে কিছু বিষয়ে ধারণা দিল। কিন্তু আমাদের শেখার পুরো পরিবেশটা হলো ওই ক্যাম্পাসটা।
সেখানে কত মানুষ কত রকম বিষয় নিয়ে কথা বলছে, কাজ করছে। এই বলয়টা আমাদের অনেক কিছু শেখায়। ওই বিষয়টা মিস করি।
- অনেকে বলেন শোবিজে বন্ধুত্ব হয় না। বন্ধু নিয়ে আমাদের যে ভাবনা, শোবিজে তেমন কিছু দেখা যায় না। আপনি তো শোবিজের বাসিন্দা। কেমন এখানকার বন্ধুত্ব?
এখানে বন্ধুত্বের ব্যাপারটা অন্য রকমই হওয়ার কথা। আমার তো মনে হয় আমরা এখানে কলিগ বা সহকর্মী। আমরা একে অপরের প্রতি আন্তরিক। এখানে আমরা সবাই আসি কাজ করি। এখানে যে বন্ধুত্বটা পরিচর্যা করা হয় তা না।
বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে এমন হতে পারে যে, কথা বলতে গেলেই ওই বন্ধুকে লাগে। কিংবা আমি যাচ্ছি একদিকে, আমার আরেক বন্ধু যাচ্ছে আরেক দিকে। হঠাৎ করে দেখা হয়ে গেল এবং আমরা আমাদের লক্ষ্য ভুলে অন্য কোনো দিক চলে গেলাম অন্য কোনো আলোচনা নিয়ে।
কিন্তু শোবিজে বা পেশাগত জীবনে বিষয়টি তো আর এমন না। তাই ডিপার্টমেন্টের বন্ধু আর শোবিজের বন্ধু বিষয়টি মেলালে চলবে না।
অভিনেতা খায়রুল বাসার। ছবি: সংগৃহীত- নেটওয়ার্কের বাইরে মুন্না চরিত্রটিকে আমরা একটু গান গাইতে শুনি। গান নিয়ে তার প্যাশন আছে। আসল জীবনেও কি আপনি কখনও গান করেন বা করেছেন?
আমার পড়াশোনা মিউজিক ডিপার্টমেন্টে। সেই সুবাদে গান তো করাই হয়েছে বা একটা চর্চায় ছিল। কিন্তু কোর্স সিস্টেমে মিউজিক বিষয়টা সম্ভব না বলে আমার মনে হয়। সংগীত নিয়ে আমার আলাদা ভালোবাসা আছে।
- গান নিয়ে পড়েছেন, সেটা নিয়ে কিছু করার পরিকল্পনা আছে কি?
গান গাওয়া হয়, গাওয়া হবে। গান ছাড়া আসলে খুব অস্বস্তি লাগে। গানটা করা হবে। আরও ভালো করে শিখতে চাই। প্রফেশনালি করব কি না জানি না। তবে ঘরের কোনায় বসে গান করব নিজের স্বস্তির জন্য, এটুকু জানি। সেটা যদি মানুষের কাছে পৌঁছায়, তাহলে ভালো। না হলেও কোনো অসুবিধা নাই।
- আপনার কাজ অধিকাংশ জায়গাতেই নন্দিত হয়েছে। তারপরও, সমালোচনাহীন একটা ক্যারিয়ার কেমন লাগে?
প্রথমত নিন্দিত হতে চাই না। আর সমালোচনা হচ্ছে না তা না। আমি তো সব রকমের চরিত্র করতে চাই। কিন্তু আমাদের এখানে তো খুব অন্য রকম কাজ হচ্ছে, তা না। প্রেমের গল্প অনেক হচ্ছে, পার্থক্য খুবই কম।
এখন অনেকের মনে হতে পারে আমার চরিত্র একঘেয়ে লাগছে। আমি নিজেকে নিজের সমালোচনায় রাখতে বেশি পছন্দ করি। মাঝে মাঝে তো নিজেরই একঘেয়ে লাগে। মনে হয় এই রকম চরিত্র আর না।
অভিনেতা খায়রুল বাসার। ছবি: সংগৃহীত- মহানগর ওয়েব সিরিজে আপনি প্রশংসিত হয়েছেন, নেটওয়ার্কের বাইরেও হলেন, নিজেকে লাকি মনে করেন?
প্রত্যেকটা মানুষই লাকি, আমার মনে হয়। আমরা এ পৃথিবীতে আসতে পেরেছি এটাই অনেক বড় বিষয়। তবে চেষ্টাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যার চয়েস যেটা তিনি সেদিকেই যাবেন।
কেউ আমাকে কাজে নিচ্ছে আমার আগের কাজ দেখে। আমি কারও কাজ করছি গল্পটা পছন্দ হচ্ছে কি না তার ওপর নির্ভর করে। এটা নির্ধারণ করে নিতে হয় এবং আমি মনে করি শুরু থেকে এ জায়গায় বেশ শক্ত ছিলাম।
- আপনাকে এখন পর্যন্ত সবাই সফল বলছেন। অন্তত স্ক্রিনে তাই মনে হয়। কিন্তু সফলতার পেছনে বিফল হওয়ার একাধিক গল্প কি আপনার আছে?
আমি সফল কি না জানি না। আর সফল হওয়ার বিষয়টি আমার কাছে আপেক্ষিক। আমি একটা কাজ করি, সেটা ভালো করে করতে চাই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অভিনয়টা করে যেতে চাই।
আমার কাছে সফলতা বলতে কিছু নাই। আমার কাছে মনে হয় যে, আমরা কাজ করে যাব, কাজ করে যাব এবং কাজ করে যাব। প্রত্যেক দিন নতুন নতুন কিছু করব।
আর ব্যর্থতাকে আমি ব্যর্থতা বলব না, এটাকে আমি অভিজ্ঞতা হিসেবে মূল্যায়ন করি। আমার কিছু অভিজ্ঞতা ছিল, নিশ্চয়ই ছিল। সেগুলোই কাজে লাগছে। ভাবতে পারছি।
- আপনি নিজেও বলছেন যে, বেছেই কাজ করেন। তারপরও কাজ বাছার ক্ষেত্রে আরও নজর দেবেন কি না? দর্শকের প্রত্যাশার চাপ অনুভব করেন কি না?
মানুষের ভালোবাসার চাপ রক্ষা করার একটা চাপ আমি অনুভব করি। অনেকে এসে যখন বলেন যে, আপনার কাজ ভালো লাগে, তখন ভাবি, এই মানুষটি যেন আমার কাজে হতাশ না হয়। আমি খুব নগণ্য একজন মানুষ।
আর কাজ বাছার ক্ষেত্রে আরেকটু নজর দেয়া উচিত। এখন প্রচুর কাজের অফার পাচ্ছি।
অনেক কাজই হয় যেটা মানা করতে পারি না, কিন্তু করতেও চাই না। তেমন কাজ যেন না করতে হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে নিজেকেই। সেই ধরনের কাজ না করার চেয়ে বসে থাকা ভালো।
- আপনি এখন যেমন অবস্থাতেই আছেন না কেন, সেই অবস্থানের স্ট্রাগলটা কী এবং কার সঙ্গে?
এখনকার স্ট্রাগল আমার নিজের সঙ্গে। ধরেন আমার আগামী এক বছর কাজ নেই, প্যারা নাই, আবার হবে বা পরে হবে। কিন্তু কোনো কাজ, কোনো অভিনয় কাল-পরশুই করতে হবে, এমন দরকার নাই।
কেন অভিনয় করি সেটা জানা দরকার। কেন আমি অভিনয় করতে চাই, সেটা বোঝা দরকার। সেটা আমি জানি।
আমি নিজেকে সমালোচনায় রাখি। আমার আরও স্ট্রং হওয়া উচিত, জানা উচিত। আমি আমার কিছু সীমাবদ্ধতার কথা জানি। সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। এগুলোই এখন স্ট্রাগল।
আরও কিছু বিষয় আছে সেগুলোকে বলব না সংগ্রাম। কারণ ওই বিষয়গুলো না থাকলে আসলে জীবনটা জীবনের মতো হতো না।
অভিনেতা খায়রুল বাসার। ছবি: সংগৃহীত- কোন কোন কাজে যুক্ত হলেন? জানাবেন কি?
নাটকের কাজ বেশি আসছে, ওয়েব ফিল্ম ও সিরিজের কথা হচ্ছে। ওয়েবের দুটি কাজে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। সেগুলো শিগগিরই জানা যাবে। এখন বলতে পারছি না।
- গল্প বলতে চান; সেটা অভিনয়ে না পরিচালনায়?
অভিনয় আর চরিত্রের মাধ্যমেই গল্প বলতে চাই। তবে হ্যাঁ, দীর্ঘদিন ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছি, পরিচালনা করার ইচ্ছা আছে, তবে তার জন্য আরও অনেক সময় লাগবে।