জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় স্মরণ করলেন ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে এই শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সমাধিতে সকালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কবির নাতনি খিলখিল কাজী, নাতি বাবুল কাজীর স্ত্রী লুনা কাজী ও তাদের মেয়ে আবাছা কাজী। পরে তারা কবির আত্মার শান্তি কামনায় মোনাজাত করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে খিলখিল কাজী নিউজবাংলাকে বলেন, 'কবি নজরুল সারাজীবন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তাঁর লেখনীর মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনার মাধ্যমে বাঙালি জাতি বারবার উদ্বুদ্ধ হয়েছেন, অনুপ্রাণিত হয়েছেন।’
তিনি আরও জানান, এ বছরের ডিসেম্বর মাসে কবির ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ১০০ বছর পূর্ণ হবে। এ উপলক্ষে কালজয়ী এই কবিতাকে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা থাকবে। রাষ্ট্র তার সব রচনাকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা বলেন, "আমরা কবির ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ১০০ বছরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শতবর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে শত প্রবন্ধ প্রকাশ করব।"
বিএনপির পক্ষে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীসহ বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নিউজবাংলাকে রিজভী বলেন, ‘আজকে গণতন্ত্রের ঘাটতির যুগে, কথা বলার স্বাধীনতা চর্চার কারণে নির্যাতন-নিপীড়ন এবং সর্বোপরি একটা ভয় ও অন্ধকারের যুগে তার লেখনী আমাদের জাগিয়ে তোলে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মকসুদ কামাল, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানীসহ অনেকেই।
এ সময় উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ‘কবি সাম্যের গান গেয়েছেন, মানবতার কথা বলেছেন, অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন। ফলে তিনি তার কবিতা ও গানে বহুমাত্রিক দর্শনের সম্মিলন ঘটিয়েছেন।’
উপাচার্য জানান, বঙ্গবন্ধু নিজেও নজরুলের গান, কবিতায় অনুপ্রাণিত হতেন। বঙ্গবন্ধুই তাকে জাতীয় কবি হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, নজরুল ইনস্টিটিউট, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় সাংস্কৃতিক জোট, আরবি কালচার সেন্টার, নজরুল চর্চা কেন্দ্র, নজরুল ভক্ত সমাজ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কবিকে শ্রদ্ধা জানায়।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি নজরুল। শৈশবেই স্বজন হারানো ‘দুখু মিয়’ দারিদ্র্য ও সব বাধা ঠেলে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা হয়ে ওঠেন।
১৯৪২ সালে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রমে বাকশক্তি হারান নজরুল। স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসুস্থ কবিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। নজরুল হন বাংলাদেশের জাতীয় কবি।