বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পয়লা ফাল্গুন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একই মাসে হওয়ায় ফুলের ব্যবসায় লাভের বড় মৌসুম ফেব্রুয়ারি। তবে করোনাভাইরাসের প্রভাবে এবার ফেব্রুয়ারিতে লাভের অঙ্ক নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বগুড়ার ফুল ব্যবসায়ীরা। লোকসানের ঝুঁকি কমাতে তারা ১ হাজার ২০০ পিস করে গোলাপ ফুল বেচার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ফুল বিক্রির এ সংখ্যাটা নির্ধারণ করে দিয়েছে স্থানীয় ফুল ব্যবসায়ী সমিতি।
সমিতির হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর এই মাসে বগুড়ার বাজারে গড়ে অর্ধ কোটি টাকার ব্যবসা হতো। সেখানে এবার তার ৪০ শতাংশ বেচাকেনা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী সমিতির ভাষ্য, অন্যান্য বছর প্রায় প্রতিটি দোকানি গড়ে ২ হাজার পিস গোলাপ বিক্রি করলেও এবার ১ হাজার ২০০ পিস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চাহিদা থাকলেও এর বেশি ফুল কোনো দোকানি বিক্রি করতে পারবেন না।
ফুল ব্যবসায়ীরা বলছেন, পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ক্রেতাদের বড় একটি অংশ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ব্যবসায় লাভের আশা করছেন না তারা। এর ওপর ফুলের দামও বিগত বছরের চেয়ে বেশি।
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় ফুলবাজার বগুড়া জেলা। উত্তরবঙ্গের দ্বারপ্রান্ত বগুড়া অতীতকাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ শহর। আবার এ জেলায় সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরও বেশি, যার জন্য এখানে ফুলের ব্যবহারও বেশি।
সমিতির হিসাব অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকার ফুল বগুড়া থেকে বাইরের জেলায় বিক্রি হয়। তবে গত বছরের করোনাভাইরাস এসব বাজার অনেকখানি নষ্ট করে দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ছয় মাস ব্যবসা বন্ধ ছিল। এ সময়টায় গড়ে প্রতি ব্যবসায়ী ২০ হাজার টাকার মতো লাভের পরিমাণ হারিয়েছে। এখন অনেকে মূলধন সংকটে রয়েছেন। সেই সংকট থেকে এবার ব্যবসায়ের ভরা মৌসুমেও ফুল তুলতে সাহস পাচ্ছেন না দোকানিরা।
বগুড়া ফুল বাজারের সমিতির হিসাব অনুযায়ী, ১৭ জন ব্যবসায়ী। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে প্রত্যেকে ১ হাজার ২০০ পিস গোলাপ ফুল তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে অন্যান্য ফুলের জোগান স্বাভাবিক রয়েছে।
শনিবার বিকেল তিনটার দিকে ফুল বাজারে ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের ফুল মোটামুটি রয়েছে। দোকানগুলোয় ক্রেতাও ঘুরছেন; তবে উপচে পড়া ভিড় নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি গোলাপ ৩০ টাকা এবং গোলাপের ব্যান্ড ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাজরা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, জারবেরার ব্যান্ড ৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ফুলের ঝুড়ির তোড়া ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, গোল তোড়া ৭০ থেকে ১০০ টাকা এবং চায়না বুটি ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্য ফুলের দামও রয়েছে তুলনামূলক স্বাভাবিক।
বাজারের শুরু থেকেই রয়েছেন বিউটি ফুল ঘরের মালিক অজিত কুমার। তিনি বলেন, ‘১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ হাজার ২০০ পিস গোলাপ তোলা হচ্ছে। এর বেশি তুলে বিক্রি না হলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। এমনিতে করোনার কারণে লোকসানে রয়েছি।’
ফুল বাজারের অবস্থা নিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও করতোয়া ফুল ঘরের মালিক লক্ষণ দাস বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের ব্যবসার মূল আইটেম থাকে গোলাপ। প্রতি বছর প্রত্যেকে গড়ে তিন হাজার পিস ফুল দোকানে তুলতেন। কিন্তু এবার তুলছে ১ হাজার ২০০ পিস। লোকসানের ঝুঁকি কমাতে সমিতি থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বগুড়ার ফুল বাজারে স্থানীয়ভাবে বেশ কিছু চাষি ফুলের একটি অংশ সরবরাহ করেন। এদের এক জন জান্নাতুল ফেরদৌস জনিও জানান ফুলের সংকটের কথা।
সাধারণত এই দিনে স্থানীয়ভাবে শুধু গোলাপ সরবরাহের চাহিদা থাকে গড়ে ২০ হাজার পিস। সেখানে বগুড়ার শাজাহানপুরের ফুলচাষিরা মাত্র ৬ হাজার পিসের চাহিদা অর্জন করেছেন।
জনি বলেন, আবহাওয়া বৈরি থাকায় ফুলের উৎপাদন কম হয়েছে। তবে বাজারের গোলাপের পরিমাণ বেঁধে দেয়ায় আমরাও ফুল সরবরাহে ধরা খেয়েছি।
ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জুয়েল হাসান বলেন, ‘সাধারণত এই মাসে ৫০ লাখ টাকার মতো ব্যবসা হয় ফুল বাজারে। এবার তার ৪০ শতাংশ বেচাকেনা হলেই আমরা খুশি।
‘শনিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত ব্যবসা হালকা গেছে। সন্ধ্যায় একটু বেচাকেনা বেড়েছে। ১৪ তারিখে এই পরিমাণ ৪০ থেকে বেড়ে ৬০ বা ৭০ শতাংশ হয়, তবে মনে করব ঘাটতি থেকে কিছুটা কাটিয়ে ওঠা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভালোবাসা দিবসে বেশি দামে গোলাপ কিনে বিক্রি করতে না পারলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই কারণে বাজার বিশ্লেষণ করে প্রতিটি দোকানে ১ হাজার ২০০ ফুল রেখে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। এটাকে আলাদাভাবে ভাবার কোনো অবকাশ নেই।’