বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আগামী নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটুক

  •    
  • ১১ আগস্ট, ২০২৫ ১৮:৫১

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত বিষয় হলো নির্বাচন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এমনকি এ তথ্য নিশ্চত হওয়া গেছে যে স্থানীয় সরকার নয়, বরং সংসদ নির্বাচন ঘিরে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে সাংবিধানিক এই সংস্থা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এবং সরকারের ভেতর নির্বাচন নিয়ে টানাপড়েন কাটছে না। এমনকি বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে- সেটিও অনুমান করা যাচ্ছে না। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কেমন হবে এবং নতুন রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে নির্বাচনে যাবে সে বিষয়ে কোনো পরিষ্কার ধারণা করা যাচ্ছে না। তরুণ এবং ছাত্রদের নেতৃত্বে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা শেষ করেছে। তারা কীভাবে মনোয়ন দিবে সে বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত কোনো কিছু না জানালেও কোনো কোনো গণমাধ্যম সূত্রে আমর জেনেছি যে এনসিপি ৩০০ আসনেই প্রার্থীতা দিতে পারে। অবশ্য ইতিমধ্যেই বেশ কিছু আসনে অনানুষ্ঠঅনিকভাবে তাদের প্রার্থীতা ঘোষণা করতে দেখো গেছে। আর বিএনপি এবং জামায়াত আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে- সে বিষয়ে স্পষ্ট মনে হচ্ছে। সাধারণ জনগণ চায় দেশে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন। দীর্ঘদিন জনগণ তাদেও অধস্থা নিয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকতে পারেনি। এই মুহূর্তে জনগণের আকাঙ্ক্ষাই হলো একটি গ্রহণযোগ্য এবং অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। এ জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ইতিবাচক থাকলে জনগণের আস্থার মাত্রাও অধিক ইতিবাচক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে জনগণের আস্থা অনেকাংশে বেড়ে যায়। এবারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় একটি বিষয় পরিষ্কার যে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা না থাকলে নির্বাচনে কোনোভাবেই বিজয়ী হতে পারবে না। কোনো প্রতীক বা দলের মনোয়ন কোনোভাবেই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মূল কার্ড হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ দেশে একটি বিরাট জনগোষ্ঠী তরুণ এবং সচেতন। তাদের বেশিরভাগ অংশই এবারই প্রথম ভোট দিতে যাবে। নির্বাচনের আগেই কোনো রাজনৈতিক দলকে হারিয়ে দেয়ার মানসিকতা থেকেও সকল রাজনৈতিক দলকে বের হয়ে আসতে হবে। একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, বেশ কিছু রাজনৈতিক দল মোটামুটি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনমুখী জনসংযোগের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। কাজেই নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের রোডম্যাপ এমন হওয়া উচিত যাতে দেশে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির মধ্য দিয়ে সকল সংকটের সুষ্ঠু সমাধান হয়।ইতোমধ্যেই আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক প্রার্থী তাদের প্রচারণায় তৎপর হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় সকল পর্যায়ের নেতারা প্রচারণায় মনোযোগ দিয়েছে। আবার জোট গঠনের বিষয়েও যথেষ্ট তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পরিস্থিতি এখন এমন হয়েছে যে, দেশের জনগণ সংস্কার প্রশ্নে নির্বাচন আটকে থাকুক এমনটি আর চায় না। নির্বাচন আগে নাকি সংস্কার আগে- এই প্রশ্নে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি এখন আর গুরুত্ব পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশের মানুষের যে প্রাণের আকাক্সক্ষা, ভোট কেন্দ্রে গিয়ে একটি ভোট দেওয়া, সেটা সত্যিকার অর্থে পূরণ হওয়ার চ্যালেঞ্জটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ কথা সত্য যে, নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, তাদের কাছে যে শক্তি, সাহস ও দক্ষতা থাকবে তা দিয়ে দেশের বিদ্যমান কাঠামোগত সমস্যার স্থায়ী সমাধান করার মানসিকতা থাকতে হবে। যেগুলো এ সরকারের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, সেগুলো নির্বাচিত সরকার করবে- এমন প্রত্যাশা অনেকেই গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। এখন আমরা দেখতে চাই যে, যেসব দল এবং প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেবে তারা সাধারণ জনগণের জন্য এবং দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে কী ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিতে যাচ্ছে। এমনকি কীভাবে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করা যায়, কীভাবে দেশের জনগণের চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করা যায়- সেসব বিষয়েও পরিষ্কার রোডম্যাপ আসলে ভোটারদের চিন্তা করতে সহজ হবে। তাছাড়া দেশের মানুষ বিভিন্ন অনলাইন জরিপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রকাশিত জনগণের মন্তব্যের মধ্য দিয়ে রাজনীতির বাস্তব চিত্র যাচাই করতে পারে। আর এসব চিত্র বাস্তবতার প্রতিফলন হিসেবে দেখা যায়। এখন মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্যে কিংবা তথ্যে রাজনীতিতে লাভবান হওয়া কঠিন। এক কথায় বলা যায়, ধোঁকাবাজির রাজনীতি এখন আর নেই। একথা আমরা সবাই জানি, রাজনীতিতে আস্থা-অনাস্থা এবং বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নটি অনেক বেশি। পাশাপাশি সন্দেহ-সংশয় তো আছেই। সাম্প্রতিককালে রাজনীতিবিদদের বক্তব্য শুনলে মনে হয় রাজনীতিতে আস্থা এবং বিশ্বাস বলতে কিছু নেই। সকালে এক ধরনের বক্তব্য বিকেলে আবার আরেক ধরনের বক্তব্য দেখা যায়। দিন না ঘুরতেই যদি বক্তব্য এবং মতামত পরিবর্তন ঘটে, তাহলে মাস এবং বছর গেলে তাদের অবস্থান কেমন হবে বা হতে পারে - সেটি অনুমান করা কঠিন কিছু না। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ইতিহাসে সংকট ও অনাস্থার পরিবেশ নতুন নয়। অনাস্থার বেড়াজাল থেকে রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই বের হতে পারেনি। গণতন্ত্রের নামে এবং গণতন্ত্র রক্ষার অঙ্গীকারে রাজনৈতিক দলগুলো বারবারই রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিককালে এমনই এক অনিশ্চিয়তার দোলাচলে ঘুরপাক খাচ্ছে বিদ্যমান রাজনীতি। ধারণা করা যাচ্ছে যে, দেশে আসন্ন নির্বাচনকেন্দ্রিক সুনির্দিষ্ট নিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি না হলে দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি ব্যাপকতর হতে পারে। এ জন্য একটি সুশৃঙ্খল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বর্তমানে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হলো নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া। আর এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সকল রাজনৈতিক দলই নিজস্ব কৌশল প্রয়োগে ব্যস্ত থাকবে- সেটি স্বাভাবিক। কৌশল প্রয়োগের দিক সকল দলই নিজ নিজ জায়গা থেকে সামনে এগিয়ে যাবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেরুকরণ ঘটবে- এটি অস্বাভাবিক কিছু না। মূলত নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য রাজনৈতিক মেরুকরণে পরিবর্তন হতে পারে। তবে কোনো দল যদি রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজ নির্বাচনী আয়োজনের পক্ষে কাজে লাগানোর সুযোগ পায় অথবা কাজে লাগায় তাহলে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সেটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে সামনে আসবে। আর নির্বাচন কমিশনও প্রভাবিত না হয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করলে নির্বাচন ও রাজনীতি দুটিই গ্রহণযোগ্য মাত্রা পাবে। আর এ কারণেই সকল পক্ষকে সমান সুযোগের আওতায় নিয়ে আসার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের। বাংলাদেশ সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যেরূপ কর্মচারীদের প্রয়োজন হইবে, নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনকে সেইরূপ কর্মচারী প্রদানের ব্যবস্থা করিবেন।’ কাজেই নির্বাচন কমিশনই প্রশাসনকে ঢেলে সাজিয়ে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে। মূলত নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের ভূমিকার ওপরই সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্পর্ক রয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনটির তিনটি চ্যালেঞ্জ দৃশ্যমান হতে পারে। প্রথমত: নির্বাচনে বেশিরভাগ জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; দ্বিতীয়ত: সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান, তৃতীয়ত: ভবিষ্যতে সাধারণ জনগণের ভোটে অংশ নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ এবং আস্থা সৃষ্টি করা। কারণ নির্বাচন যদি ভালো হয়, তাহলে নির্বাচনী রাজনীতিতে জনগণের আস্থা তৈরি হবে, আর ভালো না হলে তৈরি হবে স্থায়ী অনাস্থা। তবে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হলে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই নিজেদের পথের কাঁটা হওয়া থেকে দূরে সরে আসতে হবে। দেশ ও জাতির উন্নয়ন করতে হলে রাষ্ট্রক্ষমতার চাবি হাতে থাকা যেহেতু জরুরি সেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য থাকে ক্ষমতায় যাওয়া। ক্ষমতায় যেতে অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতে রাজনৈতিক দলগুলো এখন মরিয়া হয়ে উঠবে- এমনটাই স্বাভাবিক। তবে শিষ্টাচারসম্মত রাজনীতির জন্য জনপ্রতিনিধিদের গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি। আমাদের নিজেদের বিবেক এবং চিন্তা যদি পরিশীলিত বা মার্জিত না হয় তাহলে কোনোভাবেই ইতিবাচক প্রত্যাশা সফল হবে না। আমরা বাংলাদেশে যে কাঠামেই চয়েস করি না কেন কিংবা যেমন আইনই তৈরি করি না কেন, অথবা যেমন সংস্কারই হোক না কেন, এগুলো বাস্তবায়নের মূলে রয়েছে নাগরিক এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মানসিকতার পরিবর্তন। মানসিকতা পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই একটি গ্রহণযোগ্যমানের উদার নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। দেশের সাধারণ জনগণ দেশের রাজনীতির একটি গুণগত পরিবর্তন প্রত্যাশা করে। আর এ কারণে নতুন রাজনৈতিক দলসহ দেশে বিদ্যমান সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে বলব আপনারা যদি দেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চান, তাহলে মনে রাখবেন, রাজনীতি মানে উগ্রতা, প্রতিহিংসা নয়, রাজনীতি মানে শালীনতা, ভদ্রতা এবং সহনশীলতা। আর এসব গুণাবলির মধ্য দিয়ে জনগণের মনে স্থান করে নিতে হবে। রাগ, হিংস্রতা কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ দিয়ে রাজনীতি করলে কখনোই রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে না। আমরা সাধারণ জনগণ ভালো এবং নতুন কিছু প্রত্যাশা করি। আর এ জন্য পরিবর্তন শুধু মুখে নয় আচরণে এবং কার্যক্রমে প্রমাণ করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

লেখক: ড. সুলতান মাহমুদ রানা, অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

এ বিভাগের আরো খবর