বাতাসে পূজা পূজা গন্ধ। শুরু হয়ে গেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আকাশে সাদা মেঘ, দিকে দিকে কাশফুলের শুভ্রতা আর বাতাসের বদলে যাওয়া ঘ্রাণ- সবই বার্তা দিচ্ছে শারদীয় উৎসবের।
তাহলে এটা কোন মাস বাংলায়? শরৎ? না, হেমন্ত!
তবে যে এই ক্ষণে বাজলো শারদীয় দুর্গাপূজোর ঢাক? এবার কি দেরি হয়ে গেলো তবে?
না, পূজা ঠিক সময়েই হচ্ছে৷ শরৎ বা হেমন্ত মুখ্য নয়। মুখ্য তবে কী? ওই যে! বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের ভরাট কণ্ঠে আবৃত্ত মহালয়ার আগমনীর সেই ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে…’!
হ্যাঁ, দুর্গাপূজা শুরুর নির্ধারিত মাসটি আশ্বিন। মহালয়ার মধ্য দিয়ে আশ্বিনেই শুরু হয় দুর্গাপূজা, আগমনী যাকে বলে।
এই দুর্গাপূজা কত পুরনো? বা মানব সভ্যতায় ঈশ্বরবিশ্বাসীদের জন্য এই দেবীরূপের প্রকাশ কত প্রাচীন?
সর্বপ্রাচীন যে গ্রন্থে দেবী দুর্গার উল্লেখ পাওয়া যায় তা হচ্ছে ঋগ্বেদ। যদিও সেখানে সঙ্গতভাবেই দেবীর প্রতিমা পূজার কোনো বর্ণনা বা নির্দেশনা ছিলো না। মূলত বৈদিক ধর্মীয় দর্শন আর বর্তমানে প্রচলিত ধর্মীয় আচারাদির মাঝে নদীর স্রোতে মেশা পলির মতোই যোগ হয়েছে সহস্রাব্দের বিবিধ লোকাচার, বিশ্বাস, সংস্কার, কুসংস্কার ও সময়ের বা পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তায় উপলব্ধ নিদান, বিধান।
মূলত পূজা হিসেবে, দুর্গাপূজার সূচনা রাজা সুরথের হাত ধরে বলেই প্রাচীনতম তথ্যসূত্র পাওয়া যায়।
মার্কন্ডেয় পুরাণে রাজা সুরথকে দেবী দুর্গার পূজারী ও মর্ত্যে তার প্রচারক বলে উল্লেখ করা হয়।
মজার বিষয় হচ্ছে, এই সুরথ রাজার জয়কৃত রাজ্যের রাজধানী ছিলো স্বপুর (পুরাণে উল্লিখিত নাম), যা কিনা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরে অবস্থিত৷ বলা হয়, সুরথ রাজা যে বিপুলসংখ্যক পশু বলি দিতেন দুর্গাপূজায়, তা থেকেই বলিপুর নামের উদ্ভব যা কালের বিবর্তনে বোলপুর রূপ ধারণ করেছে।
দেবী মাহাত্ম্যের ১২তম এবং ১৫তম লাইন ‘তত: স্বপুরমায়াতো নিজেদেশাধিপোহভবৎ’ অনুসারে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরের বর্তমান ‘সুপুর’ (স্বপুর)-এর রাজা ছিলেন। এ থেকে আমরা দুটি বিষয় নিশ্চিত হতে পারি।
এক, দুর্গাপূজা প্রচলনের প্রাচীনতম তথ্যসূত্র বাংলা অঞ্চলেই এই দেবীর প্রথম উপাসনার সংবাদ দেয়।
দুই, বাংলা অঞ্চলের ভূমিকন্যা বলে গণ্য করা যায় এই দেবীরূপকে। সে কারণে বাংলা অঞ্চলের হিন্দুদের মাঝেই দুর্গাপূজা উদযাপনের মাত্রা সবচেযে অনন্য। শুধু তাই নয়, বাঙালির কাছে দুর্গাপূজা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়; দুর্গাপূজা আক্ষরিক অর্থেই বাঙালি হিন্দুর জীবনের, তার পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই সুরথ রাজা শাক্ত ছিলেন। শাক্ত হচ্ছে হিন্দু ধর্মীয় দর্শনের একটি মতবাদ বা শাখা। এরা শক্তির পূজারী। এবং সচরাচর শাক্তরা শক্তির প্রকৃত রূপ বলতে মাতৃশক্তিকেই জ্ঞান করে। এ অর্থে শাক্তরা মাতৃপূজারী, যে কারণেও সুরথ রাজার দেবী দুর্গার উপাসক হওয়ার প্রেক্ষাপট ছিলো।
এই সুরথ রাজা দুর্গাপূজা করতেন বসন্তকালে। সেটাই সঙ্গত ছিলো তৎসময়ে। কেননা হিন্দু ধর্মে পৌষ থেকে চৈত্র পর্যন্ত পূজাদি করার প্রচলন বিদ্যমান বহুলাংশে। কারণ হিন্দু জনপ্রিয় মতবাদগুলোর বিশ্বাস অনুযায়ী, এ সময়ে স্বর্গের দেবতারা জেগে থাকেন। অর্থাৎ এটি তাদের দিবাকাল, পৃথিবীর ছয় মাসে তাদের এক দিন হয়, আর অপর ছয় মাস তাদের এক রাত।
পরবর্তীতে রামায়ণে, বিশেষত এর বাংলা সংস্করণগুলোতে আমরা দেখতে পাই, যার মাঝে উল্লেখযোগ্য কৃত্তিবাসী রামায়ণ; যে অবতার পুরুষ রাম-রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার আগে দেবী দুর্গার বন্দনা করেন যুদ্ধে জয় প্রার্থনার জন্য। এ পূজা তিনি শরৎকালে করেন। যেটি অকাল ছিলো দুর্গাপূজার জন্য৷ এ কারণে এই পূজাকে অকালবোধন বলেও আখ্যায়িত করা হয়।
মূলত পূজার এই ধরনটিই বিবিধ কারণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে অধিক জনপ্রিয়তা পায়৷ আজ আমরা যে পূজা দেখতে পাই প্রতি বছর, তা মূলত সেই রামচন্দ্রের করা পূজারই বার্ষিক উদযাপন ও পালন।
তবে উল্লেখ থাকে যে, প্রতি বছর বসন্তকালেও কিন্তু দুর্গাপূজা হয়। ওই যে, রাজা সুরথের ধারা অনুযায়ী। তবে তা ততোটা ঘটা করে আজ আর পালিত হয় না। এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়।
এ তো গেল কেবল দুর্গাপূজা প্রচলনের ইতিহাস। কিন্তু যার প্রচলনের ইতিহাস এটি, তার আবির্ভাবের বর্ণনা আবার ভিন্ন। অর্থাৎ পুরাণ অনুসারে মহিষাসুর বধের সেই আখ্যান। যে আখ্যান অনুযায়ী, পূজা করার সূচনা সেই রাজা সুরথের আমলে এবং যে বিশ্বাসের পালন রামচন্দ্রও করেছেন রামায়ণমতে। পৌরাণিক সে আখ্যান এই যে, যখন মহিষাসুর নামক শক্তিশালী ও রূপ বদলে সক্ষম, পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে অত্যন্ত পারঙ্গম অসুর স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল জয় করে দেবতাদের অতিষ্ঠ করে তোলে এবং সব দেবতা তার কাছে পরাজিত হন তখন সব দেবতার সম্মিলিত ক্রোধের তেজস্বীতে প্রকাশিত হোন শক্তির এক তেজস্বিনী রূপ। সব দেবতা যাকে দেন নিজ নিজ অস্ত্রাদি, উপচার ও ব্যবহার্য। আর এসব একা ধারণ করতে সেই দেবী হয়ে ওঠেন দশভূজা। দশ হাতে তিনি ধারণ করেন খড়্গ, ত্রিশুল, কমন্ডলু, শঙখ, চক্র ইত্যাদি। বাহন হয় সিংহ৷
যুদ্ধে প্রবল শক্তিধর মহিষাসুরকে তিনি পরাজিত করেন। দেবতার বরে যে ছিলো সব দেব, যক্ষ, গন্ধর্ব ও পুরুষের অবধ্য। প্রবল অহঙ্কারে যে প্রমত্ত হয়ে তুচ্ছজ্ঞান করেছিলো নারী বা মাতৃশক্তিকে, যাদের থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য বর গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সে বোধ করেনি। তাই তো দেবী দুর্গাকে সামনে দেখেও সে হেসে কটাক্ষ করতে শুরু করে। তাচ্ছিল্য করে ও ঘরে ফিরে যেতে বলে। কিন্তু তৎপরবর্তীতে শোচনীয়ভাবে যখন সে মাতৃশক্তির কাছে পরাজিত ও আহত হয় তখন মৃত্যুকালে সে-ই আবার মা দুর্গার কাছে শরণাগত হয় এবং প্রার্থনা করে মায়ের পূজার আগে যেন তার পূজাও হয়৷ আর এ জন্যই প্রতি বছর দুর্গাপূজায় দেবী দুর্গার পূজার প্রথম আনুষ্ঠানিকতাই শুরু হয় মহিষাসুরের পূজার মধ্য দিয়ে।
এটিই সংক্ষেপে দেবী মাহাত্ম্য, অর্থাৎ ঈশ্বরের এই দেবী রূপের লীলামাহাত্ম্য হচ্ছে এই বর্ণনাটিই। কিন্তু এটিকে আবার বিশ্লেষিত করা যায় নানা মতবাদ দিয়ে, যা এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য নয়। তবে প্রাসঙ্গিক বিধায় এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে হিন্দু ধর্মের বহমান নানা ধারা বা মতবাদের সবাই প্রচলিত বিশ্বাসের সব ক্ষেত্রে ঐকমত্য না হলেও প্রতিটি কষ্টিপাথরে নিজস্ব দর্শনানুযায়ী বিশ্লেষণের পরও সব মতবাদই ধারণ করছেন এমন এক সত্তা বা কল্পনা হচ্ছেন দেবী দুর্গা।
দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুর সবচেয়ে বড় উৎসব। আরও সহজ ভাষায় বললে বলে ফেলতে হয়- বাঙালি হিন্দুর পরিচয় আর দুর্গাপূজা একে অপরের সমান্তরাল।
নিরপেক্ষভাবে বললে, শুধু বাঙালি হিন্দুই নয়, গোটা বাঙালি জাতির ব্যাপ্তির দিক থেকে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও উৎসবমুখর উদযাপনটির নাম দুর্গাপূজা।
২০২১ সালে ইউনেস্কো একে ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ অফ হিউম্যানিটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
ইউনেসকোর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘দুর্গাপূজাকে ধর্ম ও শিল্পের সর্বজনীন মিলন ক্ষেত্রের সর্বোত্তম উদাহরণ হএসবে দেখা হয় এবং সহযোগী শিল্পী ও ডিজাইনারদের জন্য একটি সমৃদ্ধ ক্ষেত্র হিসেবে দেখা হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশের এক প্রান্তের হিমালয়-কন্যা নেপালে যার নাম দাশাইন, আর বিপরীতের শেষতম প্রান্তে কোথাও বা তার নাম নবরাত্রি (তামিলনাড়ু) কোথাও বা কুল্লু দাশেরা (মাইশোর, কর্ণাটক ইত্যাদি)।
আর মাঝের পুরো ভূমিটি জুড়ে এই উদযাপন বর্ণে, গন্ধে, ছন্দে মাতিয়ে তোলে; রাঙিয়ে তোলে সমগ্র ভারতবর্ষকে নয়টি দিন জুড়ে। আর আজ তো বিশ্বায়নের যুগে প্রবাসী হিন্দুদের কারণে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে তা নানা ধরনে, নানা আয়োজনে।
দুর্গাপূজা শুধু ব্যাপ্তিতে নয়, বৈচিত্র্যেও অনেকটা বিস্তৃত। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ভূখণ্ডেও এক দুর্গাপূজায় যে পরিমাণ ভিন্নতা দেখা যায়, বাস্তবে পশ্চিমা মহাদেশগুলোতে ততো বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়ার মতো কোনো উপলক্ষ অত্যন্ত দুষ্কর৷ এটি প্রাচ্যের সাংস্কৃতিক উর্বরতার প্রমাণ নির্দেশ করে।
বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে যেমন প্রতিমা বা প্যান্ডেলের ধরণ দেখা যায়, শতখানেক কিলোমিটার দিক বদলাইলেই উত্তর-পূর্বের সিলেট অঞ্চলে তা সম্পূর্ণ ভিন্নতর। আর যদি যাওয়া হয় দক্ষিণবঙ্গের দিকে, তবে দেখা মিলবে আড়ম্বরের অন্যতর রূপ।
আধ্যাত্মিক দিক থেকেও দুর্গাপূজার আছে এমন কিছু অনুষঙ্গ যা বর্তমান বিশ্বের প্রচলিত ধর্মীয় আচারাদির মধ্যে অত্যন্ত স্বকীয়। দুর্গাপূজাই খুব সম্ভবত এখন অবধি চলমান সবচেয়ে বড় চর্চা যেখানে মানুষের পূজা সরাসরি হয়। দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিনে কুমারী পূজা হয়। যেখানে একটি নাবালিকা কন্যাশিশুকে দেবীরূপে পূজিত করা হয়। পূজার এই দিনের সব আনুষ্ঠানিকতা এই উপলক্ষকে ঘিরেই আয়োজিত ও পালিত হয়।
এছাড়াও দুর্গাপূজাকে ঘিরে লৌকিক যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তাও অনন্য৷ যেমন, পুরো ভারতবর্ষে পূজা হয় দেবী দুর্গার, যিনি মহিষাসুরকে বধ করেছেন। কিন্তু বাঙালি তার লোকাচারের সঙ্গে মিলিয়ে একেও বানিয়ে বসে আছে ঘরের মেয়ের নাইওর আসার আখ্যান। অর্থাৎ বাঙালি পূজার পাঁচটা দিনকে গণ্য করে এভাবে যে, বাড়ির মেয়ে পার্বতী (দুর্গা) তার পূত্র-কন্যাসহ নাইওর এসেছেন পিতৃগৃহে।
আগে সম্পন্ন বাঙালি গৃহস্থ তার বাড়িতে নাইওর আসা কন্যাকে সমাদর করতেন, আপ্যায়ন করতেন পাঁচ দিন ধরে; হুবহু সেভাবেই বাঙালি দুর্গাপূজায় নিজস্ব সেসব আচার পালন করে। যেমন অষ্টমীতে নিরামিষ রান্না করে খাওয়ানো’ নবমীতে মাছ-ভাত আর পিঠাপুলিতে একদম থালা সাজিয়ে আপ্যায়ন। দশমীতে শাঁখা-সিঁদুরে বাড়ির মেয়েকে সাজিয়ে বিদায় জানানো। প্রতিমা বিসর্জনের যে দৃশ্য সাধারণ্যে দৃশ্যমান তা কেবল মাটির প্রতিমার বিসর্জনই সোজা বাংলা। মূল বিসর্জন হয় ঘট বিসর্জন, যা দৃশ্যমান প্রসেশনের আগেই হয়। প্রসেশনের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মূলত আধ্যাত্মিক কোনো মাহাত্ম্য নেই। এটি নিছক পূজা শেষে পুজার উপাচারাদি, প্রতিমা ইত্যাদির নদীতে বিসর্জন।
দুর্গাপূজার অর্থনৈতিক বা অন্যান্য প্রভাবও পড়ে ভারতবর্ষে ব্যাপকভাবেই। ২০১৩ সালের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বছরে ২৫ হাজার কোটি রুপির বাজার সৃষ্টি হয় কেবল দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে এবং এই বাজারের বার্ষিক বৃদ্ধির হার তখন ছিল ৩৫ শতাংশ। এছাড়া কুমার, বিশেষ প্রকৃতির তাঁতী ইত্যাদি শ্রেণীর পেশা টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম এই দুর্গাপূজা।
তবে অর্থনৈতিক গুরুত্ব, সামাজিক গুরুত্ব ইত্যাদিকে ছাপিয়ে যায় যে জিনিসটি সেটি হচ্ছে এই পূজার রাজনৈতিক গুরুত্ব।
দুর্গাপূজা কোনো বিচিত্র কারণে বঙ্গীয় জনপদে সব সময়ই রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। বিশেষত এ অঞ্চলে সার্বজনীন দুর্গাপূজার প্রাতিষ্ঠানিক প্রকাশ বিস্তৃতি পায় ১৬ শতকে। তারপর থেকে দুর্গাপূজা সব সময়েই ব্যবহৃত হয়েছে রাজনৈতিক উপলক্ষ হিসেবেও। বাঙালির বিদ্রোহ, বিপ্লব ও বোমাবাজির রাজনীতি থেকে তোষামোদ ও চাটুকারিতার রাজনীতি- সর্বত্রই দুর্গাপূজা প্রবল গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ হয়ে দেখা দিয়েছে বার বার, বহুবার।
যেমনটা দেখা যায় ব্রিটিশ আমলে৷ ইংরেজবিরোধী জাতীয়তাবাদ জাগিয়ে তোলার জন্য হিন্দু নেতারা যুবসমাজকে এক করা ও স্বাচ্ছন্দ্যে কর্মকাণ্ড চালানোর অন্যতম উপলক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন দুর্গাপূজাকে।
এমনকি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসও সে সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পূজা মণ্ডপে নিয়মিত উপস্থিত হয়ে পূজার শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতেন বিপবী জাতীয়তাবাদের স্ফুলিঙ্গ।
বিপ্লবী অতীন্দ্রনাথের সিমলা ব্যায়াম সমিতির পূজায় অষ্টমীর দিনটি পালিত হতো বীরাষ্টমী হিসেবে৷ এদিনে সারা বছরে রপ্ত করা সব কসরৎ দেখাতে ব্যায়ামবীরেরা উপস্থিত হতেন, আয়োজন হতো কুস্তি, অসিখেলা, লাঠিখেলা, ছুরিখেলার। শপথ পাঠ ইত্যাদিও হতো। এই ব্যায়াম সমিতি সুভাষচন্দ্রকে পূজা আয়োজক কমিটির সভাপতিও করেছিলো।
তবে দিনশেষে ধর্মীয় আচার বা উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য যতটা না অর্থনীতি বা রাজনীতিকে প্রভাবিত করে, তার চেয়ে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ এর সামাজিক প্রভাব।
আর সে জায়গায় নিঃসন্দেহে বাঙালির দুর্গাপূজা এখনও অসাধারণ এক উপলক্ষ। আজও বাঙালির ধর্ম-নির্বিশেষে আনন্দে ভাসার দিনগুলোর মাঝে পাঁচটি দিন আসে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে। মেলা বা নাটিকা, সঙ্গীতায়োজন ইত্যাদি কেবল হিন্দুদের নয়, পুরো জাতির বিনোদনের একটি উৎস হয়ে ওঠে। পূজার আয়োজনে, বিশেষ করে বাংলাদেশে মুসলিমদের আন্তরিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আক্ষরিক অর্থেই এটি ভ্রাতৃত্ববোধকে প্রতি বছর একবার করে মজবুততর করে।
তাই এখনও বাংলাদেশে দুর্গাপূজা শারদোৎসব। এবং নিঃসন্দেহেই তা থাকবে আবহমান।
সেই শারদোৎসবের মঙ্গলদীপ উদ্ভাসিত করুক, নির্মল করুক, দূর করুক অজ্ঞানতার অন্ধকার। ঋত, ঋদ্ধ হোক বাংলাদেশ।