বিশ্বকাপে ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান যেভাবে বাংলাদেশ দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, চারদিকে তার ভূয়সী প্রশংসা হচ্ছে। তার অসাধারণ নেতৃত্বগুণ, উজ্জ্বল পারফরম্যান্স, জয় পাওয়ার যে তাড়না, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বড় ম্যাচেও সাকিবের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকবে আশা করি।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়ায় এখন প্রবল আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ দল। আর এ আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দিতে পারলে বিশ্বকাপের মঞ্চে আরেকটি ইংলিশবধের গল্প রচনা হয়ে যাবে আজ।
নিউজিল্যান্ডের কাছে প্রথম ম্যাচ হেরে এমনিতেই চাপে রয়েছে ইংলিশরা। হারের ধকল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে তারা। তবে এ অবস্থায় ইংল্যান্ডকে আরেকটি ধাক্কা দেয়ার সুযোগ এসেছে টাইগারদের সামনে।
ধর্মশালার নৈসর্গিক সুন্দর স্টেডিয়ামে গত ম্যাচটি খেলেছে টাইগাররা। আজ আবার একই মাঠে নামবে তারা। এরই মধ্যে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন সাকিবরা। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে ইংল্যান্ড। এই উইনিং গ্রাউন্ডে ছন্দ ধরে রাখার প্রত্যয় বাংলাদেশ শিবিরে।
তবে জয় পাওয়ার যে অধিক খিদে ইংলিশদের রয়েছে, সেটি গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জস বাটলারের কথায় স্পষ্ট ফুটে ওঠে। ধর্মতলার আউটফিল্ডকে বাজে বলেছেন ইংলিশ ক্যাপ্টেন। সতর্ক হয়ে মাঠে নামার পরামর্শ তার।
আউটফিল্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আউটফিল্ড ভালো না হলে খেলোয়াড়দের ইনজুরিতে পড়ার শঙ্কা থাকে। তবে দুই দলকেই সতর্ক হয়ে খেলতে হবে।
প্রতি ম্যাচেই ভিন্ন কৌশল, ভিন্ন পরিকল্পনা, ভিন্ন চিন্তা-ভাবনা, ভিন্ন মানসিকতা থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। আর এটাই হয়ে থাকে। একইভাবে আজ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ব্যর্থ করার জন্য অন্যরকম ছক করে মাঠে নামছে সাকিব বাহিনী।
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ও বোলিং সাম্রাজ্য অনেক শক্তিশালী। তাদের ব্যাটিং গভীরতা যেমন, বোলিংও বিধ্বংসী। তাদের নয় নম্বর ব্যাটার পর্যন্ত জ্বলে উঠতে পারেন। ব্যাটিং লাইনআপ অনেক ব্যালান্সড। এটি ইংল্যান্ড দলের বিশেষত্ব। তাদের বাঁহাতি ব্যাটারের চেয়ে ডানহাতির সংখ্যা বেশি। এটি বাংলাদেশের বাঁহাতি বোলারদের জন্য কমফোর্ট জোন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বোলিংয়ে শক্তি বাড়ানোর কৌশল নিতে পারে বাংলাদেশ। অপশন হিসেবে আছেন নাসুম আহমেদ ও শেখ মাহাদী।
আগের ম্যাচে ব্যাটিং লাইনআপ শক্ত করেই খেলেছেন সাকিবরা। বাড়তি বোলার নিলে তখন ব্যাটিংয়ে শক্তি কমে যাবে। সেটিও মাথায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একাদশ থেকে বাদ পড়তে পারেন। তবে ব্যাটিং লাইনআপ ঠিক রেখে ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন সাজানো যায়। কেননা রীতিসিদ্ধ যে নিয়মে এই ডানহাতি ও বাঁহাতির ব্যাপারটি সবসময় সামনে আসে, সেটিকে মিথই বলব। কেননা ডানহাতি ব্যাটারের ক্ষেত্রে ডানহাতি বোলারও কার্যকর হতে পারেন। আবার বাঁহাতির ক্ষেত্রে বাঁহাতি বোলারও সফল হতে পারেন। এটাই হলো বোলিং বৈচিত্র্য।
আমি মনে করি, এ ডানহাতি ও বাঁহাতির কম্বিনেশনে ইংল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। তবে একটি জায়গায় দুর্বল সাকিবরা। তাদের একজন লেগ স্পিনার নেই। এদিক দিয়ে আদিল রশিদ ইংল্যান্ডকে এগিয়ে রাখতে পারেন। তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে স্বস্তির জায়গায় দুর্দান্ত পেস বোলিং ইউনিট। তাসকিন, মোস্তাফিজ, শরিফুলদের বৈচিত্র্যময় বোলিং ইংলিশদের বেকায়দায় ফেলবে। তবে বোলিংয়ের তুলনায় ব্যাটিংয়ে দুর্বল বাংলাদেশ। উদ্বোধনী ম্যাচে অস্বস্তি কাটেনি।
যার ব্যাটের প্রতি আস্থা রাখা হয়েছিল, সেই লিটন দাসই ফর্মে ফিরতে পারছেন না। নতুন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমও বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে খেলার চাপ কাটিয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। অভিজ্ঞ তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে উদ্বোধনী জুটি হতাশ করে যাচ্ছে।
ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালো করতে পারলে বড় কিছু আশা করা যায়। অবশ্য ইনফর্ম ব্যাটার শান্ত, মিরাজরা দলের অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারেন। ব্যাটাররা যদি স্কোরবোর্ডে ডিফেন্স করার মতো রান জমা করতে পারেন, তা হলে বোলাররা বাকি কাজটুকু করে দিতে পারবেন।
আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং আর দুর্দান্ত বোলিংই ইংল্যান্ডকে হারানোর জন্য যথেষ্ট হবে। আজ সব মিলিয়ে ইংলিশদের বিপক্ষে আরেকটি জয় উপহার দেবে বাংলাদেশ, এমন আশা-আকাঙ্ক্ষা-প্রতীক্ষা-লালিত স্বপ্ন সকলের।