সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানুষের নজর কাড়ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এসব উন্নয়ন-সাফল্যের খবর ব্যাপকভাবে প্রচারের নির্দেশনাও রয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর এক বছরও বাকি নেই। ইতোমধ্যে সেই ভোটের হাওয়া রাজনৈতিক অঙ্গনে বইতে শুরু করেছে। সরকারের এসব উন্নয়ন-সাফল্যের খবর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে একটা বাড়তি রাজনৈতিক সুবিধা দেবে নিঃসন্দেহে।
এমন বাস্তবতায় সরকারের এসব উন্নয়ন-সাফল্য বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং তাদের মতানুসারী সুশীলদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করেছে।
করোনা মহামারি এবং পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে এক ধরনের অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করেছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেমে নেই।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিতে।
দারিদ্র্য নিরসন, আয়-বৈষম্য হ্রাস, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি খাত বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও লেনদেনে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, টেকসই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে কাজ চলছে।
কিন্তু বিএনপি সরকারের এসব পদক্ষেপকে ইতিবাচকভাবে নিতে পারছে না। দলটি ভাবনা, সামনে ভোটের লড়াইয়ে সরকারের এসব উন্নয়ন জনগণের মাঝে তাদের অবস্থান আরও দুর্বল করে দিতে পারে। যেকোনোভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার তাদের যে চেষ্টা তাতে এই উন্নয়ন বড় বাধা হিসেবে দেখছে দলটি।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দেশে জঙ্গিদের উত্থান হয়েছে। বাংলাভাই, হরকাতুল জেহাদসহ আফগানিস্তান ফেরত জঙ্গিদের হুঙ্কার এবং একযোগে সারাদেশে বোমা হামলায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত নেকা মতিউর রহমান নিজামী ও মুজাহিদকে মন্ত্রী বানানো হয়েছে। রাজাকার আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে বসানো হয়েছে রাষ্ট্রপতির চেয়ারে।
চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্রের চালান ধরা পড়া, দেশের মাটিতে বিদেশি সন্ত্রাসীদের লালনপালন ও অস্ত্র সরবরাহ, তারেক রহমানের হাওয়া ভবন থেকে বিকল্প প্রশাসন পরিচালনা, রাষ্ট্রীয় নানা কাজে কমিশন নেয়ার অভিযোগও কম আলোচিত হয়নি।
জোট সরকারের সময়ে সার, ডিজেল ও বিদ্যুৎ সংকট ছিল বরাবরের চিত্র। দুর্নীতিতে ৫ বার বিশ্বের এক নম্বর দেশ হওয়ার তকমাও জুটেছে।
দ্বাদশ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতায় থাকাকালে এসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ড বিএনপিকে ভাবাচ্ছে। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার চালানোর মাধ্যমে জনগণের কাছে নিজেদের অতীতটা আড়াল করার একটা চেষ্টা দলটির রয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে তাদের জোট ভেঙে যাওয়ার প্রকাশ্য প্রচারও সেই চেষ্টারই অংশ। যদিও ভেতরগতভাবে দুই দলের মধ্যে সেই গাঁটছড়াটা রয়েই গেছে।
পক্ষান্তরে টানা তিন দফা ক্ষমতায় আসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নানামুখী সংকট দূরীকরণে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে ব্যর্থতা থাকলেও সাফল্যের তুলনায় তা নিতান্তই গৌণ।
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশ উৎপাদনের সক্ষমতা দেখাচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী মিডিয়ায় সেসব প্রচারও হচ্ছে। বাংলাদেশের মৌলবাদ-জঙ্গি দমনের সফলতা নিয়ে এখন বিভিন্ন দেশেই আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত হতে চলেছে। গভীর সমূদ্রবন্দর, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, এয়ারপোর্ট, মেট্রো রেল, পাতালরেল- এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও আলোচনায় আসছে।
সরকারের এতো সব উন্নয়নের বিপরীতে নিজেদের দুর্বল অবস্থানটা বুঝতে পেরে বিএনপি এখন দেশ-বিদেশে সরকারবিরোধী প্রচারণায় মরিয়া। তা করতে গিয়ে দলটি দেশবিরোধী অবস্থান নিতেও দ্বিধা করছে না।
দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি থামাতে এখন তারা বিদেশিদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে গোপন চিঠি দিচ্ছে। তাদের সেসব অপচেষ্টা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় মিডিয়াও তাদের দিক থেকে অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ অবস্থায় তারা ভর করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
রাজনৈতিক প্রচারে বিএনপির নেতারা দেশে গণতন্ত্রের কথা বলতে শুরু করেছেন। অথচ তারা স্বৈরশাসনের মাধ্যমে দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছিল। তাদের দলের মধ্যেও গণতন্ত্র নেই। বিএনপির গঠনতন্ত্রেই দুর্নীতিকে বৈধতা দেয়া হয়েছে।
নেতাদের মিথ্যাচার ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপির ইমেজ আজ ধ্বংসের পথে। এ অবস্থায় দলটি এদেশের মুসলিম লীগ ও জাসদ-বাসদের মতো অস্তিত্ব হারানোর শঙ্কায় পড়েছে।
এমন বাস্তবতায় বিএনপি-জামায়াত ও তাদের মতানুসারী সুশীলরা সরকারের বিরুদ্ধে নানামুখী প্রচার চালিয়ে নিজেদের দুর্বলতা আড়ালের চেষ্টা করছেন। সরকারের উন্নয়ন-সাফল্য থেকে জনগণের দৃষ্টি ফেরাতে তারা মনগড়া দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলছেন।
আপাতদৃষ্টিতে তাদের সেই চেষ্টা ফলদায়ক হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে হচ্ছে।
লেখক: সাংবাদিক