বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সশস্ত্রবাহিনী আমাদের গর্ব

  • খায়রুল আলম   
  • ২০ নভেম্বর, ২০২২ ২২:৪৯

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান স্বাধীনতার স্থপতি। আর স্বাধীনতা জাতীয় জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ২৩ বছর (১৯৪৮-১৯৭১) বাঙালি জাতিকে স্বাধিকার আদায়ে উদ্বুদ্ধ এবং প্রস্তুত করে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭১ সালের এই দিনে অর্থাৎ ২১ নভেম্বর আমাদের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যগণ সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ সূচনা করেন। এর ফলে আমাদের বিজয় ত্বরান্বিত হয়। জাতির ইতিহাসে তাই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাষ্ট্রনায়ক। তিনি জানতেন, একটা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শুধু সশস্ত্র বাহিনী নয়, বৃহত্তর জনগণ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে একাত্মতা অপরিহার্য। সে জন্যই বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার সেনাবাহিনী হবে জনগণের সেনাবাহিনী। দুয়ের মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকবে না।’

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেন। রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঐতিহাসিক এ ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে মুক্তির আহ্বান জানিয়ে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।’ তিনি নির্দেশ দেন ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো, যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’

বঙ্গবন্ধুর ডাকে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। মুজিবের নেতৃত্বে বাঙালি জাতির এই জাগরণে ভীত ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারি করেন, শুরু করেন অত্যাচার, নির্যাতন, খুন।

২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ মার্চ মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে অর্থাৎ ১২টা ২০ মিনিটে ইপিআরের ওয়্যারলেস এবং টেলিগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর দিনটি আমাদের কাছে একটি আবেগের নাম। কারণ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল আজকের স্বাধীনতা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণকে প্রতিহত ও পরাজিত করা কখনোই সম্ভব হতো না, যদি না সঠিক রণকৌশল অবলম্বন করা হতো। আর সে কৌশলের অন্যতম একটি ছিল ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তিন বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণ।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় এই দিনটি। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পর বাংলাদেশ ভারতের সাহায্য নেয়। এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। খুব তাড়াতাড়ি ভারত-বাংলাদেশের সম্মিলিত যৌথ বাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ঢাকা শহরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বীজ বপন হয় ৭ মার্চের ভাষণ এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে। বাংলার মানুষ পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে পরাধীন বাংলাকে মুক্ত করার জন্য। মুক্তিযুদ্ধে অগণিত মানুষ তাদের প্রাণ বিসর্জন দেয় দেশকে পাকিস্তান থেকে মুক্ত করার জন্য। বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার পর হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা শুরু হলে সর্বপ্রথম সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাঁচটি ইউনিট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ ও অন্য অনেক বাঙালি সদস্য। এগিয়ে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত বাঙালি নাবিক ও নৌ অফিসার, সেনা ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সর্বস্তরের মুক্তিপাগল হাজার হাজার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, যুবক। মুক্তিসংগ্রাম রূপ ধারণ করে সশস্ত্র সংগ্রামের।

এ ক্রান্তিলগ্নে পাকিস্তানি শাসকদের স্বপ্ন নস্যাৎ ও তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন দেখা দেয় একটি সুসংগঠিত সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করার।

২৫ মার্চের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল ৪ এপ্রিল এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল তেলিয়াপাড়া। এটি সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) মাধবপুর থানার অন্তর্গত। এটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট। এখানে মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রথম বৈঠক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে আসেন কর্নেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী এবং পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে কর্মরত বাঙালি অফিসাররা।

১৭ এপ্রিল ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপরাষ্ট্রপতি এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে মেহেরপুরের মুজিবনগরে ‘বাংলাদেশের প্রথম সরকার’ গঠিত হয়। সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সদস্য, ইপিআর, পুলিশ, আনসারসহ ছাত্র, শ্রমিক, জনতা তথা বীর বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

সর্বাধিক কার্যকরী এবং নিয়মতান্ত্রিক যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সামরিক নেতৃত্বের প্রয়োজন বোধ করে সরকার এবং এ লক্ষ্যে কার্যকর অবকাঠামো গঠন করতে কর্নেল এমএজি ওসমানীকে (পরবর্তীকালে জেনারেল) কেবিনেট মিনিস্টারের মর্যাদাসহ বাংলাদেশ ফোর্সেসের প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। এ ছাড়া কর্নেল (অব) এম এ রবকে বাংলাদেশ ফোর্সেসের চিফ অব স্টাফ এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিযুক্তি দেয়া হয়।

কর্নেল ওসমানী মুক্তিবাহিনীর সকল বিচ্ছিন্ন সংগঠনকে কেন্দ্রীয় কমান্ডের আওতায় নিয়ে আসেন এবং ফোর্সেস সদর দফতর থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে অপারেশনাল নির্দেশনা প্রণয়ন করেন। এ বিরাট বাহিনীকে সাহায্য, সহযোগিতা, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, জনবল সংগ্রহ এবং সাধারণ জনগণকে দেখাশোনা করার জন্য ১৯৭০-এর নির্বাচনে নির্বাচিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নেতৃত্বে সাব সেক্টর-ক্যাম্প পরিচালিত হয়।

এই স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী একত্র হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যেসব বাংলাদেশি আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছিলেন, তারাও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুক্ত হন স্বাধীনতা সংগ্রামে। দেশটিকে ১১টি সেক্টর বিভক্ত করে এই স্বাধীনতা সংগ্রামে শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, কৃষক-শ্রমিক-জনতা এবং সেনাবাহিনী একত্র হয়ে কাজ করে। মুক্তিযুদ্ধের সম্মিলিত প্রয়াস শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর আজকের এই দিনে।

স্থল সেনাদের পাশাপাশি নৌ সেনাদেরও শক্তিশালী করে তুলেছিল বাংলাদেশ। বিএনএস পদ্মা ও পলাশ নামের দুটি যুদ্ধ জাহাজ ছিল। এই দুটি যুদ্ধ জাহাজের মাধ্যমে তারা পাকিস্তান থেকে সেনাদের জন্য আসা অস্ত্র ও র‌্যাশন আটকাতে চট্টগ্রাম ও মোংলা এই দুটি প্রধান বন্দরকে কব্জা করতে সক্ষম হয়েছিল।

১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বিমানবাহিনী গড়ে তোলা হয়। যেসব বাঙালি বায়ুসেনা যুদ্ধের আগে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের এই বাহিনীতে যুক্ত করা হয়। অনেকেই ভলান্টারি অবসরপ্রাপ্ত হিসেবে তৎকালীন বায়ু সেনার সঙ্গে যুক্ত হন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেন। তারাই বাংলাদেশের সর্বপ্রথম বিমানবাহিনী প্রস্তুত করেন। সম্মিলিত বাহিনীর সব কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর আজকের এই দিনে। তাইতো দিনটিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার জন্যই পালন করা হয় আর্মড ফোর্সেস ডে বা সশস্ত্র বাহিনী দিবস।

আক্রমণের সম্মিলিত ফলশ্রুতিতে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ কমান্ডের নেতৃত্বে ৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সম্পূর্ণ পরাস্ত করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হয়। এই বিজয় ছিল ১৯৭১ এর ২১ নভেম্বর বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং আপামর জনসাধারণ একযোগে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যে সমন্বিত আক্রমণ, তারই ফসল।

আমাদের সেনাবাহিনীর জন্ম হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্র, মুক্তিযুদ্ধের সময়, যে যুদ্ধটি ছিল জনযুদ্ধ। সে যুদ্ধের মহানায়ক ও সুপ্রিম কমান্ডার ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজকে যারা সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন, তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্ম।

বঙ্গবন্ধুর সাহসী এবং দূরদর্শী নেতৃত্বে ভারতীয় মিত্র বাহিনী আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শেষে মাত্র তিন মাসের মধ্যে ১৭ মার্চ ১৯৭২ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরে যায়, যা ইতিহাসে বিরল। বিশ্বে যুদ্ধের ইতিহাসে মিত্রবাহিনী অধিকৃত অঞ্চল থেকে ফেরত আসে না কখনো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী নিয়মতান্ত্রিকভাবে ফেরত যায়। এমনকি রাশিয়ান বাহিনীও ফিরে গিয়েছিল। আমাদের মুক্তি সংগ্রাম ছাড়াও যুদ্ধপরবর্তী দেশ গঠনে, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং বিদেশে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে এই সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা আমাদের দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে বারবার।

শত প্রতিকূলতা, অর্থনৈতিক সংকট, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগড়ার পর পরই বঙ্গবন্ধু তার জীবনের আকাঙ্ক্ষা, সেনাবাহিনীর মর্যাদার প্রতীক বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম ব্যাচের অফিসারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু স্বয়ং হাজির হয়ে তার মনের কথা ক্যাডেটদের কাছে জাতির পিতার অবস্থান থেকে ব্যক্ত করেন। ক্যাডেটদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুর সেই অমূল্য ভাষণের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরছি। বঙ্গবন্ধু ভাষণে বলেছিলেন:

‘আজ সত্যিই গর্বে আমার বুক ভরে যায়। বাংলাদেশের মালিক আজ বাংলাদেশের জনসাধারণ। সে জন্যই সম্ভব হয়েছে আজ আমার নিজের মাটিতে একাডেমি করা। আমি আশা করি, ইনশা আল্লাহ এমন দিন আসবে, এই একাডেমির নাম শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নয়, সমস্ত দুনিয়াতে সম্মান অর্জন করবে।’

এ কথার মাধ্যমে বোঝা যায়, সেনাবাহিনী নিয়ে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ পরিকল্পনা ছিল এবং ভবিষ্যতে তিনি একটা মর্যাদাপূর্ণ সেনাবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধু আবেগের সঙ্গে বলেন:

‘পাকিস্তানিরা মনে করত বাঙালিরা কাপুরুষ, বাঙালিরা যুদ্ধ করতে জানে না। পাকিস্তানি সৈন্যরা বাংলাদেশের মাটিতে দেখে গেছে কেমন করে বাঙালিরা যুদ্ধ করতে পারে।’

ভাষণের শেষাংশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন:

‘মনে রেখো, তোমাদের মধ্যে যেন পাকিস্তানের মেন্টালিটি না আসে। তোমরা পাকিস্তানের সৈনিক নও, তোমরা বাংলাদেশের সৈনিক।’ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আজও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সুশিক্ষিত, পেশাদার ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর কোনো বিকল্প নেই। শুধু স্বাধীনতাযুদ্ধ ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমই নয়, সশস্ত্র বাহিনী দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম রক্ষা করে দেশের অখণ্ড সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছে। দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে সশস্ত্র বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আজ অনস্বীকার্য। জাতির প্রয়োজনে যে কোনো কঠিন দায়িত্ব পালনে সশস্ত্র বাহিনীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা অনন্য।

বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা ছাড়াও দেশের অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ছিন্নমূল মানুষের জন্য বাসস্থান তৈরি করা এবং অন্যান্য জনকল্যাণমুখী কাজে প্রতিনিয়ত সশস্ত্র বাহিনী নিবেদিতপ্রাণ। ছবিসহ ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্র, মেশিন রিডেবল পাসপোর্টসহ জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণ, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস নির্মাণে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা অত্যন্ত গৌরবজনক। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত আমাদের পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্থান করে নিয়েছে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে প্রথম স্থানে অবস্থানকারী সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশকে আজ চিনতে পেরেছে সারা বিশ্বের মানুষ। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সদস্য সংখ্যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। জাতীয় উন্নয়নে সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল অবদান আজ সর্বজনস্বীকৃত। এটি এমনি এক বাহিনী যার প্রতি এ দেশের জনগণের রয়েছে অগাধ আস্থা, বিশ্বাস ও ভালবাসা।

১৯৭১ সালে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের সঙ্গে যেভাবে একীভূত হয়েছিল, সেই ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উদ্দীপক হিসাবেই কাজ করবে। এ দিবসকে ভিত্তি করে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সৃষ্টি হতে পারে জাতীয় ঐকমত্য।

লেখক: যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)

এ বিভাগের আরো খবর