বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেখ হাসিনার ফিরে আসা ও প্রত্যাশিত বাংলাদেশ

  • আহমেদ রিয়াজ   
  • ১৭ মে, ২০২২ ১৮:৩৬

পিতা বঙ্গবন্ধু স্বদেশে ফিরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আর তিনি দুঃসহ সামরিক শাসনে ক্ষত-বিক্ষত দেশের ক্ষত সারিয়ে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন বিশ্বদরবারে। তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না করলে বাংলাদেশ ও দেশের অসহায়, নির্যাতিত মানুষ এসব থেকে বঞ্চিত হতো।

১৯৮১ সালের ১৭ মে। ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৩৮৮ বঙ্গাব্দ। রোববার। ঢাকায় তখন ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি গতিবেগে ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি তো ছিলই। কিন্তু ১৫ লাখ মানুষ সেদিন ঝড়-বৃষ্টির কোনো তোয়াক্কাই করল না। সেদিন যেন সবার ঠিকানা ছিল কুর্মিটোলা বিমানবন্দর। কুর্মিটোলা থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত তাকে এক নজর দেখার আশায় রাস্তার দুপাশে সেদিন অপেক্ষমাণ ছিল লাখ লাখ মানুষ। সেদিন দীর্ঘ ছয় বছর পর তিনি স্বদেশের মাটিতে পা রাখলেন বিকাল সাড়ে তিনটার পরে।

তিনি এসেছেন! তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছেন!

বিমান থেকে নেমে প্রথমেই তিনি চুমু খেলেন বাংলার মাটিতে। কারণ এ মাটি যে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে রঞ্জিত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পদধূলিতে গর্বিত। এ মাটিতে তারও স্বদেশ ভূমির মাটি। ওদিকে তাকে দেখেই সেদিন বাংলার মানুষের কণ্ঠে গর্জে ওঠল স্লোগান-

‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম।’

‘ঝড় বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে।’

‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম-পিতৃহত্যার বদলা নেব।’

তার আগমন ধ্বনিতে স্বৈরশাসকের গদি নিশ্চয়ই সেদিন কেঁপে উঠেছিল। কেঁপে তো ওঠারই কথা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নৃশংস হত্যার মধ্য দিয়ে উল্টো স্রোতে চলছিল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের গর্ব দিন দিন লুণ্ঠিত হতে হতে মিশে যাচ্ছিল মাটির সঙ্গে। বাংলার মানুষেরও দিনবদল ঘটেনি। বরং শোষণের জাঁতাকলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলছিল।

সেদিন তার আগমন বাংলাদেশের মানুষের মনে আশা জাগিয়েছিল নতুন করে। ঠিক যেমন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলার মানুষের স্বাধীনতার আনন্দকে পরিপূর্ণ করেছিল। আর তার আগমনে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ পুনরুজ্জীবিত হওয়ার আশা জাগল। যেখানে বাংলাদেশ স্বাধীন করা মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন চরম অবহেলিত। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ছিল ক্ষমতাবান। রাজাকার গোষ্ঠী ছিল পরম আদরণীয়।

তিনি বাংলাদেশকে নতুন করে জেগে ওঠায় অনুপ্রাণিত করলেন। মানুষের মধ্যে জাগিয়ে তুললেন সত্যিকারের দেশপ্রেম। যদিও তার এই আগমন মোটেই সহজ ছিল না। তার পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ছয় বছর তিনি ছিলেন নির্বাসিত। সামরিক শাসক ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি তার দেশে ফেরার পথ করে রেখেছিল রুদ্ধ। পদে পদে হুমকি আর বিপদের হাতছানি। দেশে ফেরার কয়েকদিন আগে ১১ মে ১৯৮১ সালে নিউজউইক পত্রিকার সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন- ‘জীবনের ঝুঁকি আছে এটা জেনেই আমি বাংলাদেশে যাচ্ছি।’

এখন প্রশ্ন আসতে পারে তিনি কেন বাংলাদেশে ফিরলেন? তিনি তো বিদেশে আয়েশি জীবন কাটাতে পারতেন। তার জীবনটা হতে পারত ঝুঁকিমুক্ত, ভাবনাহীন। দেশে ফেরার পর একের পর এক তার জীবনের উপর নানা হুমকি ও হামলা শুরু হলো। কিন্তু তিনি হতোদ্যম হননি। তিনি ভয় পেয়ে বিদেশে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকেননি। সরকার বা বিরোধী দল, যেখান থেকেই হোক, দেশে ফেরার পর থেকে তিনি দেশের মানুষে পাশে থেকেছেন সবসময়।

বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও সৎসাহসী। বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন পাকিস্তানি অন্যায় অত্যাচার থেকে মুক্তির কাণ্ডারি হিসেবে। আর তিনি দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন পাকিস্তানি ভাবধারার শোষণ থেকে দেশের মানুষকে মুক্তির কাণ্ডারি হিসেবে।

বঙ্গবন্ধুর লড়াই ছিল ভিনদেশি, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ভাষার দানব থেকে মানুষকে মুক্ত করা, বাংলার মানুষকে স্বাধীনতার আস্বাদ দেয়া। আর শেখ হাসিনা ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত দীর্ঘ লড়াই করেছেন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে, নিজদেশি দানব থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য। বাংলার মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য।

স্বার্থবাদী পাকিস্তানি কায়েমি গোষ্ঠী ঘাপটি মেরে রয়েছে বাংলাদেশের ভেতরেই। প্রতিকূলতার মধ্যেও মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার তিনি করেছেন ন্যায়ের সঙ্গে। দৃশমান শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করাটা সহজ। কিন্তু অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা অনেকটা হাওয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো। এই অদৃশ্য শত্রুরা দেশকে প্রতিনিয়ত অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু তিনি শক্ত হাতে এসব মোকাবিলা করে যাচ্ছেন এখনও।

দেশ পরিচালনায় তার নেতৃত্বের প্রমাণ তিনি দিয়েছেন। প্রমাণ করে দিয়েছেন তার দেশপ্রেম, সততা, দেশের মানুষের প্রতি তার নিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা।

২০১০ সালে নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ। ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় তিনি ছিলেন সপ্তম। এছাড়া আরও কিছু জরিপে প্রকাশ পেয়েছে তার নেতৃত্বগুণ। শত বাধা পেরিয়ে, আন্তর্জাতিক রক্তচক্ষু উপক্ষো করেও তিনি দেশকে এনে দাঁড় করিয়েছেন মধ্যম আয়ের দেশের দ্বারপ্রান্তে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেলের মতো স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত করেছেন ‘রূপকল্প ২০৪১’ ও ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’-এর মতো দূরদর্শী পরিকল্পনা।

স্রোতের প্রতিকূলে নৌকার হাল ধরা সহজ বিষয় নয়। সুদক্ষ মাঝি ছাড়া নৌকা দিক হারাবেই। ঠিক তেমনি আদর্শিক স্রোতের বিপরীতে থাকা একটি দেশের হাল ধরাও সহজ কথা নয়। জীবনের ঝুঁকি, ঘরে-বাইরে চক্রান্তসহ নানামুখী সমস্যা সামলে দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য সুযোগ্য নেতৃত্বের বড়ই প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে এই সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব মিটিয়েছে। তার পিতা বঙ্গবন্ধু স্বদেশে ফিরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আর তিনি দুঃসহ সামরিক শাসনে ক্ষত-বিক্ষত দেশের ক্ষত সারিয়ে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন বিশ্বদরবারে। তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না করলে বাংলাদেশ ও দেশের অসহায়, নির্যাতিত মানুষ এসব থেকে বঞ্চিত হতো। তার দেশে ফেরাটা দেশের জন্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজন- সেটার স্বাক্ষর তিনি রেখে যাচ্ছেন।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন কয়েক আগে নিউজউইকের ওই একই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানিয়েছিলেন, “জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।”

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃত্যুকে ভয় না করে বাংলাদেশে মানুষের কাছে ফিরে প্রথমেই তো তিনি মহত্ত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। আর দেশের জন্য তার প্রতিনিয়ত যে চিন্তাভাবনা, নিরলস প্রচেষ্টা ও অগ্রগতি- এ তো তার দ্বিতীয় মহত্ত্বের পরিচায়ক।

কাব্যগ্রন্থ চিত্রায় যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জীবনের কথাগুলোই বলে গিয়েছেন কবিতার সুরে-

...“কী গাহিবে, কী শুনাবে! বলো, মিথ্যা আপনার সুখ,

মিথ্যা আপনার দুঃখ। স্বার্থমগ্ন যেজন বিমুখ

বৃহৎ জগৎ হতে সে কখনো শেখে নি বাঁচিতে।

মহাবিশ্ব জীবনের তরঙ্গেতে নাচিতে নাচিতে

নির্ভয়ে ছুটিতে হবে, সত্যেরে করিয়া ধ্রুবতারা।

মৃত্যুরে করি না শঙ্কা। দুর্দিনের অশ্রুজলধারা।”...

লেখক: শিশুসাহিত্যিক, কলাম লেখক

এ বিভাগের আরো খবর