বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাকিস্তানের অস্বস্তি

  • ফুরকানুল আলম   
  • ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ১৫:৪৩

নানা প্রতিশ্রুতি আর উন্নয়নের কথা বললেও আহামরি তেমন কিছুই করতে পারেননি ইমরান খান। বরং অনাস্থা ভোটে তিনি যখন বিদায় নিয়েছেন, তখন শাহবাজ শরিফ সরকার পেয়েছে দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামোয় ধুঁকতে থাকা এক পাকিস্তানকে। দেউলিয়া শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ এশিয়ায় এখন মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি ১১ শতাংশ দেশটির। যাতে নিত্যপণ্যের দামও এখন গরিব মানুষের নাগালের বাইরে।

পরিবার ও দ্বিদলীয় অবস্থা থেকে বেরিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের হাতে সাড়ে তিন বছর ছিল পাকিস্তানের শাসনক্ষমতা। নানা প্রতিশ্রুতি আর উন্নয়নের কথা বললেও আহামরি তেমন কিছুই করতে পারেননি ইমরান খান। বরং অনাস্থা ভোটে তিনি যখন বিদায় নিয়েছেন,তখন শাহবাজ শরিফ সরকার পেয়েছে দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামোয় ধুঁকতে থাকা এক পাকিস্তানকে।

দেউলিয়া শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ এশিয়ায় এখন মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি ১১ শতাংশ দেশটির। যাতে নিত্যপণ্যের দামও এখন গরিব মানুষের নাগালের বাইরে। মূলত ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অন্যান্য দেশের মতো জ্বালানি সংকটে পড়েছে পাকিস্তান। অনেক বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দামও। যার কোনো ধরনের প্রস্তুতিই ছিল না তাদের।

জিডিপি অনুপাতে ঋণের রেড লাইন আরও ছয় বছর আগেই পার করেছে ইসলামাবাদ। যা এখন ৮০ শতাংশের ওপরে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও তলানিতে। দেশটির প্রভাবশালী পত্রিকা ডন বলছে, মাত্র ১১ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে পাকিস্তানের। যা দিয়ে দুই মাসের বেশি আমদানি খরচ মেটানো সম্ভব নয়। রিজার্ভে অন্তত তিন মাসের আমদানি খরচের অর্থ থাকতে হয়। প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রাও আশানুরূপ নয়। গেল বছর ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা করলেও হয়েছে ৫ দশমিক ৬। যা এ বছর আরও কমে ৪ শতাংশে নামতে পারে। এমনই পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক- এডিবি।

ধুঁকতে থাকা অর্থনীতির মতোই টালমাটাল পাকিস্তানের রাজনীতি। ইমরান খানকে উৎখাতে চিরশত্রু পাকিস্তান পিপলস পার্টি- পিপিপি এবং পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ হাতে হাত মিলিয়ে নতুন সরকার গঠন করেছে। সহায়তা করেছে পার্লামেন্টের ছোট-খাট বেশিরভাগ দল। তাই নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছে এ সব দলের প্রতিনিধিরা। কিন্তু, এই সরকারকে একদিনের জন্যও শান্তি থাকতে দেয়ার কোনো ইচ্ছে নেই পিটিআই-প্রধান ইমরানের।

অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে ব্যাপক জলঘোলার পর ক্ষমতা ছেড়ে দিলেও, রাজপথ ছাড়তে নারাজ তিনি। বর্তমান সরকারকে বিদেশিদের সহায়তায় ক্ষমতায় আসা আমদানি সরকার হিসেবে প্রমাণ করতে তার তূণে যত ধরনের তির আছে সবই ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। একইসঙ্গে জোর দাবি তুলেছেন আগাম নির্বাচনের। বর্তমান সরকারের স্বাভাবিক মেয়াদ ফুরাবে আগামী বছরের আগস্টে। আর পরবর্তী নির্বাচনের তারিখ পড়তে পারে অক্টোবরে। কিন্তু, তিন মাসের মধ্যে ওই নির্বাচন চান ইমরান খান।

শাহবাজ সরকারকে প্রশাসনিকভাবেও নাজেহাল করছে পিটিআই। বিভিন্ন ইস্যুতে অসহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। নতুন সরকারের কোনো মন্ত্রীকে শপথ পড়াননি তিনি। এ জন্য শাহবাজদের সহায়তা নিতে হয়েছে সিনেট চেয়ারম্যানের।

একইভাবে পাঞ্জাবের নতুন মুখ্যমন্ত্রীর শপথও নানা অভিযোগ তুলে আটকে রেখেছেন রাজ্যটির গর্ভনর ওমর সরফরাজ চিমা। সম্প্রতি পাঞ্জাবের আইনসভায় মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন শাহবাজ শরিফের ছেলে হামজা শরিফ। শপথ পড়ানো ইস্যুতে লাহোর হাইকোর্টে আর্জি জানিয়েছেন তিনি। পাঞ্জাবের গভর্নরের পদ থেকে চিমাকে সরাতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ অনুরোধ করলেও তা রাখেননি প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।

তাই নতুন সরকারের অনেক নেতাই প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের চিন্তা করছেন। পার্লামেন্টে বিরোধীদের বর্তমান সংখ্যা দিয়ে তা সম্ভব নয়। সংবিধান অনুযায়ী অভিশংসনের জন্য পার্লামেন্টে দুই কক্ষ মিলিয়ে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন দরকার। যা ২৯০ জন। বিরোধীদের সবমিলিয়ে রয়েছে ২৬৫ জন।

ক্ষমতাসীন কোনো কোনো নেতার আশা, বাকি ২৫ জনের অভাব পূরণ হবে পিটিআইয়ের দলছুট আইনপ্রণেতাদের মাধ্যমে। অবশ্য দলের বিরুদ্ধে ভোটদান ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টে অনেক আগেই আর্জি জানিয়ে রেখেছে পিটিআই। যার শুনানি চলছে। তাই প্রেসিডেন্ট আলভির অসহযোগিতা নিয়েই আগামীর পথ চলতে হবে শাহবাজ সরকারকে।

বসে নেই ইমরান খানও। রাজপথ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সভা-সমাবেশে সরগরম রাখছেন। বিশেষ করে টুইটারে তার ভাষণে সরাসরি যুক্ত হন প্রায় ৫ লাখ মানুষ। সরকার পতন আন্দোলন জোরদার করতে হুংকারও দিচ্ছেন তিনি। তার ডাকের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলছেন। তবে, তোষাখানার উপহার বিক্রি ইস্যুতে তার ভাবমূর্তি দুর্বল করার চেষ্টায় আছেন ক্ষমতাসীনরা।

তারা অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিভিন্ন সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া উপহার অনৈতিকভাবে দুবাইতে বেচে ১৪ কোটি রুপি নিয়েছেন ইমরান খান। আত্মরক্ষায় পিটিআই প্রধান দাবি করেন, আগে তোষাখানা থেকে ১৫ শতাংশ মূল্য দিয়ে উপহার নেয়া যেত। সেটি তিনি বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেন। বর্তমান সরকারকে অবৈধ ও বিদেশি তাঁবেদার হিসেবে দেখানোর ইমরান খানের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা কিছুটা হলেও ব্যাহত করেছে এই তোষাখানা ইস্যু।

লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক

এ বিভাগের আরো খবর