বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পেগাসাস: ভারত যখন অরওয়েলিয়ান স্টেট

  •    
  • ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২২:২৯

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে জর্জ অরওয়েলের একটি মাত্র লাইন আছে, কিন্তু জর্জ অরওয়েলের প্রতিটি লাইন সেই সিস্টেমের কথা বলে, যাকে বলা হয় ‘অরওয়েলিয়ান স্টেট’, যেখানে রাষ্ট্র নজরদারির জন্য প্রতিটি নাগরিককে অনুসরণ করে ছায়ার মতো। একটা গোপন রহস্যের মতো প্রতিটা মুহূর্ত থাকে নাগরিকের শয়নকক্ষে, যার ভয়ে নাগরিকও ঘুরে দাঁড়ায় না, সব কিছু সহ্য করে ক্রীতদাসের মতো দম বন্ধ করে। আজকের ভারতে সরকারকে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলেই তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের সাথে যুক্ত করা হচ্ছে।

‘আপনি যদি কোনো বিষয় গোপন রাখতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই সেটি নিজের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে হবে’- রাষ্ট্রের নজরদারি নিয়ে তার পাঠকদের হুঁশিয়ার করে দিতে এই ঐতিহাসিক মন্তব্য করেছিলেন জর্জ অরওয়েল। পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে নজরদারি মামলায় রায় দিতে গিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যখন জর্জ অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইট্টি ফোর’ উপন্যাস থেকে উদ্ধৃতি দেয়, তখন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী যে কোনো সরকারের জন্য এটি লজ্জাজনক বলে মনে করা উচিত।

সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে জর্জ অরওয়েলের নাম সেই সমস্ত ভয়কে বাস্তবতার কাছাকাছি নিয়ে আসে, যেগুলো সম্পর্কে সরকার অজ্ঞতার ভাণ করে। আদালত বলেছিল, ‘সরকার প্রতিবার জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে বিতর্ক থেকে পালাতে পারে না। আদালত কেবল সরকারের ভাষ্য শুনে “নিরব দর্শক” থাকতে পারে না।’

গত ২৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে ভারতে পেগাসাসের ব্যবহার সংক্রান্ত সত্যটা জানার জন্য, যদিও কমিটির রিপোর্ট তৈরি অথবা আদালতের কাছে দাখিল করার আগেই আমেরিকার সংবাদপত্র দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়ে দিয়েছে, ২০১৭ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ইসরায়েলে যুদ্ধাস্ত্র ও গোয়েন্দাগিরি সম্পর্কিত আধুনিক প্রযুক্তি ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তির অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল পেগাসাস স্পাইওয়্যার। গত ২৮ জানুয়ারি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর ম্যাগাজিন সেকশনে রোনেন বার্গম্যান এবং মার্ক মাজেত্তির যৌথ প্রতিবেদন ভারতকেন্দ্রিক ছিল না। তারা আমেরিকায় পেগাসাসের উপস্থিতি এবং ওই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ইসরায়েলের ফায়দা তুলে নেওয়া সম্পর্কে তথ্য বিশ্লেষণ করেছিলেন।

আমার আলোচনা বিশ্বের সর্ববৃহৎ সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ ভারতে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে। আমার আলোচনা দেশের সমাজকর্মী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর নজরদারি করতে স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা শাসক কতটা গণতান্ত্রিক, তা নিয়ে।

২০১৯ সালের শেষভাগে পেগাসাস স্পাইওয়্যার নজরদারির খবর প্রকাশ্যে আসে। বিশ্ব জুড়ে ১৩০০ জনের একটি নামের তালিকা পাওয়া যায়, যারা পেগাসাস নজরদারির শিকার। ওই তালিকায় ভারতের ১২১ জনের নাম ছিল বলে জানা গিয়েছিল সংবাদমাধ্যম সূত্রে। তালিকায় নাম থাকার সম্মান অর্জন করেছিলাম আমিও। কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থা ‘সিটিজেন ল্যাব’-এর গবেষক জন স্কট রেলটন জানিয়েছিলেন, আমার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছিল ইজরায়েলের সাইবার সফ্টওয়্যার নির্মাতা সংস্থা এনএসও-এর তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে। পেগাসাসের নাম শুনে একটু অবাক হয়েছিলাম। মনে প্রশ্ন জেগেছিল, কোটি কোটি টাকা খরচ করে কেনা স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে আমার মতো সাধারণ একজন নাগরিকের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট কেন হ্যাক করা হবে?

২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর পেগাসাস এবং হ্যাকিং সংক্রান্ত খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেতেই ভারত সরকারের প্রাক্তন তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বেশ হম্বি তম্বি করে ঘোষণা করেছিলেন, পেগাসাস নির্মাতা এনএসও-এর কাছে জানতে চাওয়া হবে, কারা নজরদারি করছে ভারতের নাগরিকদের ওপর। কয়েকদিনের মধ্যেই এনএসও হাটে হাড়ি ভেঙে জানিয়ে দিল, কোনো ব্যক্তিগত বা বেসরকারি সংস্থাকে পেগাসাস স্পাইওয়্যার বিক্রি করা হয় না। ব্যাস, রবিশঙ্করবাবুর ভাষণ বন্ধ। আমিও নিশ্চিন্ত হলাম, যাক কোনো বিদেশি শক্তি নয়, দেশেরই সরকার, দেশেরই নিরাপত্তার অজুহাতে, দেশেরই নাগরিকের ফোনে আড়ি পাতছে, যদিও আদালতে সরকারের সাহস হয়নি আড়িপাতার বাস্তবতা স্বীকার করতে। ফোনে আড়ি পেতে সরকার দেশের নাগরিককেই দেশদ্রোহী চিহ্নিত করতে চাইছে। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলেছে যে আদালতের হস্তক্ষেপ হলো সাংবিধানিক আকাঙ্ক্ষা এবং আইনের শাসনকে ‘রাজনৈতিক অলংকারের মোড়ক থেকে’ বাঁচিয়ে উন্নত রাখা। সরকার সংসদে, দেশের মানুষের কাছে বার বার মিথ্যা বলেছে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার নিয়ে।

পেগাসাস মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্যে অরওয়েলের উল্লেখ জরুরি অবস্থার আগে ফ্যাসিবাদের আগমনের একটি ইঙ্গিত। আদালত বোঝাতে চেয়েছে আজকের ভারত কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে জর্জ অরওয়েলের একটি মাত্র লাইন আছে, কিন্তু জর্জ অরওয়েলের প্রতিটি লাইন সেই সিস্টেমের কথা বলে, যাকে বলা হয় ‘অরওয়েলিয়ান স্টেট’, যেখানে রাষ্ট্র নজরদারির জন্য প্রতিটি নাগরিককে অনুসরণ করে ছায়ার মতো। একটা গোপন রহস্যের মতো প্রতিটা মুহূর্ত থাকে নাগরিকের শয়নকক্ষে, যার ভয়ে নাগরিকও ঘুরে দাঁড়ায় না, সব কিছু সহ্য করে ক্রীতদাসের মতো দম বন্ধ করে। আজকের ভারতে সরকারকে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলেই তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের সাথে যুক্ত করা হচ্ছে।

অরওয়েল তার নাইনটিন এইট্টিফোর উপন্যাসে এই ধরনের প্রতিটি শব্দের একটি নতুন অর্থ লিখেছিলেন। উপন্যাসের চতুর্থ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, এ ধরনের রাষ্ট্রের জন্য যুদ্ধ হলো শান্তি, স্বাধীনতা হলো দাসত্ব এবং অজ্ঞতা হলো শক্তি। আর শাসকের বিছানো শান্তি, দাসত্ব, অজ্ঞতার রাস্তায় যদি নাগরিক হাঁটতে না চায়, তবে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে নজরদারির আওতায়।

ভারতে সেটা শুধুই কি নজরদারি? নাগরিকের মোবাইল ফোন, কম্পিউটার হ্যাক করে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে সরকারি এজেন্সি। মিথ্যা তথ্য বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেই কম্পিউটারে। পরে তা তথ্যপ্রমাণ হিসাবে নাগরিকের বিরুদ্ধে আদালতে ব্যবহার করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের ভীমা-করেগাওঁ ষড়যন্ত্র মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সমাজকর্মী রোনা উইলসনের কম্পিউটার পুলিশ জব্দ করার আগেই তাতে ‘ম্যালওয়্যার’ বা ‘নেটওয়্যার’ ঢুকে পড়েছিল। ম্যালওয়্যারটির নাম win32:trojan-gen । এই ম্যালওয়্যার কোনো কম্পিউটারে, মোবাইলে ঢুকে পড়া মানে মালিকের অগোচরে ইন্টারনেট অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণ ও কম্পিউটারে রাখা সমস্ত তথ্য চলে যাবে হ্যাকারের কাছে। রোনা উইলসনের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রমাণ হিসাবে দাখিল করেছে কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক থেকে পাওয়া চিঠি, যা রোনার অজান্তেই কম্পিউটারে তৈরি করে বসিয়ে দিতে পারে Win32:trojan-gen ম্যালওয়্যার ব্যবহারকারী কোনো হ্যাকার।

২০২১ সালে মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট-এ প্রকাশিত দুটি রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কিন ডিজিটাল ফরেনসিক ফার্ম ‘আর্সেনাল কনসাল্টিং’ প্রথমে ১০টি এবং পরে ২২টি অতিরিক্ত ফাইল খুঁজে পেয়েছিল, যা দেখায় যে ভীমা-কোরেগাঁও মামলার অভিযুক্ত রোনা উইলসন ২০১৮ সালের জুন মাসে গ্রেপ্তার হওয়ার প্রায় দুই বছর আগে থেকে তার কম্পিউটার ম্যালওয়্যার আক্রমণের শিকার হয়েছিল। আর্সেনাল কনসাল্টিংয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, (ভারতের) তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) দ্বারা অভিযুক্ত সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে মূল প্রমাণ হিসাবে উপস্থাপন করা (কম্পিউটার) ফাইলগুলি রোনা উইলসনের কম্পিউটার সরাসরি পরিচালনা করে এমন কেউ তৈরি, খোলা বা ব্যবহার করেনি। আসলে ঐ ফাইলগুলি রোনা উইলসনের কম্পিউটারে বাইরে থেকে স্থাপন করা হয়েছিল। হ্যাকার এটা স্থাপন করেছিল একটি সফটওয়্যার NetWire এর সাহায্যে।

গণ-আন্দোলনের কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজাতে ও আটক করতে দিল্লি পুলিশের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে মোবাইল ফোন। ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ অর্থাৎ লোকসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি কিষণ রেড্ডি বলেছিলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯ ধারা অনুযায়ী, যে কোনো নাগরিকের ওপর নজরদারির অধিকার রয়েছে সরকারের।’

এবং গণতন্ত্রের বিপদ এখানেই। ভারতে টেলিফোনে আড়িপাতা বা মোবাইল ফোন, ইন্টারনেটে নজরদারি নতুন ঘটনা নয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়েই ভারতেও দশকের পর দশক জুড়ে চলছে আড়িপাতা-নজরদারির গোপন প্রক্রিয়া দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সন্ত্রাসবাদ দমনের সার্বজনীন শ্লোগানের নামে। সরকারি এজেন্সির আড়িপাতা-নজরদারি বন্ধ হয়নি কখনই, তা সরকারের নিয়ন্ত্রণ যার হাতেই থাকুক না কেন।

২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে ইন্ডিয়া টুডে সাময়িক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে, সরকার স্বীকার করেছে যে নয়াদিল্লিতে ৬ হাজারের বেশি টেলিফোনে আড়িপাতা হচ্ছে। এই গোপন তালিকায় আছে দুর্নীতিবাজ সন্দেহে প্রায় ৪০০ আমলা ও সামরিক কর্মকর্তা, ২০০ করপোরেট কর্তা, ৫০ জনেরও বেশি শীর্ষ সাংবাদিক, সমান সংখ্যক পেশাগত মধ্যস্থতাকারী, এক ডজন অস্ত্র ব্যবসায়ী, দুই ডজন এনজিও এবং প্রায় ১০০ হাই সোসাইটি পিম্পস, ড্রাগ ডিলার এবং হাওয়ালা অপারেটর।’

তখন সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা বা ইউপিএ-এর হাতে। ওই সরকারেরই স্বরাষ্ট্র সচিব জি কে পিল্লাই নজরদারির জাল আরও বিস্তৃত করার জন্য সরকারকে বলেছিলেন ‘ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ আইন, ১৮৮৫’ সংশোধন ও সংযোজন করতে। টেলিফোন ট্যাপ করার জন্য অনুমোদন পেয়েছে ১০টি কেন্দ্রীয় সংস্থা: ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি, রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইং, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, দিল্লি পুলিশ, সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন, ডিরেক্টরেট অফ সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স, ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স, কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক গোয়েন্দা ব্যুরো এবং নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো।

দেশের আইন অনুযায়ী, জরুরি জনস্বার্থে বা জননিরাপত্তার স্বার্থে আড়িপাতা বা নজরদারি স্বীকৃত। দেখা যাক ইউপিএ-এর শাসনকালে টেলিফোনে আড়িপাতার শিকার কয়েকজনের নাম। এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ারের ফোনে আড়িপাতা হয়েছে ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। কংগ্রেস নেতা দ্বিগবিজয় সিংয়ের ফোনে আড়িপাতা হয়েছিল ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে আড়িপাতা হয়েছিল জনতা দল (সংযুক্ত)-এর নেতা নীতিশ কুমারের। বাদ যাননি সিপিএম নেতা প্রকাশ কারাতও। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে তার ফোনে আড়িপাতা হয়। বায়ুমণ্ডলে মোবাইল ফোনের কথপোকথন রেকর্ড করার জন্য ‘জিএসএম মনিটরিং ডিভাইস’ ২০০৫-০৬ সালে ভারতে আনা হয়েছিল তখনকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ণনের উদ্যোগে। সিস্টেম ফোন নম্বরে ট্যাপ না করে এটি ফোন এবং টাওয়ারের মধ্যে সংকেতগুলিকে বাধা দেয় এবং একটি হার্ড ডিস্কে রেকর্ড করে।

২০০০ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা বা এনডিএ-এর সরকার। অটলবিহারী বাজপেয়ির প্রধানমন্ত্রীত্বে সেই সরকার ‘তথ্য প্রযুক্তি আইন, ২০০০’ তৈরি করেছিল। সেই আইনের ৬৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ভারতের সার্বভৌমত্ব বা অখণ্ডতার স্বার্থে রাজ্যের নিরাপত্তা, বিদেশি রাজ্যের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে যে কোনো কম্পিউটারের তথ্য প্রেরণ, প্রাপ্তি বা সংরক্ষণে বাধা, পর্যবেক্ষণ বা নষ্ট করার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের আছে।

২০১৪ সালে কেন্দ্রে আবার ক্ষমতায় ফিরে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার ওই আইনের ওপর ভিত্তি করেই আড়িপাতা, নজরদারির জাল বিছিয়েছে সমাজ জীবনে। আর বেআইনিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে পেগাসাস স্পাইওয়্যার বা Win32:Trojan-Gen ম্যালওয়্যার। সাধারণ নাগরিকজীবনে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ লাগামহীন। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, আজ যারা বিরোধী, বিগত দিনগুলিতে তারাই ছিলেন সরকারে। তখন তো বন্ধ ছিল না সংবিধানস্বীকৃত ব্যক্তির গোপনীয়তার স্বাধীনতা নস্যাৎ করে আড়িপাতার গোপন তৎপরতা। আসলে সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার নামে শাসক দলের নজরদারির নিশানার কেন্দ্রে থাকে বিরোধীরা। এটা একটা বিশ্বজনীন শাসকীয় প্রক্রিয়া।

আশিস গুপ্ত: সাংবাদিক, নয়াদিল্লি।

এ বিভাগের আরো খবর