সড়ক ও মহাসড়ক নৈরাজ্যে ভরা। এ নৈরাজ্যের পেছনে কাজ করছে এক রাজনৈতিক অর্থনীতি। সড়কে নৈরাজ্য থাকলে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী আর্থিক সুবিধা পায়। সুশৃঙ্খলতা এলে অবৈধ পথ বন্ধ হয়। লাইসেন্স বা ফিটনেসবিহীন গাড়ি চললে কার লাভ হয় তা তো অজানা নয়।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। সড়ক ও মহাসড়ক হয়ে উঠছে মৃত্যুকূপ। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, দুর্ঘটনা রোধে দেখার কেউ নেই। পথে ও পরিবহনে মানুষের জীবন ভীষণ সস্তা হয়ে উঠছে।
গত ৯ জানুয়ারি ২০২২ রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ২০২১ সালের সড়ক দুর্ঘটনাচিত্র তুলে ধরেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে সড়কে নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। গড়ে প্রতিদিন ১৭ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। অপ্রয়োজনীয় জীবন খরচ! আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৬৮ জন। যারা নিহত হয়েছেন তারা এক করুণ অভিজ্ঞতা নিয়ে চলে গেছেন আর স্বজনদের জন্য রেখে গেছেন গাঢ় বেদনা। অন্যদিকে, যারা আহত বা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তারা হয়েছেন কষ্টের কালো পুঁজির মালিক।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৭২০ জনের ওপর পরিচালিত সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রাকমূল্যায়নে দেখা গেছে, শতকরা সাত ভাগ প্রশিক্ষণার্থীর পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে ক্ষতির শিকার হয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ের সমীক্ষা পরিচালনা করা হলে হয়তো এ তথ্যের খুব বেশি বিচ্যুতি ঘটবে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে সড়কে মৃত্যু কমছে না। দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দুর্ঘটনা মহামারি আকার ধারণ করেছে। গত বছর করোনা মহামারির কারণে একটা বড় সময় সড়ককে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল তা সত্ত্বেও আহত ও নিহতের পরিসংখ্যান ঊর্ধ্বমুখী।
একটি ঘটনা যখন অনিয়মিতভাবে ঘটে তখন তাকে দুর্ঘটনা বলা যায়। কিন্তু কোনো ঘটনা যখন নিয়মিত ঘটে বা বার বার ঘটে তখন তাকে দুঘর্টনা বলা যায় না। বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ ধরনের নিয়মিত ঘটনাকে মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা হয় সিস্টেমেটিক ভায়োলেন্স। পদ্ধতিগত সহিংসতা। এতে মানুষের নিরাপদে চলাচলের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। এ ধরনের সড়ক সহিংসতার মূল দায় পড়ে রাষ্ট্রের ওপর। সড়ক দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতির দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না।
যেমন-সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দেশে কিছু চিহ্নিত ব্ল্যাকস্পট রয়েছে সেখানে প্রায়শই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে- সড়কে যেসব স্থানে পরপর তিন বছর কমপক্ষে তিনটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে সেসব স্থানকে ব্ল্যাকস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সারা দেশে ২০১০ থেকে ২০১২ সালে জাতীয় মহাসড়কে ২০৯টি ব্ল্যাকস্পট বা দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করে ব্ল্যাকস্পটগুলোতে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীকালে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে আরও ২৫২টি ব্ল্যাকস্পট চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে ১৭২টি ব্ল্যাকস্পটের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ৮০টি ব্ল্যাকস্পট উন্নয়ন করা হবে।
ব্ল্যাকস্পট ত্রুটিযুক্ত প্রকৌশলগত সমস্যা। সড়ক নির্মাণে প্রকৌশলগত মানদণ্ড যথাযথভাবে অনুসরণ না করার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে সড়কের বাঁক বিপৎসংকুল হয়ে ওঠে, অনেকসময় উল্টো দিকের যানবাহন দেখতে পাওয়া যায় না। অনেকসময় রোড ডিভাইডার, সড়ক বাতি ও সাইন-সিগন্যাল না থাকায় তা ঝুঁকির প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। একইস্থানে যখন বার বার দুর্ঘটনা ঘটে তখন অনেকে তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুসন্ধান না করে অতিপ্রাকৃতিক গল্পের আসর বসায়। ব্ল্যাকস্পটগুলোর প্রকৌশলগত ত্রুটি সারানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য ২২ হাজার কিলোমিটারের ওপরে যার মধ্যে মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও জেলা সড়ক রয়েছে। প্রধানত মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও জেলা সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানসমূহকে ব্ল্যাকস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
মহাসড়ক, আঞ্চলিক বা জেলা সড়কের বাইরে রয়েছে বিস্তৃত পল্লি সড়ক নেটওয়ার্ক যা উপজেলা সড়ক, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়ক, টাইপ-১ ও টাইপ-বি হিসেবে চিহ্নিত। এর পরিমাণ সাড়ে তিনশ কিলোমিটারের ওপরে। এ সড়ক নেটওর্য়াকের দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্কের প্রায় ১ লাখ ২০ কিলোমিটারের ওপরে পাকা।
ব্ল্যাকস্পট কেবল মহাসড়ক ও আঞ্চলিক বা জেলা সড়কের ওপরে নেই। এ রকম দুঘর্টনাপ্রবণ অনেক ব্ল্যাকস্পট রয়েছে পল্লি সড়ক নেটওয়ার্কে। পল্লি সড়ক নির্মাণের সময় এর সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করার দায়িত্ব এলজিইডির। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দায়িত্ব রয়েছে বাংলাদেশ রোডস ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ও পুলিশসহ অন্যান্য সরকারি কিছু সংস্থার ওপর।
বলা হচ্ছে, সরকার নিরাপদ সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৩: সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণের লক্ষ্যমাত্রা ৩.৬ অধীন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ২০৩০-এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
জাতিসংঘ-ঘোষিত ইউএন ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটির আওতায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও এর ক্ষতি হ্রাসে আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক নীতি ও ঘোষণা এবং দেশীয় আইনগত কাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় করে ন্যাশনাল রোড সেফটি স্ট্রাটেজিক অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন করছে সরকার।
সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নিরাপদ সড়ক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি, সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদ এবং জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল কাজ করছে। এছাড়া কাউন্সিল অনুমোদিত ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাজ করছে একটি টাস্কফোর্স। এসব কর্মসূচির বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিবীক্ষণে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে জাতীয় পরিবীক্ষণ কমিটি।
আইনি কাঠামো ও পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সত্ত্বেও সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না এবং কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি নিরাপদ সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রত্যয়ে ‘মুজিব বর্ষের শপথ, সড়ক করব নিরাপদ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হয়েছে নিরাপদ সড়ক দিবস। তারপরও সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না। সড়কের মৃত্যু স্পর্শ করছে প্রান্ত থেকে মহানগর। আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, সড়কের ক্রটি, গাড়ির ত্রুটি, চালকের অদক্ষতা, গাড়ির গতি, সড়কে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, সড়ক ব্যবহারকারীদের শিক্ষা-সচেতনতার অভাবকে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, দেশের ক্রমবর্ধমান আর্থসামাজিক অগ্রগতিতে সড়কে যানবাহন চলাচলের গতি অনেক বেড়েছে। যুগপৎভাবে, বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, গ্রামীণ যোগাযোগ সূচককে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে, এ হার শতকরা ৮৭ ভাগের ওপরে। অর্থাৎ বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে দু’কিলোমিটারের মধ্যে পাকা সড়ক পাওয়া যায়। একদিকে সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি, অন্যদিকে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাব সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বহুলাংশে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বলা হয় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যুক্ত তিনটি ‘ই’। এক. ইনফোর্সমেন্ট অর্থাৎ আইন বা নীতির প্রয়োগ; দুই. ইঞ্জিনিয়ারিং বা সড়ক ডিজাইন, রোডস সাইন ও সিগন্যাল; তিন. এডুকেশন অর্থাৎ শিক্ষা ও সচেতনা-ড্রাইভার, পথচারী ও সড়ক ব্যবহারকারী।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যে উঠে এসেছে সড়ক দুর্ঘটনার ৬২ শতাংশের কারণ যানবাহনের বেপরোয়া গতি। যুগপৎভাবে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়েছে ৫০ শতাংশ। ২০২১ সালে ২ হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২ হাজার ২১৪ জন যা মোট নিহতের মধ্যে ৩৫.২৩ শতাংশ।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কারণের গুরুত্ব ভেদে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে- সড়ক দুর্ঘটনায় যারা নিহত হন তাদের ৪৯ শতাংশ পথচারী।
সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ মূলত হারাচ্ছে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ। তথ্যে ওঠে এসেছে- ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮-৬৫ বছর বয়সি কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৫ হাজার ১৯২ জন যা মোট নিহতের ৮২.৬২ শতাংশ। মৃত্যু আর অব্যবস্থাপনার কারণে সড়ক ভয় ও শঙ্কার আধার হয়ে উঠছে।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য থেকে আরও জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় গত বছর ক্ষতি ৯ হাজার ৬৩১ কোটি টাকার মানবসম্পদের ক্ষতি হয়েছে, যা দেশের জিডিপির দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল স্টাডিজ অন রোড সেফটি ২০১৮-এ প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে, পৃথিবীতে সব বয়সের মানুষ প্রধানত যেসব কারণে নিহত হয় তার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার অবস্থান হলো অষ্টম। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে জিডিপির গড় ক্ষতির পরিমাণ তিন শতাংশ।
সড়ক দুর্ঘটনা-সম্পর্কিত তথ্যের প্রধান উৎস পুলিশ এবং সংবাদপত্র। কিন্তু সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে অনুমান করা যায় প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে সেসব কেস কেবল হাসপাতালে যায় বা সংবাদপত্রের পৃষ্ঠায় ওঠে। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে সেসব কেস সবসময় হাসপাতালে যায় না বা সংবাদপত্রের পৃষ্ঠায় জায়গা পায় না। ধারণা করা হয়, গণমাধ্যমে যে পরিমাণ তথ্য প্রকাশিত হয়, প্রকৃত দুর্ঘটনা তার চেয়ে চার বা পাঁচ গুণ বেশি। সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত তথ্য পেতে হলে ব্যাপকভিত্তিক ও সমন্বিত তথ্য সংগ্রহ কৌশল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বক্তব্য খুব পরিষ্কার। এআরআই মনে করে, সড়ক দুর্ঘটনার সমস্যাটি রাজনৈতিক। কারিগরিভাবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। যারা সড়কে বিশৃঙ্খলার সুবিধাভোগী, তারাই নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন কমিটিতে বসে আছেন। শুধু বক্তব্য দিয়ে দায়িত্ব শেষ করা নয়, সত্যিকার অর্থে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া কোনোভাবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়।
প্রতিটি জীবন অমূল্য। একটি জীবনের সঙ্গে থাকে অনেক জীবনের সংযোগ। সড়ককে আর কোনো জীবনের সংহার নয়। সড়ক হোক জীবনের সংযোগ।
লেখক: যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ