বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আগামীর বাংলাদেশ যেমন চাই

  • ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ   
  • ৪ জানুয়ারি, ২০২২ ১৭:১৭

এর আগেও মেডিক্যালে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনার দুর্নীতি দেশবাসী দেখেছে। বলা হচ্ছে, এই করোনা থেকেও দুর্নীতিটা এদেশে ভয়াবহ মহামারি হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। মূল্যবোধ-নৈতিকতা যদি জাগ্রত না হয়, তবে আইন করেও দুর্নীতি রোধ সম্ভব নয়। আদালতের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও সচেতন হওয়া জরুরি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্র্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

দেশের প্রতিটি মানুষ আগ্রহ-উৎসাহের সঙ্গে নতুন বছর ২০২২-কে বরণ করে নিয়েছে। ২০২১ ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের বছর, অন্যদিকে সরকারের বিভিন্ন মেয়াদি লক্ষ্যমাত্রার মূল্যায়ন ও সমাপ্তিবর্ষ। ২০২১-এ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। পাশাপাশি জাতির পিতার জন্মশতবর্ষও উদযাপিত হয়েছে। তাই ২০২১ সালটি আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হওয়ার পাশাপাশি কালের পরিক্রমার মাইলফলকও।

৫০ থেকে ১০০ বছরের ইতিহাস ও যাবতীয় কর্মকাণ্ডের চুলচেরা বিশ্লেষণ, হিসাববিবরণী, বিশেষ অর্জনের স্তুতিগান, বিশেষ পর্যবেক্ষণ, সমীক্ষা, মূল্যায়ন, পরবর্তী ভিশন অর্জনের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ছিল ২০২১ সাল। দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপকর্মের পুনরাবৃত্তি না হলে বোঝা যাবে উন্নয়নের আগামী পরিকল্পনা ২০২৬, ২০৩০ ও ২০৪১ আর হয়তো অসম্ভব কিছু নয়। নয়তো ‘কাজীর গুরু কাগজে আছে- বাস্তবে নেই’ এই ধাঁধার মধ্যে থেকে নিঃশেষ হওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকবে না।

অধিকন্তু শব্দ ও বায়ুদূষণ জলবায়ু আর পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকব। পাশাপাশি কলুষিত পরিবেশ ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের উদীয়মান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ক্রমাবনতির দিকে নিয়ে যাবে। কাজেই এ বাস্তবতায় ২০২২ সালকে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিতে হবে। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান, সুষ্ঠু অভিবাসন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও সেবা খাতের উন্নয়ন, পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য সরবরাহ এবং বসবাসের নিশ্চয়তাসহ সামাজিক সুরক্ষার প্রতি এ বছর যত্নবান হওয়া জরুরি।

২০২১ পর্যন্ত দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ ৫০টি বছর খুব সহজে অতিবাহিত হয়নি। অনেক বাধা-বিপত্তি ও দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে বাঙালি জাতিকে। প্রশ্ন হলো- স্বাধীনতার এত বছরে এসে জাতি হিসেবে আসলে অর্জন কতটুকু? এত ত্যাগের এ বাংলাদেশ আসলে কীভাবে চলছে? এসব খুঁজতে গেলে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

বর্তমান দিয়ে অতীত মূল্যায়ন করে ভবিষ্যৎভাবনা ঠিক করতে হবে। স্বাধীনতার এত বছরে এসে এদেশের দুর্নীতির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে যে, বর্তমানে দুর্নীতি মহামারি আকারে সবকিছু গ্রাস করতে বসেছে। আজকাল যেকোনো কাজ সুষ্ঠু পথে সমাধান করা যেন সোনার পাথরবাটিতে পরিণত হয়েছে।

করোনা মহামারিতে দুর্নীতিতে সবথেকে আলোচিত খাতটি হচ্ছে স্বাস্থ্যখাত। এ খাতের একেবারে ছোট পর্যায় থেকে শুরু করে রাঘব বোয়াল পর্যন্ত দুর্নীতির মহোৎসবে মেতেছিল। মানবিকতাকে তারা বিক্রি করে দিয়েছিল। সাহেদ-সাবরিনা ও ড্রাইভার মালেক এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। একজন ড্রাইভার হয়ে তার সম্পদ আকাশসম। এরা তো শুধু ধরা পড়েছে কিন্তু এমন আরও অনেক দুর্নীতিবাজ অধরাই রয়ে গেছে।

এর আগেও মেডিক্যালে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনার দুর্নীতি দেশবাসী দেখেছে। বলা হচ্ছে, এই করোনা থেকেও দুর্নীতিটা এদেশে ভয়াবহ মহামারি হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। মূল্যবোধ-নৈতিকতা যদি জাগ্রত না হয়, তবে আইন করেও দুর্নীতি রোধ সম্ভব নয়। আদালতের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও সচেতন হওয়া জরুরি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্র্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

আশার বিষয় হচ্ছে- বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন অনেক ভালো কাজ করছে। প্রায়ই তারা দুর্নীতিবাজদের ধরছে এবং আদালতে দ্রুত বিচার হচ্ছে। যার উদাহরণ সাহেদের মামলার রায় অতিদ্রুত হওয়া। তবে জাতি হিসেবে আমরা যদি উন্নত ধারণা পোষণ না করি, সভ্যতাকে নিজের হৃদয়ে প্রতিস্থাপন না করি তবে এই দুর্নীতি খুব সহজে আমাদের থেকে যাবে না।

সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান আরও কঠোরভাবে চলমান রাখা প্রয়োজন। স্বাধীনতাপরবর্তী ৬০, ৭৫ ও ১০০ বছরপূর্তি একটি দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে উদযাপন করা যাবে, এটাই সবার প্রত্যাশা হওয়া উচিত।

রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন কার্যকর হয়েছে। আশা করা যায়, এখন অন্তত ধর্ষণের পরিমাণটা কমবে। তবে ধর্ষণ-মামলার বিচারগুলোও দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। নতুন আইনে এই মামলাগুলো ৬ মাসের মধ্যে বিচারের বিধান রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের আমলে প্রচুর উন্নয়নকাজ হচ্ছে। হয়তো এটা আরও অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল কিন্তু ক্রমাগত সরকার পরিবর্তনের ফলে এদেশে তেমন দৃশ্যমান উন্নয়ন আগে হয়নি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিনবার ক্ষমতায় থেকে অনেক কাজ করছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, অসংখ্য ফ্লাইওভার, অবকাঠামো, রাস্তার সংস্কার, নতুন রাস্তার কাজসহ আরও অনেক উন্নয়ন চলছে।

বর্তমানে এদেশে অনেক বিনিয়োগও আসছে। চীন-জাপান প্রচুর উন্নয়নকাজের অংশীদার হচ্ছে। এটা অবশ্যই আশার খবর। একটি দেশে যত বেশি উন্নয়ন কাজ হবে, তত সে দেশের জীবনমান বৃদ্ধি পাবে। আর উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতাও অনেক জরুরি। তাই বর্তমান বাংলাদেশে যে উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, এটা যদি অব্যাহত থাকে তবে খুব শিগগিরই উন্নত দেশের মর্যাদা পাওয়া সম্ভব।

বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন ছিল এ দেশের গণমানুষের সুখ-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা। এ দর্শনের স্পষ্ট প্রতিফলন তার সোনার বাংলা, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো ও শোষণ-বঞ্চনা এবং দুর্দশামুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন। স্বাধীনতার অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার অনেকটাই বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছিলেন। ভুলে গেলে চলবে না যে, ১৯৭২-এ এদেশের অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর রিজার্ভে তখন কোনো বৈদেশিক মুদ্রাও ছিল না।

শতকরা ৮০ ভাগের মতো মানুষ দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বৈপ্লবিক নেতৃত্বের কল্যাণে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামো আর সত্যিকার অর্থে কোনো নিয়ন্ত্রক-প্রতিষ্ঠান না থাকা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। তখন তার হাতে সম্পদও ছিল সীমিত। তিনি সীমিত সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে মানুষের মনে আস্থা স্থাপন করেছিলেন।

নতুন প্রজন্মের বোঝা উচিত যে, স্বাধীনতা মানে শুধু পরাধীনতা থেকে মুক্তি নয়; শুধু নতুন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আয়োজনও নয়। স্বাধীনতা হলো- স্বাধীন রাষ্ট্রে সার্বভৌম জাতি হিসেবে টিকে থাকার আয়োজন, ইচ্ছা ও রাজনীতির স্বাধীনতা এবং অবশ্যই অর্থনৈতিক মুক্তি। বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্পষ্টভাবেই উচ্চারণ করেছিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’।

এই মুক্তির সংগ্রামে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে তরুণ প্রজন্ম একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামীদের মতোই স্বপ্ন-সাহস নিয়ে এগিয়ে আসবে, এটিই প্রত্যাশা। স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য বেশি প্রয়োজন সংগ্রাম ও শক্তির। আর স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন প্রযুক্তি-কৌশল, ঐক্য ও ন্যায়বোধ। এছাড়া স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে জ্ঞান-বুদ্ধি, শিক্ষা ও সৎ বিবেচনাকে কাজে লাগানো একান্ত অপরিহার্য। তাই স্বাধীনতার মর্ম উপলব্ধি করে একে রক্ষা করা সবার জাতীয় কর্তব্য।

আগামীর বাংলাদেশ হোক সম্ভাবনা ও স্বপ্নপূরণের মহা অঙ্গীকার। শতাব্দীর অঙ্গীকার পূরণে তরুণদের সঠিক নেতৃত্বের বিকাশ আবশ্যক। সম্ভাবনাময় ও স্বপ্নীল বাংলাদেশ গঠনের মহান ব্রতে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য এখন থেকেই বাস্তবায়নযোগ্য সব প্রকল্প-কার্যক্রম সুষ্ঠ পরিচালনার জন্য নির্ভরযোগ্য পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি ও রূপরেখা তৈরি করতে হবে।

এই লক্ষ্যে ২০২৫ সালকে ধাপ-১ হিসেবে এবং ২০৩৫ সালকে ধাপ-২ হিসেবে বিবেচনাপূর্বক মূল্যায়ন ও কার্যপত্রের প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার। আর এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে প্রাতিষ্ঠানিকতায় রূপান্তরকরণের পদক্ষেপগ্রহণ করেই আগামীর স্বপ্নপূরণের সব অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথ সুগম করতে হবে। পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নভিত্তিক উন্নয়নের নতুন রূপরেখায় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার কথা ভাবতে হবে।

লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক। সাবেক উপমহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি।

এ বিভাগের আরো খবর