বিজয়ের মাস আমাদের জন্ম-জরুলের মতো। বাঙালি হাজার বছরের সংগ্রাম ও আকাঙ্ক্ষার পরিসমাপ্তি হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রাম ও আতঙ্কবেষ্টিত প্রহর অতিক্রম করে এক নদী রক্ত পেরিয়ে আমরা অর্জন করেছিলাম স্বাধীনতা।
আমাদের লাল সবুজের পতাকা, আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশের প্রতীক আমাদের মানচিত্র। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দুলাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা। এই মাটির দিকে তাকালে তাই ভেতরে প্রশান্তি জাগে, দ্রোহ জাগে, আবেগে গেয়ে উঠতে ইচ্ছা করে- ‘আমরা হারবো না, তোমার মাটির একটি কণাও ছাড়বো না।’ ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস।
শৃঙ্খলমুক্তির মাস কিন্তু তার আগে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার দায় পূরণ আসলেই সম্ভব নয়। বিজয়ের আগের মুহূর্তে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী নিজেদের নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে সবচেয়ে বড় সর্বনাশটি করে যায়। বাংলাদেশকে চিরতরে মেধাশূন্য করার নীলনকশা অনুযায়ী দেশের মূল স্তম্ভ বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
১৪ ডিসেম্বরের সে দাগ আমাদের শরীরে লেগে আছে। যে ঘাতক দালালেরা একাজ করতে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীকে সাহায্য করেছে তারা জিয়াউর রহমান, এরশাদের সঙ্গে থেকেছে। ক্ষমতার মধু খেয়েছে। বাংলার ৩০ লাখ শহীদের রক্তমাখা পতাকা উড়েছে তাদের গাড়িতে। আর বুদ্ধিজীবীদের পরিবার, মুক্তিযোদ্ধদের বিড়ম্বনার শেষ ছিল না। এসব কথা ভাবলে মনের কোণে কষ্টের একটা সলতে জ্বালতেই থাকে। কোথায় যেন একটা চাপা কষ্ট থেকেই যায়।
কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যাদের মেধা এবং বুদ্ধির ওপর ভর করে আমাদের যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের পুনর্গঠন এবং উন্নত দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সেই বুদ্ধিজীবীদেরই আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম যুদ্ধ জয়ের আগেই। বুদ্ধিজীবী এবং জ্ঞানী বা মুক্তচিন্তার ধারক বাহকরা সমান্তরাল মেরুতে অবস্থান করেন। কবি-সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ-সমাজসংস্কারক, শিক্ষক শ্রেণির মধ্যে থেকেই সাধারণত বুদ্ধিজীবীদের উত্থান লক্ষণীয়। তবে সমাজের নিম্নস্তর থেকেও বুদ্ধিজীবীদের আবির্ভাব ঘটে।
বুদ্ধিজীবীরা যেসব সময় উচ্চশিক্ষিত হবেন এমন নয়। তিনি স্বশিক্ষিতও হতে পারেন। কোনো দেশকে নিঃস্ব করতে হলে সে দেশকে বুদ্ধিজীবীহীন করতে পারলেই সে দেশের অগ্রগতি রোধ করা সহজ। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস। রায়েরবাজার, জল্লাদখানা ও মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ দেখলে আামি অস্থির হয়ে যাই। শহীদ পরিবারের জীবন-সংগ্রামের গ্রামের কথা শুনলে চোখ ফেটে যায়। বুক ভেঙে আসে। সেসব পাকিস্তানি দালালরা যেভাবে হত্যা করেছিল আমাদের সেরা সন্তানদের, সে বর্বরতা যেকোনো বিভীষিকাকে হার মানায়।
আমি একবার মগবাজারের শান্তিবাগে এক ভদ্রলোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। এই ভদ্রলোকের সাক্ষাৎকারের সব ব্যবস্থা করেছিলেন শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলে অকাল প্রয়াত সুমন ভাই। ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে চোখ বেঁধে নিয়ে আসা হতো একেকজনকে ভোরের দিকে তাদের নিয়ে যাওয়া হতো বিল ও জলকাদা ভরা এলাকায়। যার দূর অঞ্চলে মানুষের বসতি। এসব এলাকা তখন এতই নির্জন ছিল যে চিৎকার করলেও কেউ শুনবে না। যে ভদ্রলোকের আমি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ধরে নিয়ে যাওয়ার দ্বিতীয় রাতে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুর। কাদাজলভরা বিল এলাকা।
কোনো জায়গায় জনমানবের সাড়া নেই। আমাদের চোখ খুলে দাঁড় করানো হলো। এ সময় ওই ভদ্রলোক ভাবেন মরতে যখন হবেই তখোন বাঁচার চেষ্টা করতে দোষ কী? তিনি ছুট দেন। গুলি ছুড়তে থাকে পাকিস্তানিরা, তারা তাকে গুলিবিদ্ধ করতে পারেনি অন্ধকারে হারিয়ে যান এই বীরযোদ্ধা। আমি শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর মুখে বার বার শুনেছি কীভাবে বরেণ্য চক্ষু চিকিৎসক আলীম চৌধুরীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আর মাওলানা মান্নান তারপরে কি সুখনিদ্রা দিয়ে গেছেন। ইনকিলাবি সেই আমলকে কি ভোলা যায়? শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেন। ইত্তেফাকের বরেন্য এই সাংবাদিককে কীভাবে টেনে হিঁচড়ে তার বাড়ি থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ইনফর্মার কে ছিল তা জেনেছি।
অথচ আজ সেসব রাজাকার এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত যে মুক্তিযোদ্ধরা তাদের নাম বলতে ভয় পায়। এখনও রাজাকারদের ভয় পায় মুক্তিযোদ্ধরা- যারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিল। গত ৩ বছর আগে আমি ১৯৭১ সালে যেসব কর্মচারী ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজে চাকরি করতো তাদের ফোন নম্বর জোগাড় করে তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, সেখানে কী করা হতো তা জানতে। কেউ বলতে রাজি নন। কারণ প্রতিটি এলাকায় রাজাকাররা এত ভালো করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে যে রাজাকারকে রাজাকার বলা যায় না। অথচ জীবন বাঁচাতে আপসরফা করলে অনেক বুদ্ধিজীবীই হয়তো সেদিন প্রাণে বেঁচে যেতে পারতেন। আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা আপসরফা করেননি। তারা এটা মেনে নেননি। তারা শিখেছিলেন দেশপ্রেম- শিখেছিলেন ভালোবাসা।
পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসনামলে পূর্ব বাংলার লেখক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বুদ্ধিজীবীরা সর্বদা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। জাতিকে আলোর পথ দেখিয়েছেন। তৎকালীন সরকারের সঙ্গে জণগণের স্বার্থের ব্যাপারে কখনও আপস করেননি। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সব সময় দেশপ্রেমে উজ্জীবনের কথা বলে গেছেন জীবনের শেষ দিন অবধি।
২০১৩ সালে একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচারের দাবিতে যে গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে ওঠে তার মধ্যেই আমরা দেখেছিলাম জঙ্গিবাদের ভয়াবহ উত্থান। প্রগতিশীল লেখকদের ব্লগার-নাস্তিক নাম দিয়ে হত্যার নারকীয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল দেশে। গীর্জার যাজক, মন্দিরের দরিদ্র পুরোহিত, সৃজনশীল প্রকাশককে একে একে হত্যার খবর আসছিল। ভীত হয়ে পড়ছিল সবাই। কী অসহনীয় এক দহন আর যন্ত্রণা তখন পেয়ে বসেছিল সবাইকে!
আসলে ২০০৪ সাল থেকে প্রকাশ্যে সাংস্কৃতিক, উদারমনা ও মুক্তচিন্তার ব্যক্তিত্বদের হত্যার অভিযানে নামে খুনিরা। ওই সালে মুক্তমনা লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. হুমায়ুন আজাদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুসকে নৃসংশভাবে হত্যার মাধ্যমে খুনের অভিযান শুরু হয়। সর্বশেষ খুনের শিকার হন রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ব্লগার ওয়াসিকুর রহমান। এ নিয়ে ২০১৫ পর্যন্ত যে হিসাব ছিল তা ছিল- ১১ বছরে ৮ ব্লগারসহ আলোচিত ২২ জন খুন হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি অনুসারে, একই কায়দায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে অথবা গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে এদের। এছাড়া হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছেন আরও ৬ ব্লগার। (চট্টগ্রাম প্রতিদিন ১ এপ্রিল ২০১৫)।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন হুমায়ুন আজাদ। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে বের হওয়ার সময় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে নয় জঙ্গি হামলাকারী ঢাকার গুলশান এলাকায় অবস্থিত হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা বোমা নিক্ষেপ ও কয়েক ডজন মানুষকে জিম্মি করে এবং পুলিশের সঙ্গে তাদের গুলি ও বোমাবর্ষণের ফলে অন্তত চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়।
এই ঘটনায় মোট আটাশ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে সতেরো জন বিদেশি, দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং ছয় জন বন্দুকধারী। পরবর্তী সময়ে বন্দুকধারীদের একজনকে বন্দি করা হয় এবং ১৩ জিম্মিকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী, পুলিশ, র্যাব এবং যৌথবাহিনী মুক্ত করে।
ব্লগারসহ আলোচিত খুন হওয়া বাকি ২২ জনের মধ্যে বিজ্ঞান-বিষয়ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়, যাকে ২৬ ফেব্রুয়ারি টিএসসির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও হামলার শিকার হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও মুক্তচিন্তার শফিউল ইসলাম লিলনকে বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে আমবাগান গ্রামের ফ্ল্যাটে কুপিয়ে এবং গলা কেটে হত্যা করা হয় ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও মুক্তচিন্তার সমর্থক আশরাফুল ইসলামকে হত্যা করা হয়।
আমরা লক্ষ করেছি বুদ্ধিজীবী ও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দেলনের কর্মী ও প্রগতিমনাদের নাস্তিক-ব্লগার আখ্যা দিয়ে ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের ১৭৪ নম্বরে নিজ বাড়িতে গলা কেটে হত্যা করা হয় ইসলামি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে। ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর আর কে মিশন রোডের বাড়িতে কথিত ‘আধ্যাত্মিক পীর’ ইমাম মাহদীর সেনাপতি দাবিদার লুৎফর রহমান ফারুক ও তার বড় ছেলে সরোয়ার ইসলাম ফারুক, খাদেম মঞ্জুর আলম মঞ্জু, মুরিদ শাহিন, রাসেল ও মুজিবুল সরকারসহ ৬ জনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
২০১৩ সালের ৮ আগস্ট খুলনার খালিশপুরে মুসলিম উম্মাহ সংগঠনের প্রধান ও ধর্মীয় নেতা তৈয়েবুর রহমান ও তার কিশোর ছেলে নাজমুম মনিরকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কবি নজরুল ইসলাম হলে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ব্লগার আরিফ রায়হান দ্বীপকে। ২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের কর্মী ও ব্লগার জাফর মুন্সিকে হত্যা করা হয়।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্লগার মামুন হোসেন, ২ মার্চ ব্লগার জগৎ জ্যোতি তালুকদার ও ব্লগার জিয়াউদ্দিন জাকারিয়া বাবুকে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পল্লবীর কালশীর পলাশনগরে গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন খুন হন। ২০১০ সালে ঢাকার উত্তরায় মসজিদের ইমাম, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জেএমবির দলছুট সদস্য রাশিদুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আর ২০০৬ সালে খুন হন বিশ্ববিদালয়ের ভূতত্ত্ব খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের, ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশে বিনোদপুরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অধ্যাপক ইউনুসকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
২০১৩ সালের জুনে এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় কোপানো হয় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার রাকিব আল মামুনকে। ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট বুয়েটের আরেক ছাত্র তন্ময় আহমেদকে কুপিয়ে জখম করা হয়। গত ১১ বছরে ২২ জন বুদ্ধিজীবী লেখক ভিন্ন সময়ে ভিন্ন স্থানে খুনের শিকার হলেও সব ঘটনার মোটিভ একই দাবি করে এসব ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ প্রতিটি ঘটনাতেই ধর্মান্ধ উগ্রপন্থি গোষ্ঠীর জড়িত থাকার গন্ধ খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু কোনো একটি ঘটনার আসল খুনিদের চিহ্নিত কিংবা বিচারের আওতায় আনতে পারেনি পুলিশ।
ফলে মুক্তচিন্তার ব্যক্তিদের হত্যার ধারাবাহিক মিশনের অংশ হিসেবে শিক্ষক, লেখক ও ব্লগারদের একে একে হত্যা করা হয়েছে তখন। এটা ১৯৭১-এর মতো আরেকটি নীলনকশা কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মুক্তমনা না হলেও রাজাকারদের ছানাপোনারা কিন্তু পত্র-পল্লবে বিকশিত হচ্ছে জিহাদি জোস নিয়ে।
নব্বই দশকের পরে আফগান বিপ্লবকে সামনে রেখে অনেক মাদ্রাসা ছাত্র সেখানে যুদ্ধ করেছে এরকম নজির আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর বক্তব্যের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। যারা এক সময় মিছিল স্লোগান দিত ‘আমরা সবাই তালেবান/ বাংলা হবে আফগান’। আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পরে তারা যেন কাঁঠাল কাঠের চৌকিতে দোল খাচ্ছে।
আজও এরা মানুষের ভেতরে ঘাপটি মেরে আছে। তাদের ছানা-পোনারা বিভিন্ন নামে চারদিকে ছড়িয়ে আছে। এদের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরি। সঙ্গে এ কথাও ঠিক ১৯৭১ সালের আগেও মৌলবাদ ছিল, প্রতিক্রিয়াশীল ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র তাদের মদদ দিত। পরে সেনাবাহিনীও এসেছিল একলাখের মতো। কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষ লড়াই করে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা। যাদের ছবি আমরা এক্সিবিশনের দেখি এরা সব সাধারণ মেহনতি মানুষ। মাটি রক্ষার সংগ্রামে বাঙালি রক্ত দিতে দ্বিধা করে না। বার বার এটা প্রমাণিত। ইতিহাসই সাক্ষী।
লেখক: গবেষক-প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক