বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডা. মুরাদ হাসান ও সীমা লঙ্ঘনের দায়

  •    
  • ৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৩:৩২

ডা. মুরাদ হাসান যদি একটু সচেতন হতেন, তাহলে দেখতে পেতেন, চারপাশে কত তারকার পতন ঘটেছে স্রেফ কথা আর আচরণের কারণে। যুবলীগের একসময়কার দাপুটে নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট এখন কারাগারে। যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী হারিয়ে গেছেন। গাজীপুরের একচ্ছত্র সম্রাট হয়ে ওঠা সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এখন নিঃস্ব। রাজশাহীর কাটাখালীর পৌর মেয়র আব্বাস আলী এখন কারাগারে। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে মুরাদ হাসান অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।

ডা. মুরাদ হাসানের সবই ছিল। তার পিতা মতিউর রহমান তালুকদার সাবেক সাংসদ এবং জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তিনি নিজে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ছাত্রজীবনে ছিলেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। পিতার পথ ধরে তিনিও রাজনীতিতে আসেন।

২০০৮ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামালপুরের একটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে দায়িত্ব পান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর। তার ভাই হাইকোর্টের বিচারপতি। সব থাকলেও স্রেফ বাগসংযম করতে না পারায় আজ তিনি সব হারিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমে বইমেলায় গাড়ি নিয়ে ঢুকে বিতর্কিত হন তিনি।

এরপর স্কয়ার হাসপাতালের সিকিউরিটির সঙ্গে ঝামেলা করার ফলে মন্ত্রণালয় পরিবর্তন হয় তার। এরপর দায়িত্ব পান তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর। কিন্তু মন্ত্রণালয় বদল থেকে শিক্ষা নেননি তিনি। বরং তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। একের পর এক বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমাজের সব মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলেন।

গত অক্টোবরে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রথম বিতর্ক সৃষ্টি করেন তিনি। তখন সমাজের বড় একটা অংশ তার সমালোচনা করে। তবে ৭২-এর সংবিধানের পক্ষে বলায় একটা অংশের সমর্থনও পান ডা. মুরাদ হাসান। তবে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের পক্ষে, ৭২-এর সংবিধানের পক্ষে তার অবস্থানটিও শেষপর্যন্ত বিতর্কই তৈরি করে তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আর শব্দচয়নের কারণে।

যেভাবে তিনি ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, এটা আমি মানি না’ বলছিলেন; তাতে অনেকেই এটাকে ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান বলে ধরে নিয়ে সমালোচনা করেন। বিভিন্ন সময়ে বিএনপি, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের একজন প্রতিমন্ত্রী বা সাংসদ এটা করতেই পারেন। কিন্তু গত সপ্তাহে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, তারেক রহমান এবং সর্বোপরি তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে যে ভাষায় তিনি সমালোচনা করেছেন তা ছাড়িয়ে যায় শালীনতার সব সীমা।

কট্টর বিএনপি বিদ্বেষেী কেউও এটা ভালোভাবে নেয়নি। একই সময়ে তিনি ডা. জাফরউল্লা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিয়ে তিনি অশ্লীল অভিযোগ করে ধিকৃত হন নিজদলেও। আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসে তার পৃথিবী, বাড়তে থাকে সমালোচনার পরিধি। সবচেয়ে বড় কথা হলো- নিজের এই অশালীন বত্তব্যকে জায়েজ করার জন্য বার বার তিনি প্রধানমন্ত্রীকে মা হিসেবে সম্বোধন করেন এবং বলেন, তিনি যা করছেন, তা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই করছেন। কিন্তু এটা যে সত্য নয়, তা প্রমাণিত হতে সময় বেশি লাগেনি।

তার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠোকা হয়, তার দুই বছরের পুরোনো একটি টেলিফোন কথোপকথন ফাঁস হওয়ায়। সেখানে তিনি চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে অশ্লীলতম ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে তুলে আনার হুমকিও দেন। তাকে ধর্ষণ করার হুমকি দেন। হুমকির জন্য যে ভাষা তিনি প্রয়োগ করেছেন, তা আসলে শ্লীলতা, শালীনতার সব সীমা অতিক্রম করেছে। মন্ত্রিসভার সদস্য বা সংসদ সদস্য বলে নয়, কোনো সুস্থ, স্বাভাবিক, শিক্ষিত মানুষের পক্ষে এ ধরনের নোংরা ভাষা উচ্চারণ করা কল্পনার অতীত। এ স্রেফ বস্তির নোংরামি।

ডা. মুরাদ হাসান বরাবরই পারিবারিক ঐতিহ্যের বড়াই করতেন। কিন্তু নিজের মুখের ভাষায় তিনি প্রমাণ করেছেন, পারিবারিক মূল্যবোধ থেকে কিছু শিখতে পারেননি তিনি। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে পড়লেও আসলে কোনো শিক্ষা তার নেই। ডা. মুরাদ যা করেছেন তাতে তিনি আওয়ামী লীগের বোঝা, রাজনীতির কীট, নারী সমাজের শত্রু; সর্বোপরি সভ্যতার কলঙ্ক। বিভিন্ন ক্লাবে তার নানাবিধ অপকর্মের কথাও এখন বাতাসে ভাসছে। ডা. মুরাদ হাসানের আজকের পরিণতির জন্য তিনি নিজেই দায়ী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই তাকে মানসিক হাসপাতাল বা মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানোর দাবি করেছেন।

ডা. মুরাদ হাসান যদি একটু সচেতন হতেন, তাহলে দেখতে পেতেন, চারপাশে কত তারকার পতন ঘটেছে স্রেফ কথা আর আচরণের কারণে। যুবলীগের একসময়কার দাপুটে নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট এখন কারাগারে। যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী হারিয়ে গেছেন। গাজীপুরের একচ্ছত্র সম্রাট হয়ে ওঠা সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এখন নিঃস্ব। রাজশাহীর কাটাখালীর পৌর মেয়র আব্বাস আলী এখন কারাগারে। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে মুরাদ হাসান অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তাই চারপাশে এতগুলো রেড সিগন্যালও তার বেপরোয়া গতি থামাতে পারেনি। কোনো সতর্কবাণীই তার কানে ঢোকেনি। অবশ্যম্ভাবী পতনের দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে গেছেন তিনি।

ডা. মুরাদ হাসানের এই পতন আওয়ামী লীগের আরও অনেকের জন্য সতর্কবার্তা। সবাইকে বুঝতে হবে, অন্যায় করে, বাজে কথা বলে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। আর সবকিছুরই একটা সীমা আছে। সীমা লঙ্ঘনকারীকে আল্লাহও পছন্দ করেন না।

লেখক: সাংবাদিক ও কলাম লেখক

এ বিভাগের আরো খবর