বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১২ নভেম্বর: বাঙালির কলঙ্কমুক্তির দিন

  • আহমেদ রিয়াজ   
  • ১২ নভেম্বর, ২০২১ ১৬:৩১

১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সামরিক আইন প্রত্যাহারের কারণে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অঘোষিত রাষ্ট্রপতি মোশতাকের জারি করা ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি অধ্যাদেশটি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। ফলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধা ছিল না। সে পথ আটকাতেই জিয়া সরকার জাতীয় সংসদকে কলঙ্কিত করে পঞ্চম সংশোধনী আনে। তখন তারা এটাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করেছিল আইনের মাধ্যমে।

খুন! হত্যা! নৃশংসতা! খুনিদের উল্লাস। বিচারহীনতা। খুনের পর রাষ্ট্রের প্রথম ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির রাষ্ট্রীয় বাসভবনে খুনিদের আয়েশি ও রাজারহালে জীবন-যাপন। রাষ্ট্রপতির পৃষ্ঠপোষকতায় চূড়ান্ত রকমের নষ্টামি। নৃশংস খুনের বিচার বন্ধের জন্য আইন পাস করে সংবিধান সংশোধন। তারপর খুনিদের বিদেশি দূতাবাসে লোভনীয় চাকরি।

এই চাকরির জন্য খুনিরা যে বেতন পেত, সে বেতন যেত কোথা থেকে? বাংলাদেশ থেকে। কী নির্মম পরিহাস! বাংলাদেশ নামক বাঙালির একমাত্র রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের এভাবেই পুরস্কৃত করা হলো। যেখানে নৃশংস খুনের পর জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের রক্তের বন্যায় ভেসে গিয়েছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি, সেখানে পুরস্কারের বন্যায় ভেসে গেল জাতির পিতার খুনিরা।

পৃথিবীতে নিমকহারাম হিসেবে দুর্নাম রয়েছে ইংরেজদের। ইংরেজদের সেই দুর্নামও ছাড়িয়ে গেল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরবর্তী কয়েক মাসের ঘটনায়। শুধু ইংরেজদের দুর্নাম নয়, ছাড়িয়ে গেল ইতিহাসে ঘটে যাওয়া আরও কিছু নৃশংসতাকেও।

খ্রিস্টপূর্ব ৪৪ সালের ১৫ মার্চ রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের প্রধান হত্যাকারী মার্কাস জুনিয়াস ব্রুটাসও ছিল সম্রাটের প্রিয়ভাজন। ঠিক যেমন মোশতাক ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রিয়ভাজন। এই ব্রুটাসকে কিন্তু রেহাই দেয়নি রোমান কর্তৃপক্ষ। তার বিচারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পালিয়ে গিয়ে আত্মহত্যা করে ইজ্জত বাঁচিয়েছিল ব্রুটাস।

১৮৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের হত্যাকারী উইলকিস বুথের বিচারও শুরু হয়ে গিয়েছিল। বুথও আত্মহত্যা করে ইজ্জত বাঁচায়। তবে তার সহযোগী বাকি সাতজনের ঠিকই সাজা হয়। ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধীকে হত্যার জন্য ফাঁসি হয়েছিল নাথুরাম গডসের। যদিও মৃত্যুর আগে গান্ধীজি স্বয়ং তাকে ক্ষমা করতে বলেছিলেন। কিন্তু আইন মেনে তার সাজা হয়েছিল।

দুনিয়ার ইতিহাসে এরকম আরও অসংখ্য নজির পাওয়া যাবে। যেখানে খুনিরা কেবল ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা একমাত্র মানুষটাকেই হত্যা করেছে। তার আত্মীয়-পরিজনকে খুন করেনি। কিন্তু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে কী ঘটল? জাতির পিতার সঙ্গে তার পরিবারের মোট ২১ সদস্যকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খুন করার পর তাদের বিচার তো হলোই না, বরং তারা পেল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। যার নজির বিশ্ব ইতিহাসে কোথাও নেই।

খুনের পর রাষ্ট্রপতির রাষ্ট্রীয় বাসভবন বঙ্গভবনে সদম্ভে আশ্রয় নেয় খুনিরা। সেখানে তারা কীভাবে সময় কাটিয়েছে?

তখনকার সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মুসা সাদিকের যাতায়াত ছিল বঙ্গভবনে। ‘১৫ আগস্ট ট্রাজেডী ও বঙ্গভবনের অজানা অধ্যায়’ গ্রন্থে মুসা সাদিক জানিয়েছেন-

‘বঙ্গভবনে খুনিদের একদিন পার হলো। ১৬ই আগস্ট সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্টের ফটোগ্রাফার আমির খসরু থেকে খবর পেয়ে আমি ও কুমার শংকর হাজরা (খুনি মোশতাকের অফিসার) দোতলায় গেলাম খুনিদের মাতলামি করার ঘটনা দেখতে। আমরা দুজন দোতলায় লিফটের দরজা খুলতেই দেখলাম লিফট থেকে ১০/১২ হাত দূরে বঙ্গবন্ধুর এক খুনি রিসালদার মহিউদ্দিনের এক হাতে মদের বোতল, আরেক হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। তার সাথে আরও ২০/২৫ জন, তাদের হাতেও মদের বোতল ও স্টেনগান ও শর্টগান। আমাদের দিকে মদের বোতল উঁচু করে মহিউদ্দিন বলছে, “শেখ মুজিবের হারামজাদাদের বলে দে তাদের সব খতম করেছি আরও করবো।... পাকিস্তান জিন্দাবাদ বল”।... রাত ১১টার পরে খুনিদের ২টি মাইক্রোবাসে সুন্দরী মহিলারা এসে বঙ্গভবনে নামলো। বলা হলো কিলারদের স্ত্রীরা এসেছে। অনেকে বিশ্বাস করতে পারল না। তাদের মনোরঞ্জনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদেরকে বঙ্গভবনে পাঠিয়েছে বলে জানলাম।” (পৃ. ৫২)

একটা দেশের রাষ্ট্রপতি শুধু নন, জাতির জনকের খুনিদের এমন আনন্দ উল্লাসের ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে দ্বিতীয়টি কোথাও আছে? নেই।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাত্র ৯ দিনের মাথায় ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট সেনাবাহিনীর প্রধান করা হয় জিয়াউর রহমানকে। তারপর জাতির পিতাকে হত্যার এক মাস দশদিন পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মানব সভ্যতা ও ইতিহাসের কলঙ্কতম কালো আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করল।

‘দি বাংলাদেশ গেজেট, পাবলিশড বাই অথরিটি’ শিরোনামের ওই ‘দায়মুক্তি অধ্যাদেশ’টিতে ছিল খন্দকার মোশতাক আহমদ ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচ রহমানের সাক্ষর। অধ্যাদেশটির দুই অংশের প্রথম অংশে বলা হয়- ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবৎ আইনের পরিপন্থি যা-ই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।

দ্বিতীয় অংশে ছিল- রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হলো। অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।

এরপর পর্দার আড়ালে থাকা আসল পাকিস্তানপ্রেমী থলের বিড়াল বের হতে শুরু করল ধীরে ধীরে। সামরিক অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের পর ১৯৭৬ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব নিল জিয়াউর রহমান।

১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বিচারপতি আবু সায়েমকে কৌশলে হটিয়ে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা দখল করল এই থলের বিড়াল। রাষ্ট্রপতি হয়ে একটুও দেরি করল না জিয়াউর রহমান। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার জোরে খন্দকারের মোশতাকের ওই অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করল। কেন করল? কারণটা খুব সহজ। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া যদি আটকানো না যায়, তাহলে তো থলের বিড়ালকে চিনে ফেলবে জাতি, বিশ্ব জেনে যাবে মূল কারিগর কে?

১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ আধিপত্য দখল করে জিয়া সরকার। ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী পাস করানো হয়। সংশোধনীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দায়মুক্তি অধ্যাদেশসহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে বৈধতা দেয়া হয়। আইনটির নাম ছিল ‘সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) আইন, ১৯৭৯’। এ সংশোধনীতে বলা হয়-

‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হইতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখের (উভয় দিনসহ) মধ্যে প্রণীত সকল ফরমান, ফরমান আদেশ, সামরিক আইন প্রবিধান, সামরিক আইন আদেশ, ও অন্যান্য আইন, উক্ত মেয়াদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত আদেশ, কৃত কাজকর্ম, গৃহীত ব্যবস্থা বা কার্যধারাসমূহ, অথবা প্রণীত, কৃত বা গৃহীত বলিয়া বিবেচিত আদেশ, কাজকর্ম, ব্যবস্থা বা কার্যধারাসমূহ এতদ্বারা অনুমোদিত ও সমর্থিত হইল এবং ঐ সকল আদেশ, কাজকর্ম, ব্যবস্থা বা কার্যধারাসমূহ বৈধভাবে প্রণীত, কৃত বা গৃহীত হইয়াছে বলিয়া ঘোষিত হইল, এবং তৎসম্পর্কে কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো কারণেই কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।’

এই সংশোধনীর উদ্দেশ্য ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের পাকাপোক্তভাবে দায়মুক্ত করা। কিন্তু ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সামরিক আইন প্রত্যাহারের কারণে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অঘোষিত রাষ্ট্রপতি মোশতাকের জারি করা ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি অধ্যাদেশটি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। ফলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধা ছিল না।

সে পথ আটকাতেই জিয়া সরকার জাতীয় সংসদকে কলঙ্কিত করে পঞ্চম সংশোধনী আনে। তখন তারা এটাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করেছিল আইনের মাধ্যমে। এবং তাদের ধারণা ছিল সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সমর্থন ছাড়া এ আইন যেহেতু পরিবর্তন করা যাবে না এবং সংসদে দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন পাওয়া সহজ কথা নয়- কাজেই বাংলাদেশে জাতির পিতার হত্যার বিচার করা সহজ হবে না।

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান সংসদের মাধ্যমে খুন করেও রেহাই পেল খুনিরা। আর বোনাস হিসেবে অযোগ্য হয়েও পেল অপ্রত্যাশিত উপহার-বিদেশি দূতবাসে চাকরি। লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম চীনের প্রথম সচিব, লে. কর্নেল আজিজ পাশা আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব, মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব, মেজর বজলুল হুদা পাকিস্তানের দ্বিতীয় সচিব, মেজর শাহরিয়ার রশিদ ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব, মেজর রাশেদ চৌধুরী সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব, মেজর নূর চৌধুরী ইরানে দ্বিতীয় সচিব, মেজর শরিফুল হোসেন কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব, কর্নেল কিসমত হাশেম আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব, লে. নাজমুল হোসেন কানাডায় তৃতীয় সচিব, লে. আবদুল মাজেদ সেনেগালে তৃতীয় সচিব বানিয়ে পুরস্কৃত করা হলো খুনিদের।

অনেকের সন্দেহ থাকতে পারে, এতসব ঘটনার মধ্যে বিশেষ একজনের নাম কেন আনা হচ্ছে। তাকে তো সিপাহিরাই ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জামাই আদরে সেনাপ্রধান বানিয়েছে। তারপর ছলেবলেকৌশলে যেভাবেই হোক প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতিও হয়েছে। ১৯৮৪ সালে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ফারুক ও রশীদের একটি বই প্রকাশিত হয়। বইয়ের নাম ‘দি রোড টু ফ্রিডম’। সে বই থেকে অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস তার ‘বাংলাদেশ: আ লিগ্যাসি অব ব্লাড’ বইতে একটি উদ্বৃতি দিয়েছেন-

“ফারুক ও রশীদের মতে আসল ষড়যন্ত্রকারী হচ্ছেন জেনারেল জিয়া। তিনি নভেম্বরের ২ তারিখ ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু খালেদ তার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন।”

পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিকে ঘোলাটে করে তোলা হয়। বঙ্গবন্ধুর খুনির আসল চেহারা যাতে প্রকাশ না পায়, সেজন্য যত রকমের অপচেষ্টা, সবই করা হয়েছিল। দেশের মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে সঙ্গে চালানো হয়েছিল গোয়েবলসীয় মিথ্যাচার। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কুৎসা, গুজব রটানো হয়েছিল যাচ্ছে তাইভাবে। সেই গোয়েবলসীয় মিথ্যা আর গুজব বিশ্বাসও করেছিল দেশের মানুষ।

জাতির পিতাকে হত্যা যে জাতি করতে পারে, সে জাতি সম্পর্কে বিশ্বের ধারণা পাল্টে গিয়েছিল। একাত্তরের বীরের জাতি বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে গিয়েছিল ‘নিমকহারাম’ জাতি হিসেবে। জাতির পিতার খুনিদের রক্ষার জন্য করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের কারণে তখনকার ক্ষমতাসীন জেনারেল বাঙালি জাতিকে ঘৃণিত জাতির পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিল। জাতির কপালে বসিয়ে দিয়েছিল ‘কলঙ্কতিলক’। জাতির সম্মানবোধ, গৌরবগাথাকে গৌণ করে ফেলেছিল।

জাতির কাছে বিশ্বের কাছে হারানো ভাবমূর্তি ফিরে পাওয়ার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের কোনো বিকল্প ছিল না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচার না হয়ে উল্টো বিচার না করার যে আইন প্রণয়ন হলো, তাতে বিচারহীনতার চর্চা শুরু হয়ে গেল। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ঢুকে পড়েছিল জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে। প্রশাসনের অলিতে গলিতে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হলো দেশের বিচারপ্রার্থী অসংখ্য অসহায় মানুষ। ন্যায়বিচার হয়েছিল ভূলুণ্ঠিত। নুয়ে পড়েছিল আইনের শাসন।

১৯৯৬ সালে টানা একুশ বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির কবল থেকে মুক্তি পেল বাংলাদেশ। নির্বাচনে জয়লাভ করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলো স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় এসেই জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার উদ্যোগ নিল দলটি। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের প্রচেষ্টা শুরু করল। তারপর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ রহিতকরণ বিল’ পাস হলো জাতীয় সংসদে। ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি বিলটিকে সাক্ষর করার পর এটি পরিপূর্ণ আইনে পরিণত হলো।

‘নিমকহারাম’ তকমা পাওয়া জাতি আবার একাত্তরের গৌরবের কাছে ফিরতে পেরেছে এই অধ্যাদেশ বাতিলের কারণেই। জাতি তার পিতার হত্যার বিচার করার আইনগত অধিকার ফিরে পেয়েছে। বিচারহীনতার গজব থেকে মুক্ত হয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্যময় বাঙালি সংস্কৃতি। কাজেই ১২ নভেম্বর বাঙালি জাতির গৌরব পুনরুদ্ধার দিবস। জাতির কলঙ্কমুক্তির দিন। জাতির ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দিন।

লেখক: শিশুসাহিত্যিক, প্রবন্ধ লেখক।

এ বিভাগের আরো খবর