বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যুবলীগের ৪৯ বছর: শেখ মনি থেকে শেখ পরশ

  • সেলিম আলতাফ জর্জ   
  • ১১ নভেম্বর, ২০২১ ১২:৫৪

যুবসমাজ ধর্মান্ধ রাজনীতির বিরুদ্ধে কাজ করছে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণে শেখ হাসিনার হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করতে বলেছিলেন সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবায়ন মূল লক্ষ্য। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে আগামীর যুবলীগ আর এভাবে এগিয়ে যাবে।

৪৯ বছর আগে এদিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি। শেখ মনি সম্পর্কে বলতে তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক, বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ, লেখক এবং সাংবাদিক।

শেখ মনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাগ্নে এবং বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর, তিনি পারিবারিকভাবে রাজনীতির জ্ঞান অর্জন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন, ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা, ৬৯-এর গণ-আন্দোলনে ছিল তার সক্রিয় অংশগ্রহণ।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছিল অসাধারণ ভূমিকা। জাতির কাছে তিনি স্মরণীয় মুজিববাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য। গণমাধ্যমেও রেখেছেন অবদান, দেশ স্বাধীন হবার পর দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকা সম্পাদনা করেন। সাপ্তাহিক সিনেমারও সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ৭ জুন তার সম্পাদনায় দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস প্রকাশিত হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তার এই বহুমুখী প্রতিভার কারণে দেশের যুবসমাজকে নিয়ে ভাবতে এবং কাজ করতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চার মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে গণতন্ত্র, শোষণমুক্ত শ্রেণি সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে, শিক্ষা, বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে যুবকদের স্বাবলম্বী করতে কাজ শুরু করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশের ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কিছু ঘাতক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে ঘাতকের দল প্রথম আক্রমণ করেন শেখ মনির বাসায়। তারা জানতেন শেখ মনি জীবিত থাকলে ঘাতকেদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না, তাই তার পরিবারসহ তাকে হত্যা করে। অল্পের জন্য বেঁচে যান শিশুপুত্র শেখ ফজলে শামস পরশ এবং শেখ ফজলে নূর তাপস।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে, তৈরি হয় অস্থিরতা।

পাকিস্তানি ভাবধারার সরকার গঠন করে মোশতাক গং, গণভবনে চলে দেনদরবার। ক্যান্টনমেন্টে চলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া সেনাবাহিনীদের হত্যা এবং মামলা। চলে ক্যু পালটা ক্যু। দেশের আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ সব নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে জেলে আটকে রাখা হয়। গণতন্ত্র, শোষণমুক্ত শ্রেণি, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশর পরিবর্তে শুরু হয় মৌলবাদী ও পশ্চাৎপদ চিন্তাধারার রাষ্ট্র ব্যবস্থা।

১৯৭৮ সালের ২য় কংগ্রেসের মাধ্যমে আবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুবলীগ সংগঠিত হতে থাকে প্রস্তুতি নিতে থাকেন আন্দোলনের। এদিকে জিয়া সরকার থেকে শুরু করে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সাহসী ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সব কর্মী যার উদাহরণ যুবলীগকর্মী শহীদ নূর হোসেন । শহীদ নূর হোসেন নিজের জীবন দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরে আনার পথ দেখিয়েছেন।

স্বৈরাচার এরশাদ সরকার পতনের পর বিএনপি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠন করেন এবং যখন দেশের গণতন্ত্রকে আপহরণ করা হচ্ছিল, মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা বলতে পারছিল না, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগামী, কৃষকের ন্যায্য অধিকার, শ্রমিকের মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তখন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ সোচ্চার থেকেছে মানুষের অধিকার আদয়ের। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ আন্দোলন করছে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট যখন চারদিকে হত্যা, গুম, বাড়ি লুট, শিক্ষক হত্যা, ২১ আগস্টে বোমা হামলা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে চাইছিল, ৬৪ জেলায় বোমা হামলা হয়, দুর্নীতিতে বাংলাদেশ পর পর ৫ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হচ্ছিল, তখন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ রাজপথে প্রতিবাদ করে। যুবলীগ যখন রাজপথে আন্দোলন করছে তখন চারদলীয় জোট ক্লিনহার্ট অপারেশনের নামে অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা ও জেলে আটকে রাখে। আওয়ামী যুবলীগ স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি আন্দোলনে ভুমিকা রেখেছে আপরিসীম।

ভূমিকা পালন করছে ২০০৭-২০০৮ সালের সেনাশাসনের বিরুদ্ধে, যখন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করেন তখনও রাজপথে নেমেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। আওয়ামী যুবলীগকে যারা বিভিন্ন কংগ্রেসের মাধ্যমে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং জেল-জুলুম সহ্য করে আবদান রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় সংগঠন। আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গির কবির নানক, মির্জা আজমের মতো নেতারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়েছেন আজকের যুবলীগকে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২১ ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে থাকে। যার অন্যতম কাজ ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যা যুবসমাজের জন্য মাইলফলক হয়েছে, হয়েছে আর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ, দারিদ্র্য বিমোচন, বেকারত্ব দূর, কর্মসংস্থানসহ নানা কাজ।

এরই ধারাবাহিকতায় দেশের মানুষ টানা তিনবার শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ সফলতা পেয়েছে। এর সুফল ভোগ করছে পুরোজাতি। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয়, জিডিপি হার, কর্মসংস্থান, যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজ, অবকাঠামো উন্নয়ন, সড়ক, রেলপথ, পদ্মা সেতু, বিদ্যুৎ, গৃহহীনদের বাসস্থান, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, স্বাধীন গণমাধ্যম, সুশাসন, ন্যায়বিচার, মানুষের অধিকার সব কিছুতে সফলভাবে কাজ করছে শেখ হাসিনার সরকার যার ফলে আমরা উন্নত দেশের দিকে আগ্রসর হচ্ছি। আর তাইতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্লোগান ২০৪১ সালের মধ্যে ‘গ্রাম হবে শহর’।

আর তাই যুবকদের দেশের কাজে লাগানোর জন্য যুবলীগের ধারাবাহিক কংগ্রেসের মাধ্যমে নেতৃত্বর পরিবর্তন হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ৭ম কংগ্রেসে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যুবলীগের নেতৃত্বে আসেন শেখ ফজলে শামস পরশ। শেখ ফজলে শামস পরশকে চেয়ারম্যান এবং মইনুল হোসেন নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। শেখ ফজলে শামস পরশ যুবলীগের নেতৃত্বে আসার পর থেকে যুবলীগকে নানাভাবে সংগঠিত করে চলছেন।

এবারে যুবলীগ গঠিত হয়েছে মেধাবী তরুণদের নিয়ে যার প্রমাণ ইতোমধ্যে যুবসমাজ পেয়েছে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশে যখন করোনা মহামারি শুরু হলো, তখন মানুষের সেবায় কাজ করছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। যাদের খাবার নেই তাদের খাবার ব্যবস্থা করা, অসুস্থ রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ, বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, দেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে মানুষের খোঁজখবর নেয়া, যাতে দেশের মানুষ কেউ না খেয়ে থাকে; সঠিক ও উন্নত চিকিৎসা পায়। এই কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে।

সংকটে-সংগ্রামে, মানবিকতায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ থাকবে মানুষের পাশে। জেলার প্রতিটি জায়গায় নতুন কমিটি করা হচ্ছে, বর্ধিত সভা করা হচ্ছে। যুবসমাজ ধর্মান্ধ রাজনীতির বিরুদ্ধে কাজ করছে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণে শেখ হাসিনার হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করতে বলেছিলেন সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবায়ন মূল লক্ষ্য। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে আগামীর যুবলীগ আর এভাবে এগিয়ে যাবে। ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে যুবলীগের ৪৯ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর যুবসংগঠন বাংলাদেশ আওয়মী যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন শেখ মনি ঠিক ৪৯ বছরে এসে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে শেখ মনির বড় পুত্র শেখ ফজলে শামস পরশ যুবলীগকে নিয়ে যাচ্ছেন এক নতুন স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গঠনে, আজকের এই দিনে যে সব নেতাকর্মী জেল-জুলুম অত্যাচারিত ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন এবং যারা জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

লেখক: সংসদ সদস্য, কুষ্টিয়া-৪। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।

এ বিভাগের আরো খবর