বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসবের নাম দুর্গাপূজা। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশম দিন পর্যন্ত পাঁচ দিন দুর্গোৎসব হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। এ বছর ১১ অক্টোবর দুর্গাষষ্ঠীর মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে এবং ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিনে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে।
দেবী দুর্গার শুরু কোথায়? দেবীর ইতিহাস কী? সেই প্রাচীন যুগে দেবীর কনসেপ্টটা এল কোথা থেকে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। দেবী দুর্গার ঘটনা বিশদভাবে লেখা মার্কণ্ডেয় পুরাণের ‘দেবী-মাহাত্ম্যে’ (যাকে শ্রীশ্রী চণ্ডী বলা হয়)। অন্য সব পুরাণে দেবীকে পাওয়া যায় অন্যভাবে।
তবে দুর্গা— এ নামটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে এমন এক দেবীমূর্তি যার দশ হাতে দশ রকম অস্ত্র, এক পা সিংহের পিঠে, এক পা অসুরের কাঁধে। তাকে ঘিরে থাকে গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী আর কার্তিক ঠাকুর। যারা সেকেলে স্টাইলে ঠাকুর বানায়, তাদের ঠাকুরের পেছনের চালচিত্রে আরও নানারকম ঠাকুরদেবতার ছবি আঁকা থাকে।
আর যারা আধুনিক, তারা প্রতিমার মাথার উপর একখানা ক্যালেন্ডারের শিবঠাকুর ঝুলিয়ে রাখে। মোটামুটি এই মূর্তি বছরের পর বছর ধরে আমরা দেখে অভ্যস্ত। যদিও বিবর্তনের পথ ধরে নতুন যুগের কারিগরদের হাতে এখন দুর্গাদেবীও নতুন চেহারায় আবির্ভূত হচ্ছেন। সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ।
দেবী দুর্গা ও তার সহযোগী দেব-দেবীদের নিয়ে গল্প-কাহিনির শেষ নেই। এর উৎপত্তি-বিকাশ নিয়ে রয়েছে নানা মুনির নানামত। গবেষক-পণ্ডিতগণ প্রত্যেকেই নিজের মতো করে বয়ান দিয়েছেন, নিজেদের মতের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের মত’ বলে কোনোকিছু গ্রহণ করার মতো বাস্তবতা নেই। কোন মত বেশিরভাগ পণ্ডিত দ্বারা সমর্থিত-সেটাও ধাঁধা!
নানা সময় দুর্গাপূজা প্রচলনের নানা কাহিনি শোনা যায়। কালিকা পুরাণ অনুযায়ী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে স্বর্গরাজ্য দখল করে। ব্রহ্মার বরে সে তখন অবধ্য। বিষ্ণু, শিব, ব্রহ্মা ও অন্যান্য দেবতাদের সমবেত তেজ থেকে যে ‘দুর্গা’ নামক নারীমূর্তি আবির্ভূত হয় সেই শক্তিই বিনাশ করেন অসুরকে। ত্রেতাযুগে রাবণ চৈত্র মাসে এই পূজা করতেন। পরে পূজার নামকরণ হয় অকালবোধন। অকালে পূজা বলেই যেন বেশি আদর। তা-ও আবার রাবণবধের জন্য শ্রীরামচন্দ্রের পূজা। পুরাণে অবশ্য এসব বৃত্তান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না।
বাঙালিরা নিজেদের কল্পনা ও সৃজনশীলতা দিয়ে দুর্গাকে নতুন করেন গড়ে নিয়েছে। দুর্গার সঙ্গে ‘আত্মীয়ের’ মতো আরও যেসব দেবদেবী দেখা যায়౼ তারা হলেন- লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ। উপরের দিকে কখনও কখনও ছোট্ট করে শিবের মূর্তিও থাকে।
প্রচলিত ধারণা আছে যে, এ যেন শিব-দুর্গার সংসার, দু’পাশে তাদের চারটি ছেলেমেয়ে! যদিও এ ধারণা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। ওই ৪ জন মোটেই পরস্পরের ভাই-বোন নন। আর দুর্গার পক্ষেও কোনো সন্তানের জন্ম দেয়ার সময় ছিল না।
সরস্বতী কী করে দুর্গার মেয়ে হবেন? তিনি দুর্গার চেয়েও বয়সে বড়। সরস্বতীর দেখা পাই আমরা আমাদের সভ্যতার ঊষালগ্নে, যখন ঋগ্বেদ রচিত হয়। তখন যজ্ঞের সময় একসঙ্গে তিন দেবীকে আহ্বান করা হতো। ইলা, ভারতী ও সরস্বতী। এরা প্রথমে আলাদা ছিল, একসময় ইলা (ইড়া) কোথায় যেন হারিয়ে যান, আর ভারতীও ক্রমশ মিশে যায় সরস্বতীর সঙ্গে।
সরস্বতী দেবী আবার নদীরূপাও বটে। নামের অর্থেই তার পরিচয়। অবশ্য ‘সরস’ শব্দের অন্য অর্থ জ্যোতি, অর্থাৎ তিনি জ্যোতির্ময়ী। ক্রমে নদীরূপটিই প্রাধান্য পায়। সেই কালে ভারতবর্ষে গঙ্গার উল্লেখ খুবই কম, আর্য সভ্যতায় সিন্ধু এবং সরস্বতীই দুই প্রধান নদী। সরস্বতীর তীরে বহু যাগযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হতো। প্রসিদ্ধ রাজারা এর দুই তীরে বাস করতেন। গড়ে ওঠে বহু নগর ও তীর্থস্থান।
এক সময় কোনো অজ্ঞাত কারণে এই সরস্বতী নদী অন্তর্হিত হয়ে যায়। পরিণত হয় মরুভূমিতে। তখন তিনি ছিলেন ধনদাত্রী, অন্নদাত্রী। ‘দানশালিনী অন্নসম্পন্না স্তোতৃবর্গের রক্ষাকারিণী সরস্বতী যেন অন্ন দ্বারা সম্যক রূপে আমাদের তৃপ্তি সাধন করেন।’ সব দেবদেবীরই বিভিন্ন যুগে নানা বিবর্তন হয়েছে।
ঋষিরা তো এক জায়গায় বসে, কমিটি গঠন করে দেব-দেবীদের নির্দিষ্ট রূপ ও গুণাবলির কথা রচনা করেননি। নানাজনে আলাদাভাবে ইচ্ছে মতন শ্লোক লিখেছেন। যুগ যুগ ধরে সেসব পৃথক ভাবমূর্তি একটি মিলিত রূপ পেয়েছে।
আজকের যে সরস্বতীকে বাক্ দেবী বলে মনে করা হয়, আদি যুগে তিনি তা ছিলেন না। নদীরূপে তিনি মানুষের অন্ন ও সম্পদ বৃদ্ধির জন্য আরাধ্যা হন। আবার, দেবীরূপে যুদ্ধও করেন দানবদের বিরুদ্ধে। তখন লক্ষ্মীও আসেননি, দুর্গাও আসেননি। তাদের দু’জনের ভূমিকাও সরস্বতীকে কিছুটা পালন করতে হয়।
সরস্বতীর নানা গুণের কথা বলা হলেও তার মূর্তি স্পষ্ট ছিল না। শুধু বলা হতো তিনি শুভ্রবর্ণা। কালপ্রবাহে সরস্বতীর জন্ম সম্পর্কেও বিভিন্ন গল্প প্রচলিত হয়। কোনো পুরাণে তিনি ব্রহ্মার কন্যা; ব্রহ্মার মুখ থেকে নির্গত হয়। জন্মমাত্রই যুবতী, এই কন্যার রূপ দেখে কামমোহিত ব্রহ্মা তার মিলন চায়।
ব্রহ্মার পুত্ররা এজন্য ছি ছি করায় ব্রহ্মা শেষ পর্যন্ত অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে আত্মহত্যাই করে বসেন! আবার, কোথাও সরস্বতীকে বলা হয়েছে পরমেষ্ঠিনী। ব্রহ্মার অপর নাম পরমেষ্ঠী। অর্থাৎ, সরস্বতী ব্রহ্মার পত্নী। আরেক শ্লোকে সরস্বতী বিষ্ণুর অর্ধাঙ্গিনী। এছাড়া সরস্বতী শিবের স্ত্রী এমন উল্লেখও আছে।
অর্থাৎ, প্রধান তিন দেবতার সঙ্গেই তার সম্পর্ক আছে। আগেই বলা হয়েছে, নানা মুনির নানামত। তবে, বাঙালিরা কী করে এই সরস্বতীকে শিব-দুর্গার কন্যা বানিয়ে ফেলেছে, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।লক্ষ্মীর আগমন আর একটু পরে। অনেকেরই ধারণা, সমুদ্রমন্থনের সময় উঠে আসেন লক্ষ্মী। কিন্তু, লক্ষ্মী সমুদ্রের অতলে গেলেন কী করে?
এর সম্পর্কেও একটা কাহিনি আছে। দুর্বাসা মুনি, যে শুধু অভিশাপ দেবার জন্যই বিখ্যাত, তার অন্য কোনো গুণের কথা বিশেষ জানা যায় না। তিনি একদিন একটা ফুলের মালা উপহার দিলেন ইন্দ্রকে। ইন্দ্র এমন ফুলের মালা অনেক পেয়েছেন, তিনি অন্যমনস্কভাবে মালাটি রেখে দিলেন ঐরাবতের মস্তকে। ঐরাবতের বোধহয় মালাটি পছন্দ হয়নি, মাথা ঝাঁকিয়ে সেটা তিনি ফেলে দেয় মাটিতে। তারপর পা দিয়ে চেপ্টে দেয়। ব্যস! রগচটা স্বভাবের ঋষি অমনি জ্বলে উঠে উচ্চারণ করলেন অভিশাপ। অদ্ভুত সে অভিশাপ।
তিনি বললেন, কী! আমার দেয়া মালা মাটিতে ফেলে দিলে! তোমার ত্রিলোক এখন লক্ষ্মীছাড়া হবে। অর্থাৎ, লক্ষ্মীর নির্বাসন। দোষ করল ইন্দ্র, শাস্তি পেতে হবে লক্ষ্মীকে। সাধে কি আর নারীবাদীরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ওপর এত ক্ষিপ্ত! অগত্যা লক্ষ্মীকে লুকাতে হয় সমুদ্রে।
পরে দেবতাদের ব্যাকুল প্রার্থনায় বিষ্ণু পরামর্শ দিলেন সমুদ্রমন্থনের। মন্থনের পর যিনি রত্নাকর থেকে উত্থিতা হলেন, তিনি কিন্তু লক্ষ্মী নন। সেই দেবীর নাম শ্রী। এই শ্রী ও লক্ষ্মী দুই পৃথক দেবী ছিলেন। বেশ কিছু কাল পরে দুজনে মিলেমিশে এক হয়ে যান। লক্ষ্মী দেবী ছিলেন মহর্ষি ভৃগুর কন্যা, মায়ের নাম খ্যাতি। লক্ষ্মী ও শ্রী একাকার হয়ে বিষ্ণুর পত্নী হন। সেই লক্ষ্মীই কী করে ইন্দ্রের পাশে থাকেন? এই সবই দেব-দেবীদের ধারণার নানা রকম বিবর্তনের ফল।
আর দুর্গা তো কারো মা হতেই পারেন না। কয়েকটি পুরাণ মতে, তিনি শিবের স্ত্রীও নন। মহিষাসুর নামক অসুরকে ব্রহ্মা এমন এক বর দিয়ে ফেলেন যে, কোনো পুরুষ তাকে বধ করতে পারবে না।
এর পর সে মনের আনন্দে দেবতাদের ওপর অত্যাচার শুরু করে। উত্ত্যক্ত, ব্যতিব্যস্ত দেবতারা দেখলেন, এর একটা হেস্তনেস্ত করা দরকার। তারা নিজেরা কেউ এই দানবের সঙ্গে লড়তে পারবেন না, এক প্রবল শক্তিশালী নারীকে সৃষ্টি করতে হবে। তখন অনেকেই তাদের তেজের অংশ দান করলেন।
শিবের তেজে হলো মুখ, বিষ্ণুর তেজে দশটি বাহু, চন্দ্রের তেজে দুই স্তন, ইন্দ্রের তেজে কোমর, বরুণের তেজে জঙ্ঘা ও উরু, পৃথিবীর তেজে নিতম্ব, ব্রহ্মার তেজে পদযুগল, বসুগণের তেজে আঙুল, কুবেরের তেজে নাক, প্রজাপতির তেজে দাঁত, সন্ধ্যার তেজে দুই ভুরু ও পবনের তেজে দুই কান। এই গঠন প্রক্রিয়ায় বেশ একটা কৌতূহলী দিক আছে।
শিবের তেজে এল নারীটির মুখ, অথচ সেই মুখে ভুরু ও কান ছিল না? বিষ্ণু দিলেন দশটা হাত, তাতে আঙুল জোড়া হলো পরে! এ যেন কুমোরের প্রতিমা গড়া! অবশ্য, বিভিন্ন পুরাণে এর ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা আছে। যাহোক, হিমালয় থেকে একটা সিংহ নিয়ে (সিংহ অবশ্য পাহাড়ি পশু নয়) দেবী গেলেন দানব নিধনে।
এই দেবীরই অন্য নাম চণ্ডী ও কাত্যায়নী। কোনো কোনো অঞ্চলে কাত্যায়নী নামটিই বেশি জনপ্রিয়, বাংলায় দুর্গা। কাজ শেষ হলে দেবী দেবতাদের বললেন, ‘আমি ফিরে আসব’। এরপর শিবের পাদমূলে মিলিয়ে গেল। ফিরে আর ফিরলেন না।
দেবী দুর্গার সে রণরঙ্গিনী মূর্তি, তার সঙ্গে আর চারজন দেব-দেবীকে জুড়ে দিয়ে যে পূজা, তা-ই বাঙালি হিন্দুদের কাছে কী করে প্রধান উৎসব হয়ে দাঁড়াল, এর উত্তর পাওয়া দুষ্কর। অনেকে মনে করে, এটা ভাবপ্রবণ বাঙালির নিজস্ব সৃজনশীলতা! বাংলার কাব্য-গানে কিন্তু হিমালয় দুহিতা উমা বা পার্বতীরই প্রাধান্য।
পতিনিন্দায় অপমানিতা সতী প্রাণত্যাগ করে হিমালয়ের কন্যা হিসেবে জন্মগ্রহণ করে শিবকেই আবার স্বামী হিসেবে পাবার জন্য দুস্তর তপস্যা করেন (নির্জলা উপবাস, কোনো গাছের পাতাও খেতেন না, তাই তার আরেক নাম অপর্ণা)।
আমাদের আগমনী গানে থাকে, ‘যাও যাও গিরি, আনিতে গৌরী, উমা কত মা মা বলে কেঁদেছে’। এ যেন বাংলারই মেয়ে। কিন্তু, উমা বা পার্বতীর মূর্তি গড়িয়ে পূজা করা হয় না। যুদ্ধবিদ্যায় বাঙালি হিন্দুর তেমন খ্যাতি নেই, তবু তারা দুর্গা এবং কালীর সংহার মূর্তির বেশ ভক্ত।
বিস্ময় আরও আছে, অত বড় দেবতা গণেশ যার বাহন সামান্য একটা ইঁদুর! যেমন, অমন রূপসী লক্ষ্মীদেবীর বাহন একটা প্যাঁচা! এতে যেন ঔচিত্যবোধের খুবই অভাব। এসব বাহনের রূপকার্থ নিয়ে নানা রকম ব্যাখ্যা তো হতেই পারে। আছেও। লক্ষ্মীমূর্তির বিবর্তনের ইতিহাস দেখা যায়, নানা সময়ে তার বাহন ছিল ময়ূর, কূর্ম, সিংহ এবং হাঁস। কোনোটাকেই তিনি ধরে রাখতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত জুটেছে প্যাঁচা!
এই প্যাঁচা সম্পর্কে পণ্ডিতদের একটি মত আছে। বিষ্ণুর বাহন গরুড়, আর বিষ্ণুপ্রিয়ার বাহন সেই গরুড়েরই ক্ষুদ্র সংস্করণ প্যাঁচা। প্যাঁচার মুখের সঙ্গে গরুড়ের খানিকটা মিল আছে ঠিকই। তা হলে গণেশ বাহন ইঁদুরও হতে পারে হাতির অতি ক্ষুদ্র বংশধর। সেই যে গল্পে আছে, হবুচন্দ্র রাজা জীবনে কোনো দিন শুয়োর দেখেননি, প্রথম ওই প্রাণীটি দেখে তিনি মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, মন্ত্রী, ওটা কী?
মন্ত্রীদের সবজান্তা হতেই হয়। সেও আগে কখনও শূকর দর্শন করেনি, তবু চটপট উত্তর দিল, মহারাজ, খুব সম্ভবত ওটা একটা হাতি, শুঁড়টুড় খুইয়ে ফেলে ছোট হয়ে গেছে, কিংবা একটা ইঁদুর অনেক বড় হয়ে ওঠেছে (গজক্ষয় অথবা মূষিক বৃদ্ধি)!
হিন্দু দেব-দেবীদের বিবর্তনের ইতিহাস, একের সঙ্গে অন্যদের মিশে যাওয়ার ইতিহাস, যা খুবই আকর্ষণীয়। প্রশ্ন হলো, বিবর্তিত হতে হতে দেবদেবী কি তাহলে দুনিয়া থেকে উঠে যাবে? ভলতেয়ার বলেছিলেন, পৃথিবীতে যত দিন দারিদ্র্য থাকবে, তত দিন ধর্মকে একেবারে মুছে ফেলা যাবে না।
দরিদ্র, অত্যাচারিত, অসহায় মানুষ যখন মনে করে তাকে সাহায্য করার আর কেউ নেই, কেউ তার পাশে দাঁড়াবে না, তখন সে মনে করে, আর কেউ না থাকুক, ঈশ্বর আছেন। সে ঈশ্বরকে আঁকড়ে ধরে শান্তি পায়। আর, দরিদ্র মানুষদের এই দুর্বলতা দেখে দেশের উচ্চ স্তরের মানুষ, যারা ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মের ধার ধারে না, যারা ক্ষমতালোভী, তারা ধর্মের নানা রকম বিকৃতি ঘটিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধায়। কথাটা আমাদের দেশে এখনও প্রকট সত্য!
লেখক: প্রবন্ধকার, সাবেক ছাত্রনেতা।