বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিশ্ব শিক্ষক দিবস আজ: বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনই মুক্তির হাতিয়ার

  • মো. নাজিম উদ্দিন তালুকদার   
  • ৫ অক্টোবর, ২০২১ ১৫:০৪

বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ তৈরি করতে হবে। তাই তিনি বলেন, ত্যাগ ও নিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষকে ভালোবেসে অকৃপণভাবে মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারে শিক্ষক-সমাজ। জাতির পিতা শিক্ষা ও শিক্ষককে অনেক বড় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত ও অধিষ্ঠিত করেছিলেন। শিক্ষকদের সীমিত আকারে হলেও সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলেন। বর্তমানেও বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন শিক্ষকদের মুক্তির হাতিয়ার।

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দিনটি ‘ওয়ার্ল্ড টিচার্স ডে’, ‘ইন্টারন্যাশনাল টিচার্স ডে’ বা ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস’ নানা নামে পরিচিত। শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। অন্যভাবে বললে, শিক্ষক-সমাজকে সম্মানিত এবং তাদের ত্যাগের বিষয়টি সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়াই দিবসটির মূল লক্ষ্য। শিক্ষকদের অধিকার আদায় ও সম্মাননা হিসেবেও দিবসটি মূল্যায়িত হয়। পরবর্তী প্রজন্মও যাতে কার্যকরী ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে এই দিনটি পালন করে, সেটাও উদ্দেশ্য। পৃথিবীর সব দেশে বিশেষ মর্যাদায় দিনটি পালিত হয়।

১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেসকোর ২৬তম অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে। ইউনেসকো প্রতিবছর শিক্ষকদের সম্পর্কে বিশ্বকে আরও ভালোভাবে বোঝাতে এবং শিক্ষার্থীদের বিকাশের ওপর তাদের প্রভাবের গুরুত্ব তুলে ধরতে নানা ধরনের ক্যাম্পেইন করে। অবশ্য ইউনেসকো ১৯৬৬ সালে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে শিক্ষকদের অবস্থা নিয়ে আন্তঃসরকার সম্মেলন হয়েছিল। সেখানেই শিক্ষকদের কথা চিন্তা করে ইউনেসকো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কিছু পরামর্শে স্বাক্ষর করে। প্রথমবারের মতো এসব পরামর্শে শিক্ষকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং বিশ্বব্যাপী শিক্ষকতা পেশার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।

নাগরিকদের উপযুক্ত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর এই দায়িত্বের কার্যকর দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষকেরা। শিক্ষকেরা শুধু পড়ালেখা শেখানোই নয়, পাশাপাশি জীবনে সফল হতে নানা উপদেশ দেয়া, নৈতিকতা শেখানো, প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে শেখানোও খুব যত্নের সঙ্গে করে থাকেন।

সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেই বুঝতে পেরেছিলেন শিক্ষাই হলো মুক্তির হাতিয়ার। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পাই, প্রকৃত শিক্ষাই পারে মানবমুক্তির পথের সন্ধান দিতে। তার লক্ষ্যই ছিল শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার ধারণাটি প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধু বাস্তবায়ন করেছিলেন কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন। যেটা ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থার রূপরেখা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ড. কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনকে ছুড়ে ফেলে দেয়। সময় অনেক পেরিয়ে গেছে এই জাতির। বিশ্বের সঙ্গে সমন্বয় করে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে তার কন্যা শেখ হাসিনা কঠিন সংগ্রাম করেও দেশে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছেন।

বিশ্বের বহু দেশ তাদের জাতির পিতা ও স্বপ্নদ্রষ্টাদের শিক্ষা-দর্শন বাস্তবায়ন ও প্রতিফলন ঘটাতে মনীষীদের নিয়ে গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। আমরা শুরু করেছি মাত্র। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা মূল্যহীন। সেই উপলব্ধিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ তৈরি করতে হবে। তাই তিনি বলেন, ত্যাগ ও নিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষকে ভালোবেসে অকৃপণভাবে মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারে শিক্ষক-সমাজ। জাতির পিতা শিক্ষা ও শিক্ষককে অনেক বড় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত ও অধিষ্ঠিত করেছিলেন। শিক্ষকদের সীমিত আকারে হলেও সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলেন। বর্তমানেও বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন শিক্ষকদের মুক্তির হাতিয়ার। এ নীতি ও আদর্শে সব শিক্ষককে দীক্ষিত করে তুলতে হবে।

বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থার বহু স্তরেই সংখ্যাধিক্যে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। তবে শিক্ষার হার বাড়লেও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন জাতি বিনির্মাণে আমরা এখনও আশাজাগানিয়া জায়গায় যেতে পারিনি। নানা সময়ে কিছু ব্যক্তি শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে কলঙ্কিত করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ঘুষ-দুর্নীতিতে শিক্ষক ও প্রশাসন জড়িয়ে পড়ার খবরও নানা সময়ে শোনা যায়। অনেক জায়গায় অদক্ষ ম্যানেজিং কমিটি, গভর্নিং বডি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রকৃত সুশাসন বিঘ্নিত করেছে। ফলে শিক্ষা তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না।

আরেকটি কথা সত্য যে, সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষককুল হলো বেসরকারি স্তরে যারা কর্মরত। এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট শিক্ষাদান, সঞ্চালন ও পরিচালনের শতকরা ৯৮ ভাগ বেসরকারি অথচ সব ধরনের অবহেলার শিকার এই স্তরের শিক্ষক-কর্মচারীরা। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করলে এটা ব্যাপক বৈষম্য। তাই বিশ্ব শিক্ষক দিবস নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অনেকটা ভিন্ন।

বর্তমান বিশ্বে শিক্ষক এবং শিক্ষাদান প্রক্রিয়া একে অপরের পরিপূরক হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত একটি বিষয়। সে কারণে বিশ্বব্যাপী শিক্ষকতা পেশার পরিচর্যার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং পেশাকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বেতন-আবাসন, প্রশিক্ষণ-প্রাতিষ্ঠানিক কর্মপরিবেশ উন্নত করার ওপর ইউনেসকো জোর সুপারিশ করে চলছে। সেজন্য শিক্ষকদের সব বিষয় বিবেচনা করে একেক বছর একেকটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্বাচন করে থাকে এবং বিশ্বের সব দেশেই এই প্রতিপাদ্য বিষয়ে অনুধাবনমূলক বিশ্লেষণ চলতে থাকে।

চলমান অতিমারি পরিস্থিতিতে শিক্ষক-সমাজ নিজস্ব উদ্যোগেই শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাক্রমে কাজ করে যাচ্ছে। সংকট মোকাবিলায় এবং ভবিষ্যৎ প্রতিচ্ছবি নির্মাণে শিক্ষক-সমাজ একটি বিশেষ ভূমিকায় নিজেদের পরিচয় তুলে ধরে ইউনেসকো শিক্ষকদেরই মহিমান্বিত করেছে।

সব দেশের শিক্ষক-সমাজই একক এবং সামগ্রিক প্রচেষ্টার ভিত্তিতে কোভিড-১৯-এর মতো একটি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন, যা ইতোমধ্যে অনেকেই গ্রহণ করেছেন। বিশ্ববাসীর কাছেও তা গ্রহণযোগ্য পথ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সুসংহত করার জন্য আমাদের পূর্বসূরিরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর জাতির পিতার পাশে থেকে শিক্ষক-সমাজ দেশগড়া সর্বোপরি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ায় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। আজ তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে শিক্ষক-সমাজ একই ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রত্যাশা- বাংলাদেশে শিক্ষকদের বিরাজমান সমস্যাগুলো সমাধানে মানবদরদি সরকার ও তার মন্ত্রণালয় অগ্রণী ভূমিকা নেবে।

লেখক: অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক।

এ বিভাগের আরো খবর