বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিক্ষার্থীদের আনন্দ যেন ম্লান না হয়

  • রাজন ভট্টাচার্য   
  • ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৮:৫৮

শিশুদের একটি অংশ সমাজের বখে যাওয়াদের সঙ্গে মিশেছে তা গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি গ্যাং কালচারের ফাঁদে পড়েছে। এতে বাড়তি উৎসাহ জুগিয়েছে এনড্রয়েড মোবাইল ফোন। আরেকটি অংশ পরিবারের চাকা সচল রাখতে শ্রমিকের খাতায় নাম লিখিয়েছে। নামমাত্র বেতনে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে। এমনও বাস্তবতা আছে, ছেলে শিশুদের থেকে মেয়ে শিশুরা বেশি বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে।

করোনা মহামারি কিছুটা সামাল দিয়ে ৫৪৩ দিন পর খুলল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গ্রাম ছাপিয়ে শহর পর্যন্ত এ নিয়ে শিশুদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার কোনো কমতি নেই। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন ঈদের আনন্দ। এর মধ্য দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের বন্দিদশা কাটল। প্রথম দিনে হাত স্যানিটাইজ করে তারপর স্কুলে ঢুকেছে অনেক শিক্ষার্থী। অনেক প্রতিষ্ঠানে দেখা গেছে টেবিল ফাঁকা ফাঁকা করে শিশুদের বসতে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাস্ক ব্যবহার করতেও দেখা গেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনার কথা বলা হলেও অভিভাবকদের বাড়তি উৎসাহ কিন্তু সবার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

মূল কথা হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর পর সারা দেশে যে উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে তা যেন ম্লান না হয়। কোভিড পরিস্থিতিতে বিশ্বের অনেক দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সচল করেও ফের বন্ধ করতে হয়েছে। এ বিষয়টি সব সময় গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত। শুধু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে না পারায় অনেক দেশকে মাশুল গুনতে হয়েছে। তাই বাংলাদেশে যেন এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। কোনো অবস্থাতেই যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফের তালা না ঝোলে।

১৮ মাস পর খোলা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন মুখর থাকে এ চিন্তা সরকার, শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অভিভাবকদের গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। সর্বোপরী স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার চেষ্টা করবেন সেসব প্রতিষ্ঠান যেন দ্রুত বন্ধ করে দেয়া হয়। এমনকি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হলে, অন্যরাও দ্রুত সচেতন হবে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নজরদারি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।

করোনা মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কা অনেকটাই সামলে ওঠে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। দীর্ঘদিন সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুদের সমস্যার শেষ নেই। সেসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সামাজিক অপরাধ ও বাল্যবিবাহ।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, করোনা সংক্রমণের হার ১০ ভাগের নিচে এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলা যায়। এখন তা নেমেছে সাত ভাগে। এজন্য দীর্ঘ সময় সরকারকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুলকিত হওয়ার সুযোগ নেই। ক্লাস চালুর পর সবার এক হয়ে চলার সুযোগ হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে হাসি-আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবে এটাই স্বাভাবিক। সবার মনে রাখা দরকার, দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ যেন মহামারি হয়ে চোখ রাঙাতে না পারে। এজন্য সরকার, অভিভাবকসহ শিক্ষকদের দায়িত্ব অনেক। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সামনের দিনগুলোতে মসৃণ পথচলা নিশ্চিত করার দায় সবার।

বিশ্বের অনেক দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সচল করার পর করোনা বেড়ে যাওয়ায় আবারও বন্ধ করতে হয়েছে। অবহেলার কারণে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুদের থেকে বড়রাও সংক্রমিত হয়েছে। দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও ব্যাহত হয়েছে সাধারণ মানুষের। তাই আমাদের কোনো অবস্থাতেই বিষয়টিকে অবহেলার চোখে দেখলে চলবে না। সপ্তাহে ক্লাস যে কদিন হোক, করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরি সচেতনতা। মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।

দুই.

দীর্ঘ দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকার পর আজ থেকে প্রাথমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি শুরু হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে বৈঠক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষে মত দেয় করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফের ২৪ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর কারণে স্কুল বন্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম দেশ। দীর্ঘ বন্ধের ফলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তর পর্যন্ত চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই সবাইকে সর্বোচ্চ সচেতন না হলে শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখা কিন্তু কঠিন হবে। করোনা বেড়ে যাওয়ায় আবার যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করতে হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। যা তাদের ভবিষ্যৎ নষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তিন.

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর মধ্য দিয়ে অনেক দিন পর শিশুরা মুক্ত বাতাস পেল। হাসি-আনন্দে কাটাল সারাদিন। দীর্ঘদিন পর দেখা হলো বন্ধুদের সঙ্গে। দিনভর সবার মধ্যেই এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করেছে। এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আলাদা একটা বৈশিষ্ট্যতো আছেই। স্কুলে গিয়ে পছন্দমতো আসনে বসা, কলম, খাতা আর কালির আনুষ্ঠানিক ব্যবহার, শিক্ষকদের নজরদারি, পড়ানো, টিফিনে ছুটে চলা সব মিলিয়ে বাড়তি উৎসাহের শেষ নেই। কিন্তু এরকম পরিবেশ সবার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এজন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর পর করোনা প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা শতভাগ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

সবার আগে জরুরি স্কুলের ভেতরে বহিরাগত প্রবেশ বন্ধ করা। সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার বিকল্প নেই। মাস্ক ছাড়া শিশু, শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। তিন ফুট দূরত্বে বসার ব্যবস্থা করা, সামাজিক সব রকমের দূরত্ব মেনে চলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র, জীবাণুনাশক টানেল স্থাপন করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। তবে স্কুলের বারান্দা বা গেটে স্যানিটাইজার মেশিনও বসানো যেতে পারে।

সর্বোপরি শিশুদের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে শিক্ষকদের কঠোর হতে হলে অভিভাবকদের তা মেনে নিতে হবে। অভিভাবকদেরও এ বিষয়গুলো সন্তানদের বুঝিয়ে শিক্ষালয়ে পাঠানো দরকার।

করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার থেকে শুরু করে শিক্ষক ও অভিভবকদের দায় সমান। স্কুল চলাকালে শিক্ষার্থীদের বাইরে বের হওয়া বন্ধ করতে হবে। স্কুল ব্যাগে বাড়ি থেকে টিফিন বক্সে খাবার ও পানি দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো। এই কাজগুলো যদি যথাযথভাবে পালন সম্ভব না হয়, তবে করোনা বসে থাকবে না। আবারও মাথা তুলে দাঁড়াবে। সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়বে। এবার শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়লে কিন্তু পরিস্থিতি সর্বোচ্চ খারাপের দিকে যেতে পারে। তখন পরিস্থিতি সামাল দেয়া না গেলে সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপও বাড়তে পারে। তাই আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট সব মহলকেই সর্বোচ্চ সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।

চার.

দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর যেমন খারাপ প্রভাব পড়েছে তেমনি অনেক শিশু বিপথে গেছে। আবার শ্রমজীবীসহ ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাই এসব শিশুকে স্কুলমুখী করতে হবে। শিশুদের একটি অংশ সমাজের বখে যাওয়াদের সঙ্গে মিশেছে তা গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি গ্যাং কালচারের ফাঁদে পড়েছে। এতে বাড়তি উৎসাহ জুগিয়েছে এনড্রয়েড মোবাইল ফোন। আরেকটি অংশ পরিবারের চাকা সচল রাখতে শ্রমিকের খাতায় নাম লিখিয়েছে। নামমাত্র বেতনে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে। এমনও বাস্তবতা আছে, ছেলে শিশুদের থেকে মেয়ে শিশুরা বেশি বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে।

এই সুযোগে সমাজের এক শ্রেণির অভিভাবক দায় ঘোচাতে কন্যা শিশুদের বিয়ে দিয়েছেন। এসব মেয়ে শিশুরা মা-ও হয়েছে। যা সামাজের জন্য ভালো উদাহরণ হতে পারে না। সব মিলিয়ে ঝরে পড়া শিশুদের একটি বড় অংশকে যেকোনো মূল্যে স্কুলে ফেরাতে হবে। এজন্য সরকারের আলাদা নজর দেয়া প্রয়োজন। যদি এই অংশের পুরোটাই স্কুলের বাইরে থেকে যায় তবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য এটি বড় রকমের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

কোভিড মহামারি থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব সবার। সবার সতর্ক দৃষ্টি শিক্ষার্থীদের আলোকিত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে।

লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক

এ বিভাগের আরো খবর