বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাতের রাজারা কোথায়?

  •    
  • ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৫:৫৭

পিয়াসা-মৌকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ তাদের ‘রাতের রানি’ হিসেবে অভিহিত করেছিল। রাতের রানি যদি থাকে, নিশ্চয়ই ‘রাতের রাজা’ও আছে। জাতি এখন ‘রাতের রাজা’দের নাম জানতে চায়, চেহারা দেখতে চায়। কোনো মামলা না থাকার পরও পরীমনিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মামলা দেয়া হয়েছে।

জুলাইয়ের শেষদিকে এবং আগস্টের শুরুতে হঠাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক তৎপর হয়ে ওঠে। একের পর এক অভিযানে আটক করা হয় চার নারীকে। প্রথমে হেলেনা জাহাঙ্গীর, পরে মডেল পিয়াসা ও মৌ, সবশেষ চিত্রনায়িকা পরীমনি। প্রথমজনের মূল অপরাধ রাজনৈতিক। বাকি তিন গ্ল্যামার গার্লের বিরুদ্ধে অভিযোগ সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের। গ্রেপ্তারের আগে-পরে তাদের বিরুদ্ধে কথিত অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় হয়েছে। সব মিলিয়ে তারাই যে সব নষ্টের গোড়া এমন একটা পারসেপশন তৈরি হয়েছে সমাজে।

ধারণাটা পুরোপুরি অমূলকও নয়। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে হাঁকডাক করেছে, মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করে এই চার নারীকে গ্রেপ্তার করেছে; তা অনেকটা মশা মারতে কামান দাগানোর মতো। নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও তারা ভয়ংকর সন্ত্রাসী নয়। পুলিশ বা র‌্যাব ফোন করে ডাকলেই তাদের চলে যাওয়ার কথা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অভিযান না চালালেও চলত। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে, ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করার মতো অভিযোগের কথা শোনা গেলেও কাগজ-কলমে তেমন কোনো অভিযোগ নেই।

বরং বাসায় অভিযান না চালালে তাদের আটকে রাখার কোনো যৌক্তিক অভিযোগ দাঁড় করানোই মুশকিল হতো। অভিযানে তাদের সবার বাসা থেকে মাদক এবং হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে মাদক বা বন্যপ্রাণী আইনে। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগের পাহাড়, সেগুলোর কী হলো, অভিযোগগুলো সত্যি না মিথ্যা? সত্যি হলে মামলা হলো না কেন?

আগেই বলেছি, হেলেনা জাহাঙ্গীরের সমস্যাটা রাজনৈতিক। তবে হেলেনা জাহাঙ্গীর একাই সমস্যা নন। টানা ১২ বছর ক্ষমতায় থাকার সুবাদে আওয়ামী লীগে এখন সুবিধাবাদী হাইব্রিডের ভিড়। হেলেনা জাহাঙ্গীরের মতো হাজারো হাইব্রিড আগাছা খেয়ে ফেলছে আওয়ামী লীগের সব ফসল। হাইব্রিডদের নিয়ে আওয়ামী লীগে আলোচনা-সমালোচনা অনেক দিনের। সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু আওয়াজ অনেক হলেও কাজের কাজ হয়নি তেমন। হাইব্রিডদের দাপট চলছে এখনও। হেলেনা জাহাঙ্গীরের মতো হাইব্রিডরা ঠাঁই পেয়ে যান দলের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিতে।

আর এই জোরে মিডিয়া বানান, ধান্ধা করেন। কিন্তু আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামে একটি দোকান করে এবং তাতে নেতা নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিয়ে ধরা খেয়েছেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। কিন্তু তার বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে সেই মাদক আর বন্যপ্রাণী আইনেই। আসল যে অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে ধান্ধাবাজি করা, সেটা নিয়ে কিছু হয়নি। তারচেয়ে বড় কথা, কারা এই হেলেনা জাহাঙ্গীরদের দলে ঠাঁই দিয়েছে, উপকমিটির সদস্য বানিয়েছে; তারা বরাবরের মতো আড়ালেই রয়ে গেছে। পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে না পারলে হাইব্রিডদের এই দাপট চলতেই থাকবে। এক হেলেনা কারাগারে গেলেও তার জায়গা নেয়ার জন্য লাইনে আছে হাজারো হেলেনা।

পিয়াসা, মৌ বা পরীমনির বিরুদ্ধেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজারো অভিযোগ। তারা ক্লাবে যান, বাসায় পার্টি দেন, ডিজে পার্টি করেন, সেসব পার্টিতে বড়লোকদের ডেকে এনে ব্ল্যাকমেইল করেন, বড়লোকদের সঙ্গে বিদেশে যান, তাদের আয়ের সঙ্গে সম্পদের মিল নেই। ইত্যকার নানা অভিযোগে ফেসবুক সয়লাব। তাদের কারো বিরুদ্ধেই কিন্তু এসব অভিযোগে কোনো মামলা হয়নি। ব্ল্যাকমেইলের শিকার হওয়া কেউ কোনো অভিযোগও করেনি। তাদের গ্রেপ্তারের সময় সবার বাসা থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। মামলাও হয়েছে মাদক আইনেই। বাসায় মাদক রাখা বাংলাদেশের আইনে অন্যায়। সেই মামলার তদন্ত শেষে বিচার হবে, প্রয়োজনে সাজা হবে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যে আসল অভিযোগ, সেগুলোর কী হবে?

ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টা হয়েছে, পরীমনির এই অভিযোগের পরই দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঢাকার ক্লাব কালচারের অনেক অচেনা অধ্যায় আলোচনায় এসেছে। শুধু ক্লাব নয়, উচ্চবিত্তের পার্টি কালচারের নানাদিক জেনে চমকে গেছে সাধারণ মানুষ। হেলেনা জাহাঙ্গীর, পিয়াসা, মৌ, পরীমনিকে দফায় দফায় রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। পরীমনিকে তিন দফায় ৭ দিনের রিমান্ড দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্টও। এই যে দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো- তারা নিশ্চয়ই অনেক তথ্য দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তাদের অনেক সহযোগীর নাম বলেছেন। সেই তথ্যগুলো কিন্তু জনগণ জানে না। তাহলে তাদের দফায় দফায় রিমান্ডে নেয়া হলো কেন, তথ্য জানার জন্য না গোপন করার জন্য?

হেলেনা জাহাঙ্গীর একা একা ইচ্ছা করলেন, আর আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য হয়ে গেলেন; ব্যাপরটা নিশ্চয়ই এত সহজ নয়। পিয়াসা, মৌ বা পরীমনির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিনের পর দিন প্রচারিত হলো- সেগুলো নিশ্চয়ই তারা একা করেননি। বাসার বোতল বোতল মদও নিশ্চয়ই তারা একা খেতেন না। হাউস পার্টি বা ডিজে পার্টিও নিশ্চয়ই তারা একা করতেন না। দেশের বাইরেও নিশ্চয়ই একা ফুর্তি করতে যেতেন না। পিয়াসা-মৌকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ তাদের ‘রাতের রানি’ হিসেবে অভিহিত করেছিল।

রাতের রানি যদি থাকে, নিশ্চয়ই ‘রাতের রাজা’ও আছে। জাতি এখন ‘রাতের রাজা’দের নাম জানতে চায়, চেহারা দেখতে চায়। কোনো মামলা না থাকার পরও পরীমনিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মামলা দেয়া হয়েছে। আর তারা রিমান্ডে যাদের নাম বলেছে, তাদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি, নাম প্রকাশও করা হয়নি। কেন? হেলেনা-পিয়াসা-মৌ-পরীমনিদের বলির পাঁঠা বানিয়ে কি তাদের সহযোগীদের আড়াল করা হচ্ছে? যে যতটুকু অপরাধ করেছে, তাকে তার সাজা পেতেই হবে, সেটা রাতের রানি হোক, আর রাতের রাজা হোক।

লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক।

এ বিভাগের আরো খবর