বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় (এনজিও) চাকরিতে যোগদানের প্রস্তুতি

  • ফরহাদ হোসেন   
  • ৬ জুলাই, ২০২১ ০৯:২১

পড়ালেখা করে কোথায় যোগদান করছেন তার চেয়েও বড় হলো, কাজটাকে কতটা আপন মনে করতে পেরেছেন। কাজের সুযোগ পাওয়াটা এখানে সহজ হলেও টিকে থাকা এবং এগিয়ে যাওয়াটাও তুলনামূলকভাবে কঠিন।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ক্ষুদ্রঋণ, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি, আইটিসহ নানামুখী উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে প্রায়ই দক্ষ কর্মীর খোঁজ করে। তাতে এন্ট্রি লেভেলের পদগুলোতে এইচএসসি বা স্নাতক পাস ফ্রেশারদের সুযোগ বেশি দেয়া হয়। ব্যবস্থাপক বা ঊর্ধ্বতন পদগুলোতে অভিজ্ঞদের প্রাধান্যই বেশি। এনজিওর কাজে যোগ দেবার প্রস্তুতি ও অন্যান্য বিষয়ে জানুন আজকের লেখা থেকে।

কর্মী নিয়োগে এগিয়ে যারা

বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রণের সরকারি সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অর্থরিটির (এমআরএ) বেসিক ইনফরমেশন অব এনজিও-এমএফআইএসের ৩০ জুন ২০১৯ তথ্যমতে, সারা দেশে মোট ৭৫৮টি সংস্থায় শুধু ঋণ কর্মসূচিতে নানান পদে কর্মরত রয়েছে ১,৬২,১৭৫ জন কর্মী।

ব্র্যাকের ২০১৬ সালের তথ্যমতে মোট কর্মীর সংখ্যা ৯৭,৭৪২ জন। ঋণ কার্যক্রম, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানামুখী উন্নয়নকাজে প্রতিবছর শিক্ষানবিশ বা এন্ট্রি লেভেলে কর্মী নিয়োগে ব্র্যাক সবচেয়ে এগিয়ে।

জুনিয়র শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা, দাবি, কর্মসূচি সংগঠক (প্রগতি) এবং (দাবি) এসব পদেই সবচেয়ে বেশি কর্মী নিয়োগ দেয় ব্র্যাক।

এমআরএর তথ্যমতে, আশায় ঋণ কার্যক্রমে কর্মরত আছে ২৪,৯২৬ জন। টিএমএসএসে নানান খাতে কর্মরত আছেন প্রায় ১৩,০৪৮ জন কর্মী।

ব্যুরো বাংলাদেশের রয়েছে ৯,৭৮২ জন কর্মী। অপরদিকে কর্মী নিয়োগে এগিয়ে আছেন সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিস (এসএসএস), জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, সাজিদা ফাউন্ডেশন, পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, উদ্দীপন, পল্লি মঙ্গল কর্মসূচি, শক্তি ফাউন্ডেশন ফর ডিস-অ্যাডভানটেজড উইমেন, গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি (গাক), আরডিআরএস, ব্রিজ, পপীসহ এমআরএ সনদপ্রাপ্ত আরও বেশ কিছু সংস্থা।

প্রতিষ্ঠানভেদে যোগ্যতা

জুনিয়র শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা (দাবি), কর্মসূচি সংগঠক (দাবি ও প্রগতি) এসব পদে সবচেয়ে বেশি লোকবল নিয়োগ দেয় ব্র্যাক।

জুনিয়র লোন অফিসার (জুএলও) পদে লোকবল বেশি নেয় আশা।

ব্যুরো বাংলাদেশ কর্মসূচি সংগঠক পদে, টিএমএসএস ক্রেডিট অফিসার পদে, সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিস (এসএসএস) অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্রেডিট) পদে, শক্তি ফাউন্ডেশন ফর ডিস-অ্যাডভানটেজড উইমেন ক্রেডিট অফিসার পদে এন্ট্রি লেভেলে লোকবল নিয়ে থাকে।

সাজিদা ফাউন্ডেশন ফিল্ড অফিসার পদে এবং জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন অফিসার পদে এন্ট্রি লেভেলে লোকবল নেয়।

এসব প্রতিষ্ঠানে কাজের যোগ্যতা চাওয়া হয় ন্যূনতম স্নাতক পাস।

কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে এন্ট্রি লেভেলে কর্মী নিয়ে থাকে মানবিক সাহায্য সংস্থা। যোগ্যতা থাকতে হয় স্নাতক।

উদ্দীপন ফাস্ট ক্রেডিট অফিসার পদে যোগ্যতা চেয়ে থাকে এইচএসসি পাস। মধ্যম লেভেলের অনেক প্রতিষ্ঠান এন্ট্রি লেভেলের পদগুলোতে এইচএসসি পাস ব্যক্তিদের সুযোগ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া শাখা ব্যবস্থাপক, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকসহ অন্যান্য পদগুলোতে স্নাতকোত্তর পাসের পাশাপাশি কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে থাকে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ।

আবেদনের আগে ভাবুন

গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচির (গাক) পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এন্ট্রি লেভেলে ঋণ সংস্থায় যোগদানের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাঠখড় পোড়ানোর কিছু নেই। স্নাতক পাসের সঙ্গে বেসিক জ্ঞানটা ভালো থাকলে সুযোগ মিলবে কাজের।

তবে সবচেয়ে বড় কথা, সত্যিকার অর্থেই কাজটাকে ভালোবেসে যোগদান করলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।

কোথায় পড়ালেখা করে যোগদান করছেন তার চেয়েও বড় হলো, কাজটাকে কতটা আপন মনে করতে পেরেছেন। কাজের সুযোগ পাওয়াটা এখানে সহজ হলেও টিকে থাকা এবং এগিয়ে যাওয়াটাও তুলনামূলকভাবে কঠিন।

কারণ, এখানে নিত্যদিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে টিকে থাকতে হয়। তাই আগে ঠিক করুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তেই কি এই পেশায় আসতে চান? নাকি অন্য কোনো চাকরির সুযোগ না পেয়ে শুধু কিছু আয়-রোজগারে আশায় এই পেশায় আসতে চান।’

এন্ট্রি লেভেলে পরীক্ষা যেমন

টিএমএসএসের পরিচালক (এইচআর-এম অ্যান্ড অ্যাডমিন) শাহাজাদী বেগম জানান ‘এন্ট্রি লেভেলের পদে যোগ্য কর্মী বাছাই ও নির্বাচনে প্রতিষ্ঠানভেদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।

অনেক প্রতিষ্ঠান আবার শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমেই যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করে থাকে। এন্ট্রি লেভেলের লিখিত পরীক্ষায় আবার অনেকে রচনামূলক পদ্ধতিতে আবার অনেকে এমসিকিউ (শর্ট) পদ্ধতির পরীক্ষা নিয়ে থাকে।’

জানা যায় লিখিত পরীক্ষায় এনজিও-সম্পর্কিত বিষয়ে নানা ধরনের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তবে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ করতে হবে, এমন পদগুলোতে ঋণ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার বিষয়েই বেশি প্রশ্ন আসে।

নিয়োগ কর্তৃপক্ষ ঋণ কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সাধারণত এক ঘণ্টার লিখিত রচনামূলক প্রশ্ন করে থাকে।

লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, সাধারণ গণিত, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। বাংলা বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ নানান দিক, বিশেষ করে গদ্য, পদ্য, সাহিত্য এবং নাটক অংশ থেকে অনেক সময় প্রশ্ন করা হয়। এ ছাড়া ব্যাকরণের কমন কিছু অংশ থেকে প্রশ্ন করা হয়।

অনেকে ভাবসম্প্রসারণ, আবার অনেকে রচনা, পত্র ও দরখাস্ত লিখতে দিতে পারে। তাই এসব আগে থেকেই দখলে রাখতে হবে।

হিসাব-সংক্রান্ত কাজ বেশি করতে হবে তাই হিসাববিজ্ঞানের প্রাথমিক বিষয়েও ভালো প্রস্তুতি থাকতে হবে।

পাটিগণিতের শতকরা, শতাংশ, সরল, সুদকষা এসবের সঙ্গে হিসাববিজ্ঞানে খুঁটিনাটি বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্ন করা হয়।

ইংরেজি বিষয়ে আইকিউ যাচাইয়ে গ্রামার পার্টের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ থেকে প্রশ্ন করে থাকে।

সাধারণ জ্ঞানের নিজের দখল যত ভালো থাকবে তত বেশি নম্বর পাওয়া যাবে।

ভাইভা বোর্ডে করণীয়

মানবিক সাহায্য সংস্থার এইচআরএম বিভাগের সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন জানান, ‘মৌখিক পরীক্ষায় একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, সাধারণ জ্ঞান, সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি, সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার, ঋণ কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক, অর্থনীতির নানান দিক, হিসাবের বিভিন্ন দিক, আর্থসামাজিক বিষয়, দারিদ্র্য বিমোচন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, আইকিউ, প্রেজেন্টেশন স্কিল, মাঠকর্মী হিসেবে কাজের বিষয়, নিজের সম্পর্কে এবং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। দেখা হয় নিয়মানুবর্তিতাও।

ঋণ কার্যক্রম প্রোগ্রাম বিষয়ে বেশি জানাশোনা থাকতে হবে। ভাইভা বোর্ডে আরও দেখা হয় কাজের আগ্রহ। কেন কাজ করতে চায়, কাজের মানসিকতা, যোগাযোগদক্ষতা, অন্যকে বোঝানোর ক্ষমতা, চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মানসিকতা, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাসহ নানান দিক।’

সিনিয়র লেভেলের পদে করনীয়

রুরাল রিকনস্ট্রাকশন ফাউন্ডেশন (আরআরএফ) এর পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) অরুণ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘শাখা ব্যবস্থাপক বা তর্ধোধ্ব পদগুলোতে সরাসরি ভাইভার মাধ্যমেই কর্মী নিয়োগ করে থাকে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ। তবে কোন কোন প্রতিষ্ঠান লিখিত পরীক্ষাও নিয়ে থাকে।

পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে হিসাবরক্ষক, শাখা ব্যবস্থাপক, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক, সহকারী পরিচালকসহ তর্ধোধ্ব পর্যায়ের পদগুলোতে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম নিয়ে কাজ করেছেন এমন প্রার্থীদেরই নির্বাচন করা হয়।

কারণ এসব পদে অধিকতর যোগ্য ও দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। তাই যারা এ নিয়ে কাজ করেছেন তাদের কাজের অংশগুলোই আমরা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় যাচাই করি।

এসব পদের প্রার্থীদের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনার খুর্টিনাটি বিষয়গুলোর উপর স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে।’

শাহজাদী বেগম জানান, ‘ম্যানেজার পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষায় ঋণ কার্যক্রম, শাখার হিসাব নিকাশ, উন্নয়ন কার্যক্রম, সুপারভিশন, মনিটরিং, মাইক্রোফিন্যান্স, এমএফআই টার্মস, এনজিও নীতিমালা, পরিচালন, ব্যবস্থাপনা, ইংরেজি এবং সমসাময়িক ইস্যু বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।

ম্যানেজার লেভেলের পদগুলোর জন্য ঋণ কার্যক্রমের সামগ্রিক বিষয়গুলোর উপর সব সময় ভাল দখল রাখতে হবে। নিয়োগ কর্তারা এখানে ঋণ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অংশ থেকে প্রশ্ন করতে পারে। তেমনি ভাইভা বোর্ডে ঋণ কার্যক্রমের নানা দিক নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে কাজের দক্ষতা জানতে চাইবে। ভাইভা র্বোডেও ঋণ কার্যক্রমের সঠিক উত্তর দেয়ার জন্য মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে।’

বেতন-ভাতা যেমন হয়

প্রতিষ্ঠান ও খাত ভেদে বেতন ভাতা ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষানবিশকালে প্রতিষ্ঠান ভেদে মাসিক শুরু ন্যূনতম ১৫০০০ থেকে।

স্থায়ীকরণে প্রতিষ্ঠানভেদে বেতন পাওয়া যেতে পারে ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। মাসিক বেতন ছাড়াও উৎসব ভাতা, সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে বিধি অনুসারে সিটি ভাতা, জীবন বীমা ভাতা দেওয়া হবে।

এ ছাড়াও ঋণ কার্যক্রমের সাথে সংপৃক্ত কর্মীদের লোড অ্যালাউন্স, ক্রেডিট অ্যালাউন্স, ব্যাংকার অ্যালাউন্স, হাইপারফরম্যান্স বোনাসসহ বেশ কিছু সুবিধা দেয় অনেক প্রতিষ্ঠান।

এ বিভাগের আরো খবর