একসঙ্গে ১৫৯ কর্মীকে ছাঁটাই করেছে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন। স্বেচ্ছায় অবসর পরিকল্পনা বা ভলান্টারি রিটায়ার্ডমেন্ট স্কিম (ভিআরএস) না নেয়ায় তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কর্মীরা।
২০ জুন সন্ধ্যায় ওই কর্মীদের একসঙ্গে ছাঁটাই নোটিশ পাঠায় গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ। প্রতিবাদে গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (জিপিইইউ) অনলাইনে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে।
প্রতিবাদ থেকে বলা হয়, তাদের বেআইনিভাবে ছাঁটাই করা হয়েছে। অবিলম্বে তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানায়।
ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের ভিআরএস নিতে এক বছর আগে সময় দেয় গ্রামীণফোন। কিন্তু কর্মীরা এক বছরেও এই স্কিম গ্রহণ করেননি। সুবিধাটি নেয়ার মেয়াদ শেষ হয় ১৭ জুন।
গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (জিপিইইউ) সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. শফিকুর রহমান মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বেচ্ছায় অবসর পরিকল্পনা নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। অনেকেই সেটা নেননি। এখন যা করা হচ্ছে সেটা তো মেনে নেয়া যায় না।’
তিনি বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আবারও ছাঁটাই করেছে গ্রামীণফোন। এটা বেআইনি এমনকি আদালতের লঙ্ঘন।
‘এক বছরের বেশি সময় ধরে এসব কর্মীকে কোনো কাজ করতে দেয়া হয়নি। তাদের কাজ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে করানো হয়েছে।
‘কেন কর্তৃপক্ষ বসিয়ে রেখে এক বছর ধরে এসব কর্মীকে বেতন দিল। তার বদলে একই কাজ করানো হচ্ছে তৃতীয় পক্ষের কর্মী দিয়ে। এরই মধ্যে তৃতীয় পক্ষের কর্মীরা গ্রাহকের তথ্য বেহাত করেছেন। সে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাহলে এর দায় কে নেবে?’
বিষয়টি নিয়ে গ্রামীণফোনের হেড অফ এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন মুহাম্মদ হাসান বলেন, ‘নিরাপত্তা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এমপ্লয়ি এবং ব্যবসায়িক পার্টনারদের নিরাপদ রাখতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাইডলাইন বিবেচনায় নিয়ে এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছি। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে এমপ্লয়িদের নিরাপত্তা বিবেচনায় আমরা একটি পরিকল্পনা করেছি। এর আওতায় আমাদের ৭ কোটি ৬৫ লাখ গ্রাহকের চলমান সেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে।
‘আমরা মনে করি এমন একটি সময়ে গ্রাহকের পাশে থাকা বেশি জরুরি। আমাদের এমপ্লয়ি যারা সরাসরি গ্রাহকসেবার সঙ্গে জড়িত নন, তাদেরকে বাসা থেকে অফিস করার জন্য উৎসাহিত করছি। একই সাথে যারা সরাসরি গ্রাহকসেবা দেবেন তাদের জন্য যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে উৎসাহিত করছি।
‘ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি যেন সরাসরি যোগাযোগ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা যায়। আমরা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী নির্দেশনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
গ্রামীণফোন সূত্র জানায়, ছাঁটাই ১৫৯ জনের মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩০ জন আকর্ষণীয় ভিআরএস নেয়ার জন্য আবেদন করেছেন। গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছে।
এবারে ভিআরএসে ছিল
চাকরির বয়স বিবেচনায় সর্বোচ্চ ১০০টি বেসিক।গ্রামীণফোনে কর্মরত অবস্থায় একজন কর্মী যে স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা পেতেন, অবসরে যাওয়ার পরে পরবর্তী ২ বছর একই সুবিধা পাবেন। এই স্বাস্থ্যবিমার মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মীরা, তাদের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও মা, বাবা ওপিডি ও আইপিডি সুবিধা পাবেন।
জীবন বিমার আওতায় আগামী দুই বছরে মৃত্যুজনিত কারণে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর পরিবারকে ২৪ মাসের গ্রস বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান।
ওপিডির আওতায় অবসরে যাওয়া কর্মী, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও মা, বাবা দুই বছর (যতবার হাসপাতালে ভর্তি হবেন) ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিমাসুবিধা পাবেন।
এ ছাড়া ভিআরএস নেয়া কর্মীদের বাজার চাহিদা মোতাবেক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করার কথা বলা হয়েছে।