সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ করার দাবিতে আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এর প্রতিবাদে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিয়েছে।
তরুণরা করোনায় শিক্ষাজীবনে সময় নষ্টের কারণে চাকরির বয়স সীমা ৩০ থেকে দুই বছর বাড়ানোর দাবি নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন।
এ সময় দুই জনকে আটক করে শাহবাগ থানায় নেয়া হয়। এদের একজনের নাম বাকি বিল্লাহ। তিনি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
বিকেল তিনটা থেকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেয়া শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা দুই শতাধিক চাকরিপ্রত্যাশী।
প্রায় দুই ঘণ্টা পর বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে আন্দোলনকারীরা জাদুঘরের সামনে থেকে শাহবাগ মোড় ঘুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের দিকে অগ্রসর হয়।
তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়ার চেষ্টাও করে। তবে পুলিশের অনুরোধে সেখান থেকে সরে শাহবাগ থানার সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে শুরু করে।
কিছুক্ষণ পর ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা অঞ্চলের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ থানার সামনে থেকে তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের বাক বিতণ্ডা শুরু হয়।
এক পর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময় বাকি বিল্লাহকে আটক করা হয়।
লাঠিপেটায় ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারীরা রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেয়।
এ বিষয়ে ‘৩২ চাই’ আন্দোলনের সমন্বয়ক সাজিদ সেতু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অহিংস আন্দোলনে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আমাদের একজনকে আটক করা হয়েছে।’
পরবর্তী কর্মসূচি কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপাতত রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করাই আমাদের কর্মসূচি।’
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন অর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেপ্তার বা আটক নয়, আন্দোলন থেকে দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। কিসের বা কেন এই আন্দোলন এটা নিয়েই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের রাজু ভাস্কর্যে যাওয়ার কথা ছিল। থানার সামনে দাঁড়ানোর কোন অনুমতি তাদের ছিল না। তাই তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে।’
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য
এর আগে জাদুঘরের সামনে নেয়া অবস্থান চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তানভীর হোসেন বলেন, 'দেশে এখনও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলমান এবং আরও দীর্ঘ হতে যাচ্ছে। করোনায় শিক্ষার্থীদের প্রায় দুই বছর জীবন থেকে অতিবাহিত হতে চলছে।
'সরকারের সকল প্রণোদনার পাশাপাশি মুজিববর্ষের ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছরে আমরা বেকার যুবকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট প্রণোদনা স্বরূপ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবি জানাচ্ছি।’
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাকরির দাবিতে এখানে আসিনি। আমরা শুধু করোনার কারণে আমাদের জীবন থেকে চলে যাওয়া সময়গুলো ফিরিয়ে নিতে এসেছি। এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাবো না।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন আন্দোলন করতে পারব না। যা করার একদিনেই করব। আমরা ৩২ নিয়েই ঘরে ফিরব।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নোমান বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বাস্তবতার নিরিখে বয়স বৃদ্ধির জন্য প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। করোনার এই ক্ষতির চেয়ে বড় বাস্তবতা আর কী হতে পারে?’