কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর দেশের সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর (শপ) পদে ১০৫৭ জন, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর (টিআর/ইলেকট্রনিকস/টেক) পদে ১০১৯ জন এবং ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর (টেক/ল্যাব) পদে ১০৫ জনসহ মোট ২১৮১ জনকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। গত ২৫ মে ২০২১ শেষ হয়েছে আবেদন-প্রক্রিয়া। এবার পরীক্ষার পালা। ট্রেডভিত্তিক পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দরকার ভালো প্রস্তুতি।
পরীক্ষা যেমন হতে পারে
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ এবং ২০২০ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরীক্ষা ২০২১ সালে নেয়া হয়। তাতে দেখা যায়, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর পদের বাছাই ও চূড়ান্ত নিয়োগে প্রার্থীদের দুই ধরনের পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। এবারের নিয়োগে একই পদ্ধতির পরীক্ষা নেয়া হতে পারে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আবেদন যাচাই-বাছাই করে যোগ্যদের প্রথমে ডাকা হবে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতির পরীক্ষার জন্য। সময় ১ ঘণ্টা।
এমসিকিউ পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলায় ২০, ইংরেজিতে ২০, গণিতে ২০, সাধারণ জ্ঞানে ২০ এবং সংশ্লিষ্ট ট্রেডে থাকবে ২০ নম্বর। এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ডাক পড়বে মৌখিক বা ভাইভা বা চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য।
তবে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের পরীক্ষাগুলোতে মোট তিনটি পদ্ধতির পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল। সেসব পরীক্ষায় ১৫০ নম্বরের মধ্যে ১০০ নম্বরের লিখিত রচনামূলক, ৪০ নম্বরের ব্যবহারিক এবং ১০ নম্বর ছিল ভাইভায়। এতে প্রথমে লিখিত রচনামূলক পরীক্ষার ধাপ পেরোনোদের ডাক পড়েছিল ব্যবহারিকের জন্য। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নেয়া হয়েছিল ব্যবহারিক পরীক্ষা। ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সবশেষে ডাকা হয়েছিল ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষায়। তবে এবারের নিয়োগ পরীক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতির পরীক্ষা এবং ভাইভার মাধ্যমেই নিয়োগ দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
বিষয়ভিত্তিক লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
এমসিকিউ পদ্ধতির পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান ও পদের বিপরীতে চাওয়া ট্রেডের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ওপর প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। মূলত এসব বিষয়ের ওপরই প্রার্থীদের পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে। এমসিকিউ পরীক্ষায় প্রায় সব বিষয়ের প্রশ্ন আসে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই থেকে। এ জন্য এসএসসি ও এইচএসসির পাঠ্যবইগুলোর ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে।
বাংলা
বাংলা অংশে বাংলা সাহিত্য ও ব্যাকরণ থেকে বেশি প্রশ্ন করা হয়। বাংলা সাহিত্যের গদ্য পদ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ নাটক, উপন্যাস অংশ থেকে প্রশ্ন আসে। ব্যাকরণ অংশে সমাস, কারক, এক কথায় প্রকাশ, সন্ধি বিচ্ছেদ, বিপরীত শব্দ, ভাষা, ধ্বনি, নত্ব-বিধান, সত্ব বিধান, সামর্থক শব্দ, বাক্য রচনা, বাগধারা, প্রবাদ প্রবচন, প্রত্যয়, অব্যয় এসব বিষয়ের ওপর বেশি প্রশ্ন করা হয়।
ইংরেজি
ইংরেজি বিষয়ে গ্রামার অংশে Parts of speech, Number, Articles, Degree, Tens, Rights from of Verbs, Preposition, Sentence, Synonyms, Anatomy, Gender, corrections, Presses, Translation অধ্যায়গুলো থেকেই বেশি প্রশ্ন করা হয়। এ ছাড়া ইংরেজি সাহিত্যের অংশ থেকেও প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।
গণিত
গণিত অংশে বীজগণিত, পাটিগণিত, ত্রিকোণোমিতি, পরিমিতি, জ্যামিতি, ত্রিভুজ ও বৃত্ত থেকে ক্যালকুলেটিভ প্রশ্ন করা হয়। বীজগণিত থেকে উৎপাদক, সেট, সূত্র, বর্গ এসব অধ্যায়, পাটিগণিত থেকে শতকরা, সুদকষা, ঐকিক, সরল, অনুপাত-সমানুপাত, লাভ-ক্ষতি, ক্ষেত্রফল, পরিমাপ অংশ থেকে প্রশ্ন করা হয়।
সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ের দৈনন্দিন বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, ইতিহাস, ধর্ম, আবিষ্কার, রাজনীতি, অর্থনীত, সমাজনীতিসহ বাংলাদেশের ইতিহাস সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি অংশ থেকে প্রশ্ন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট ট্রেড
ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর (শপ), ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর (টিআর/ইলেকট্রনিকস/টেক) এবং ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর (টেক/ল্যাব) পদগুলোতে ত্রিশের অধিক ট্রেড রয়েছে। প্রতিটি ট্রেডের মেজর বিষয়ের ওপরই প্রশ্ন করা হয়।
লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার উপায়
লিখিত পরীক্ষার হলে প্রথমেই প্রশ্ন পেয়ে সময় নির্ধারণ করে নিতে হবে। টাইম ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে বেশ খেয়াল রাখতে হবে। এমনভাবে সময় নির্ধারণ করতে হবে, যাতে সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া যায়। উত্তর খুবই সাবধানে দিতে হবে। ভুল হলে পুনরায় উত্তর দেয়ার সুয়োগ নেই। কারণ বাড়তি কোনো উত্তরশিট দেয়া হয় না। বিগত ১০ বছরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এবং বিসিএস পরীক্ষার গত ৪ বছরের প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে ভালোভাবে ঘাঁটতে পারলে নিয়োগ পরীক্ষার ৮০ শতাংশ প্রস্তুতি নেয়া হয়ে যাবে।
২য় শ্রেণি বা ৩য় শ্রেণির পদগুলোর সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের প্রস্তুতি থাকলে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের এসব পদের পরীক্ষায়ও ভালো করার সুযোগ রয়েছে।
ভাইভার প্রস্তুতি
এবারের ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পদার্থ, রসায়নসহ স্নাতক বা সমমান অথবা এইচএসসিসহ (ভোকেশনাল) সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ২ বছরের ট্রেড কোর্স পাস এবং ৫ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে।
তাই ভাইভা বোর্ডে কর্তাব্যক্তিরা প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। যদি কোনো প্রার্থী পদার্থ, রসায়নসহ স্নাতক পাস করে থাকেন, তবে তার কাছে এ দুটি বিষয়ের ওপরই জানতে চাইবে। তাতে প্রার্থীর যোগ্যতার পুরো ছবি ফুটে উঠবে।
বেসিক জ্ঞানের ওপর প্রশ্ন থাকে। নিজের সম্পর্কে, দেশ, বিশ্বের নানা প্রান্তের ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্ন থাকতে পারে। তাই নিজেকে আপডেট রাখতে হবে পাঠ্যবিষয় ও বৈশ্বিক সাধারণ জ্ঞানের ওপর। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। নিজেকে বলতে হবে, ‘আমি পারব’।