বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খেজুর রস যখন আয়ের উৎস

  •    
  • ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৭:১৫

বাঙলা কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে গাছের একদিকের কাঁটা ফেলে দিয়ে কিছুদিন বিশ্রামের পর অগ্রহায়নের মাঝামাঝি খলা তৈরি করে রস সংগ্রহ করতে হবে। সংগ্রহ চলবে চৈত্র মাস পর্যন্ত।

শীতকালে খেজুরের রস আয়-রোজগারের মৌসুমী মাধ্যম। গ্রামাঞ্চলের স্বল্প আয়ের মানুষ শীতের এই দুই-তিন মাস খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে ১২ মাসের সাংসারিক খরচ জোগায়। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে কিংবা গুড় তৈরি করে এ আয় করা সম্ভব। খণ্ডকালীন এ পেশায় যারা নিয়োজিত, গ্রামবাংলায় তাদের বলা হয় ‘শিউলি বা গাছি’।

প্রাথমিক কাজরস সংগ্রহ করতে প্রথমত নিজের বা অন্যের খেজুর গাছ নির্বাচন করতে হবে। রসের উপযোগী গাছ ঝোরতে (পরিষ্কার) হবে। দরকার হবে বাঁশের তৈরি ঠুলি (ঝুড়ি)। খলা তৈরি করতে দুইটি ‘ছেনি’ ও একটি ‘কোপা-দা’ লাগবে। আবার দা ধারালো রাখতে দরকার হবে বালু আর বালিকাচা (সুপারি কাঠ)। কোমড়ে বাঁধতে হবে পাটের চট। লাগবে ৫-৬ হাত লম্বা কাছি (রশি), যা গাছিকে গাছের সাথে বেঁধে রাখতে সাহায্য করে। ৩ হাত লম্বা একটি বাঁশ, গাছের ডাল-পালা পরিষ্কার করার সময় আড়াআড়ি বেঁধে যেটার উপড় দাঁড়াতে হবে। সবশেষে রস পড়ার উপযোগি খলা (বাঁশের নলি) ও দুইটা খিল দিয়ে হাড়ি দিতে হবে।

রস সংগ্রহবাঙলা কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে গাছের একদিকের কাঁটা ফেলে দিয়ে কিছুদিন বিশ্রামের পর অগ্রহায়নের মাঝামাঝি খলা তৈরি করে রস সংগ্রহ করতে হবে। সংগ্রহ চলবে চৈত্র মাস পর্যন্ত। যে গাছে খেজুর হয় না, সে গাছের রস সংগ্রহ শুরু করতে হবে অগ্রহায়নের শেষের দিকে। সংগ্রহ শেষ হবে মাঘ মাসের শেষের দিকে। যে গাছে খেজুর ধরে, সে গাছের রস পৌষ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংগ্রহ করা যাবে। সপ্তাহের চারদিন বিকেলে গাছ কাটতে হবে। রাতের জমানো রস সকালে সংগ্রহ করতে হবে। গাছকে অবশ্যই সপ্তাহে তিন দিন বিশ্রাম দিতে হবে।

গাছি আবুল কালাম। ছবি: নিউজবাংলা

গুড় তৈরিগাছিরা ইচ্ছা করলে রস দিয়ে গুড় তৈরি করতে পারেন। তা করতে হলে সকালে রস সংগ্রহের পর বাড়ির আঙিনায় স্থায়ী বা অস্থায়ী চতুর্ভূজ আকৃতির বিশেষ চুলার ওপর সিলভারের তাফালে (চতুর্ভূজ আকৃতির পাত্র) আগুনে জাল দিয়ে রস চিট (আঁঠাল) করতে হবে। এবার ছোট ছোট মাটির গর্তের ওপর কাপড় রেখে কিংবা পরিষ্কার প্লেট বা থালায় ঢেলে গুড় তৈরি করতে হবে। শক্ত হলে গুড় তুলে নিতে হবে। আকারে ছোট গুড়কে পাটালি, আর বড় গুড়কে মধুখণ্ড বলা হয়।

বিক্রি ও আয়বাজারে এক হাড়ি রস ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারে। রস ক্রেতারা সকালবেলা আপনার বাড়ি এসে নিয়ে যাবেন বা স্থানীয় বাজার থেকেও কিনে নিতে পারবেন। আপনার অধীনে ১৫-২০টি গাছ থাকলে আপনি প্রতিদিন ২ হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকার রস বিক্রি করতে পারবেন। বর্তমানে বাজারে খেজুর গুড় বিক্রি করতে পারেন প্রতি কেজি ৩শ থেকে ৩শ ৫০ টাকা দরে। যারা গুড় তৈরি করবেন, তারা অন্য শিউলি বা গাছির কাছ থেকে অতিরিক্ত রস কিনে নিতে পারবেন। গুড় বিক্রেতারা স্থানীয় ব্যবসায়ী বা পাইকারের কাছে গুড় বিক্রি করতে পারেন। পাইকারি বিক্রি করলে লাভ একটু কম হবে। হাটে বসে খুচরা বিক্রি করলেই লাভবান হবেন বেশি।

শিউলি বা গাছির কথাশিউলি বা গাছি আবুল কালাম জানান, ‘মোর ৩০টা গাছ মুই কাটি। ভালোই আয় অয়। আরেক জনের গাছ কাটা লাগে না। আরেক জনেরটা কাটলে তারে তিন ভাগের এক ভাগ দেওয়া লাগে। তিন বছর অইলো পোলা দুইডা বিদাশ আছে। অগো টাকা মোর লাগে না। মোরা খাইয়া-লইয়া ভালোই আছি।’

এ বিভাগের আরো খবর