নিরাপদ-স্বচ্ছল জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে উন্নত দেশগুলোতে পাড়ি দেন অনেকে। তবে বিদেশে গিয়ে কী করবেন সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকে না অনেকেরই। তাই দেশের বাইরে গিয়ে স্বস্তির জীবনের পরিবর্তে তৈরি কঠিন টানাপড়েনের অভিজ্ঞতা।
এদিক থেকে একেবারেই ব্যতিক্রম আশরাফ ইবনে সিদ্দিক রানা। কানাডায় সপরিবারে পাড়ি জমানোর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে সফল আবাসন ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।
প্রবাস জীবনের চার বছরের মধ্যে ব্রোকারেজের মাসিক মূল্যায়নে পাঁচ হাজার এজেন্টকে পেছনে ফেলে শীর্ষ এজেন্টদের তালিকায় এসেছে আশরাফের নাম। আবাসন প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক পত্রিকা ‘টপ এজেন্ট ম্যাগাজিন’-এর সাম্প্রতিক প্রকাশনায় শোভা পাচ্ছে আশরাফকে নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক পত্রিকাটিতে বলা হয় ‘প্রিমিয়ার রিয়েলস্টেট ম্যাগাজিন’, যারা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ও নিউজিল্যান্ডের শীর্ষ আবাসন ব্যবসায়ীদের পেশাগত যোগ্যতা বিচার ও তাদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে।
‘টপ এজেন্ট ম্যাগাজিন’-এ আশরাফ ইবনে সিদ্দিক রানাকে নিয়ে প্রতিবেদন
আবাসন ব্যবসার মতো প্রতিযোগিতামূলক এবং ঝুঁকিপূর্ণ শাখায় কাজ শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই এ ধরনের স্বীকৃতিতে উৎসাহ আরও দৃঢ় হয়েছে বলে মনে করেন আশরাফ।
বিদেশের মাটিতে জায়গা করে নেয়ার শুরুর দিকটা সহজ ছিল না। আশরাফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিজ সিদ্ধান্তে অটল থেকে পরিশ্রম দিয়ে ধাপে ধাপে সামনে এগোতে হয়েছে। সঙ্গে ছিল পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরির তাগিদ।’
স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে কানাডায় আসার সপ্তাহখানেকের মধ্যেই টরন্টোতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানির স্থানীয় একটি শাখায় ব্যবস্থাপক পদে চাকরি পান আশরাফ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আশরাফ পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে ব্যবসা প্রশাসনে এমবিএ করেন। তিনি জানান, দেশে থাকতে দীর্ঘদিন কর্পোরেট কাজের অভিজ্ঞতাই তাকে এই চাকরি পেতে সহায়তা করেছিল।
কিছুদিনের মধ্যে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন আশরাফ ইবনে সিদ্দিক রানা। আর তা বাস্তবায়নে কয়েক মাসের মাথায় চাকরি ছেড়ে লাইসেন্স নিয়ে শুরু করেন আবাসন ব্যবসা।
আশরাফ বলছিলেন, ‘একজন মানুষের সফ্ট স্কিলগুলো যে কোনো দেশে আসলে একই রকমভাবে কাজ করে। তবে সবার আগে যা দরকার তা হলো কমনসেন্স। এই জিনিসের কোন দেশ কাল পাত্র নেই। খুবই সাধারণ জিনিস, কিন্তু এটাই সবচেয়ে আনকমন। শুধু কমনসেন্স কাজে লাগিয়েই শতকরা ৯০ ভাগ সফল হওয়া সম্ভব।’
কানাডায় ব্যবসার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে আশরাফ বলেন, ‘এখানে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো অনেক কিছুই এখনও সিস্টেম মেনে চলে। সেইসঙ্গে এই দেশে নিজের পছন্দমতো ক্যারিয়ার নির্বাচন করে সেই বিষয়ে পড়াশোনা করার ব্যাপক সুবিধা রয়েছে। যে কেউ যে কোনো বয়সেই এটা শুরু করতে পারে।’
আশরাফ মনে করেন প্রবাসেও বাংলাদেশিদের জন্য কাঠামোগত অনেক সুবিধা রয়েছে। যে কেউ সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে থাকলে সফল হওয়া কঠিন কিছু নয়।
‘এজন্য সবার আগে দরকার লক্ষ্য নির্ধারণ করে ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় দক্ষতা তৈরি করে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করা। আমার মনে হয়, গ্লোবাল মার্কেটে আমাদের প্রবাসী ব্যবসায়ীরা এখন দারুণভাবে সফল হচ্ছে।’
শিগগিরই নিজস্ব ব্রোকারেজ চালু করে পুরোদস্তুর ব্যবসার প্রসারে কাজ করতে চান আশরাফ। পাশাপাশি নিজের কমিউনিটির জন্য কাজ করে যাবার ইচ্ছাও আছে তার।