জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের সঙ্গে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও গুণগত ব্যয় নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের আয়োজনে বুধবার ‘জাতীয় বাজেট: প্রেক্ষিত-স্বাস্থ্য ও পরিবেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনার এ আহ্বান জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ।
ওয়েবিনারে মূল্য প্রবদ্ধ উপস্থাপনা করেন ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সহসভাপতি ডা. এম এইচ ফারুকী।
অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে, তবে এর একটি বড় অংশ এই খাতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনে ব্যয় হবে। স্বাস্থ্য খাত মেরামত করতে প্রয়োজন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপন ও গুণগত ব্যয় নিশ্চিত করা।’
তিনি বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতের বর্তমান কাঠামো অনেক বেশি পুরোনো, যা ঢেলে সাজানোর দিক নির্দেশনা বাজেটে আসার কথা ছিল। তবে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।
এই অধ্যাপক বলেন, স্বাস্থ্য খাতে থোক বরাদ্দে ১০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে, তা দিয়ে টিকা কেনা ও অন্য কাজ করা যাবে। কিন্তু সাধারণ অর্থে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এই বাজেটে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি।
‘গতবছর স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ টাকা খরচ করা যায়নি। এটার মূল কারণ হলো, সঠিক পরিকল্পনা না থাকা। মহামারির এই বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া কথা ছিল, তেমনটা প্রভাব বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘বাজেট ঘোষণার পর আসল কাজ হচ্ছে বাস্তবায়ন। কীভাবে এই টাকা খরচ করা হবে, কীভাবে বাস্তবায়ন হবে বা বাস্তবায়নের সামর্থ্য আছে কি না, এ বিষয়টি এখনই ভাবতে হবে।’
এ জন্য উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম জোরালো করার আহ্বান জানান তিনি।
বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো যেভাবে চলছে, তা সত্যিই হতাশার। এই কাঠামো অনেক পুরানো। কীভাবে কাঠামোগত উন্নয়ন আরেকটু করা যায় সে বিষয়ে এখনই ভাবতে হবে।’স্বাস্থ্য খাতের গবেষণায় বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও কীভাবে ও কোন পরিকল্পনায় তা খরচ করা হবে সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি বলে জানানো হয়।
ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান মাহামারি মধ্যে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
দেশের স্বাস্থ্য খাতে খুব ভালো কোনো গবেষণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য বাজেটে প্রায় ২৫ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার ওপর। এটা গত ৫ বছরের চেয়ে সবচেয়ে কম। সরকারের একার পক্ষে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপানা উন্নয়ন করা সম্ভব নয়, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বয় করেই তা করতে হবে।’
ওয়েবিনারে দেশের কমিনিউটি ক্লিনিককে আরও শক্তিশালী করার দাবি জানান তিনি। বলেন, ‘করোনার মধ্যে আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ে গবেষণায় দেখা গেছে, কমিনিউটিগুলোতে রোগীরা সঠিক সেবা পায়নি। এসব ক্লিনিক যথাযথ চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসাকর্মী নিয়োগ দিয়ে আরও শক্তিশীল করতে হবে।’
সিপিডির এই ফেলো বলেন, আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছিল সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন নেই। সত্যিই কাজটি করতে চাইলে সার্বজনীন স্বাস্থ্যবিমা নিশ্চিত করতে হবে।