কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ।
সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেট পাসের প্রস্তাবের ওপর আনা মুঞ্জরি দাবি সম্পর্কিত ছাটাই প্রস্তাব আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন অপ্রদর্শিত কালো টাকা যতক্ষণ পর্যন্ত থাকবে, ততক্ষণ প্রদর্শনের সুযোগ দেব। এটা প্রধানমন্ত্রীর যে ঘোষণা দুর্নীতির বিরুদ্ধে (জিরো টলারেন্স) তার সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। এরকম চলতে পারে না।’
শুক্রবার বাজেট পরবর্তী এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয়া যদি লাভজনক হয়, তাহলে অব্যাহত রাখার জন্য আলোচনা করা হবে।’
অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগের কেউ পক্ষে আবার কেউ বিপক্ষে রয়েছে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বলছেন এক্ষেত্রে সমাজের ইকুইটির জাস্টিস এনশিউর করা যাবে না যদি এটি অব্যাহত থাকে। তাই বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা আরো এক মাস এইটা দেখব। তারপর আলোচনা হবে।’
হারুন বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ আর কালো টাকা এক নয়- এ কথার সঙ্গে আমি একমত। অপ্রদর্শিত অর্থ ঘরবাড়ি জমি বিক্রি করা টাকা। যেগুলো বৈধ, সেগুলো বৈধ করার সুযোগ দিন। কিন্তু দুর্নীতির মাধ্যমে, মাদকের মাধ্যমে অবৈধ রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের মাধ্যমে যদি কেউ সম্পদ গড়ে তোলে, তাকে যদি সুযোগ দেন তাহলে যারা ন্যায়ের পথে চলছে, সৎ পথে চলছে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এই সাংসদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেয়ার বাজার একেবারে শুয়ে গেছে। বাস্তবিক অর্থে বাংলাদেশের অর্থনীতি সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্নীতিগ্রস্থ। দুর্নীতির এই অবস্থা যদি কমাতে না পারেন তাহলে ভয়নাক অবস্থা হবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির সময়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে করোনা নিয়ন্ত্রণে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দুটি খাত হচ্ছে পোশাক শিল্প আর প্রবাসী আয়। করোনার সময় যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে এই খাত দুটি এমন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা কল্পনাও করা যায় না।
‘পোশাক শিল্পের বায়াররা দেশে আসতে পারবেনা। প্রবাসীরা বিদেশে যেতে পারবে না। প্রবাসীদের বৈদেশিক মুদ্রা আয় যদি নিচে নেমে আসে তাহলে আমরা আবার ভয়ানক একটা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়ব। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা খুবই বেহাল দশা। প্রতি বছর লাখ লাখ কোটি টাকা ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিচ্ছে, এতে প্রতিষ্ঠানগুলো বিকলাঙ্গ হয়ে যাচ্ছে।’
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সমালোচনা করে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘একদিকে মাতারবাড়ি রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবেন আর অন্যদিকে গাছ লাগাবেন এটা হয় না। পরিবেশের আরও বিপর্যয় ঘটবে। সারা পৃথিবীতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, আর আপনি এদিকে বলছেন গাছ লাগাও।’
এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়। এতে দুটি মঞ্জুরি দাবি নিয়ে আলোচনা হয়। একটি হচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অপরটি হচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।