বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভর্তুকি বাজেট গোপন কেন?

  •    
  • ৭ জুন, ২০২১ ১১:০১

অর্থনীতিবিদরা বলে আসছেন, ভর্তুকির বাজেট আরও স্বচ্ছ হওয়া উচিত। ভর্তুকির ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। কোন খাতে ভর্তুকি দেয়া উচিত, তা নিয়ে খাতভিত্তিক গবেষণা জরুরি।

বাজেটে ভর্তুকির বিষয়গুলো সুস্পষ্ট নয়। বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ যেভাবে পরিষ্কার করে দেখানো হয়, ভর্তুকিতে সে রকম দেখানো হয় না। অনেকটাই গোপন করা থাকে।

অথচ বাজেটের বড় একটি অংশই খরচ হয় ভর্তুকি খাতে। প্রতি বছরের বাজেটে একই চিত্র দেখা যায়। বাজেটে ভর্তুকি নিয়ে কেন এই অস্বচ্ছতা, তার কোনো স্বচ্ছ জবাব সরকারি নীতি নির্ধারকদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ভর্তুকির টাকা সরাসরি জনগণের দেয়া করের টাকা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মনে করে, ভর্তুকি দেয়ার অর্থই হচ্ছে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা অদক্ষ।

সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধি করে ভর্তুকির টাকা উন্নয়নকাজে ব্যয় করার পক্ষে সংস্থাটি। তাদের (আইএমএফ) এড়াতে সুকৌশলে অনেক ক্ষেত্রে ভর্তুকির বিষয়টি ‘ঋণ’ হিসেবে দেখানো হয়।

অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘ সময় ধরে বলে আসছেন, ভর্তুকির বাজেট আরও স্বচ্ছ হওয়া উচিত। একই সঙ্গে ভর্তুকির ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন।

এ ছাড়া কোন খাতে ভর্তুকি দেয়া উচিত আর কোন খাতে উচিত নয়, তা নিয়ে খাতভিত্তিক গবেষণা জরুরি। তা না হলে এর সুফল ‘টার্গেট গ্রুপ’ পাবে না।

সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে চলছে। জনগণের কষ্টার্জিত করের টাকা দিয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখছে সরকার। ফলে ভর্তুকি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

তবে সরকারের পক্ষে যুক্তি হচ্ছে, ভর্তুকি না দিলে কৃষিপণ্য ও বিদ্যুতের দাম বাড়বে। আর প্রতিযোগী দেশগুলো ভর্তুকি দিলে বাংলাদেশ যদি না দেয়, তাহলে চূড়ান্ত বিচারে ক্ষতির শিকার হবে দেশ ও দেশের জনগণ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, সরকারের প্রধান লক্ষ্য দারিদ্র্য ও অসাম্য কমানো। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করে সামাজিকভাবে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে ভর্তুকির প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তারা।

ভর্তুকিতে বরাদ্দ

প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি, রপ্তানিসহ বিভিন্ন খাতে সব মিলিয়ে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা মোট বাজেটের প্রায় ৮ শতাংশ ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশ।

বাজেটে এটি দেখানো হয়েছে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ হিসেবে। যে অর্থবছরটি শেষ হতে যাচ্ছে, তাতে ভর্তুকির পরিমাণ ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

বাজেটে প্রতি বছর ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে। একসময় বেশি ভর্তুকি দিতে হতো জ্বালানি খাতে। এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম ওঠানামার ওপর।

গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় বাংলাদেশে এ খাতে ভতুর্কি দিতে হচ্ছে না। এখন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিদেশ থেকে তেল আমদানি করে বিক্রি করে বরং মুনাফা করছে। নতুন বাজটে এ খাতে বরাদ্দ শূন্য।

তবে গ্যাসের সংকট মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজিতে ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। প্রকৃত দামের চেয়ে কম দামে এলএনজি বিক্রি করার ফলে এ খাতে ভর্তুকি লাগে।

প্রস্তাবিত বাজেটে এলএনজিতে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। সরকার হিসাব করে দেখেছে, যে দামে এলএনজি আমদানি করা হয়, সেই দামে শিল্পোদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি করলে তাদের উৎপাদনে খরচে বেশি পড়ে। তাই তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভর্তুকি দেয়া হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আাজিজুল ইসলাম বলেন, ভর্তুকি খাতে দেয়া বরাদ্দ স্বচ্ছ নয়। এ বিষয়ে খাতভিত্তিক গবেষণা করা দরকার। ভর্তুকির ব্যবস্থাপনা কাঠামোতে আমূল সংস্কারের পাশাপাশি একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের পরামর্শ দেন তিনি।

সাবেক এই উপদেষ্টা মনে করেন, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রতি বছর বড় আকারের ভর্তুকির বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন।

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেখানো হয়। আবার কিছু বিষয়ে লুকানো থাকে। এটি ঠিক না। বাজেটে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হলে ভর্তুকির খাতওয়ারি বরাদ্দ স্পষ্ট করে দেখাতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে সাত থেকে আটটি খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে খাদ্য, বিদ্যুৎ, কৃষি, রপ্তানি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য ও রেমিট্যান্স।

করোনায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তার বিপরীতে নতুন করে ‘সুদ ভর্তুকি’ দিচ্ছে সরকার । প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, বর্তমানে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পেছনে ভর্তুকির অবদান রয়েছে। কল্যাণ রাষ্ট্র তৈরির জন্য ভর্তুকি দরকার।

কৃষিতে এবার ভর্তুকি দেয়া হয় ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। মূলত সার আমদানিতে এ সুবিধা দেয়া হয়। কৃষি উৎপাদন খরচ সহনীয় রাখতে কৃষকদের এ ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে।

দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বিদ্যুৎ খাত। বেসরকারি খাত থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে সরকার কম দামে গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেয়। এ জন্য ভর্তুকি লাগে। এই খাতে চলতি অর্থবছরের মতো প্রস্তাবিত বাজেটেও বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে খাদ্যে ভর্তুকি রাখা হচ্ছে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিনা মূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির মতো কারণে এ খাতে ভর্তুকি বেড়ে গেছে।

বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে দুই অর্থবছরে আগে এ খাতে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদানা ঘোষণা করায় দেশে রেকর্ড রেমিট্যান্স বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা।

পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে এ খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এর পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা।

রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখা এবং নতুন নতুন বাজার সন্ধানে এ খাতে ভর্তুকি দিয়ে আসছে সরকার। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জনে এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

নতুন বাজেটে রপ্তানিতে বরাদ্দের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয় প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর