বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কালোটাকা: অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে টিআইবির ‘বিস্ময়’

  •    
  • ৫ জুন, ২০২১ ২২:২৪

টিআইবি বলছে, কোনো কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন ব্যতিরেকে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ সরকারের ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার’ অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধই করছে না, বরং দুর্নীতিবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখছে।

ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামালের এক মাস দেখে সিদ্ধান্তের ঘোষণায় ‘বিস্ময়’ ও ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী ২০২১-২২ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তাতে ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগটি আর রাখেননি। অর্থমন্ত্রীর ওই প্রস্তাবের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় টিআইবি সরকারের ‘বোধোদয়’ হয়েছে উল্লেখ করে সতর্ক সাধুবাদ জানিয়েছিল।

কিন্তু শুক্রবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে কালোটাকা সাদা করার বিষয়ে সার্বিক পরিস্থিতি এক মাস দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। আর তাতেই ‘ক্ষোভ’ ও ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করে শনিবার বিবৃতি দিয়েছে টিআইবি।

বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত আয়ের মোড়কে ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার যে অনৈতিক সুযোগ রাখা হয়েছিল, প্রস্তাবিত বাজেটে সেটি না বাড়ানোয় সৎ করদাতাদের মধ্যে যে সাময়িক স্বস্তি মিলেছিল, তা এক দিনের ব্যবধানে উৎকণ্ঠায় পরিণত হয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর ‘এক মাস দেখে সিদ্ধান্ত’ নেয়ার ঘোষণায় গভীর হতাশা, বিস্ময় ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে টিআইবি। অর্থমন্ত্রী হঠকারী এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবেন এবং ৩০ জুনের পর দুর্নীতিসহায়ক, বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক সুবিধাটি আর না বাড়িয়ে দুর্নীতিবাজদের একটি কঠোর বার্তা দেবেন বলেও আশা টিআইবির।

বাজেটে কালোটাকা সাদা করা নিয়ে কোনো ঘোষণা না থাকাকে টিআইবি সরকারের বোধোদয় হয়েছে মনে করেছিল এবং সতর্ক সাধুবাদ জানিয়েছিল বলে টিআইবির বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, বাজেট অর্থমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দিকনির্দেশনায় তৈরি একটি সমন্বিত চিন্তার আর্থিক দলিল। কিন্তু সেটি সংসদে উপস্থাপনের পরদিনই তারই একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সংশয় এবং বাস্তবে ইউটার্ন সত্যিই অবাক করার মতো।

‘তার চেয়েও হতাশার বিষয় হচ্ছে, ন্যায় ও ন্যায্যতার নিরিখে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ চলতি অর্থবছরের পর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মলেনে অর্থমন্ত্রী এমন বললেও কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় বা চাপে তাতে অটল থাকতে পারছেন না? তা পরিষ্কার করতে পারেননি।’

গত ৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ছবি: পিআইডি

ইতিপূর্বে ‘যতদিন অপ্রদর্শিত আয়, ততদিন ঘোষণার সুযোগ’ মর্মে দেয়া বক্তব্য তথ্য-উপাত্ত দ্বারা সমর্থিত ছিল না বলে অর্থমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা সংবাদ সম্মেলনে হাজির করেছেন, সেটি তার মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে সত্যিই আশাপ্রদ নয় বলে মনে করছে টিআইবি।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেকর্ড ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বৈধ করার ঘটনাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর একটি প্রচেষ্টা শুরু থেকেই ছিল, শঙ্কা হচ্ছে তিনি অন্যায় এই সুবিধার পক্ষে সেই ঢালটি এখন ব্যবহার করতে চাইছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

‘অথচ এর মাধ্যমে সত্যিকারভাবে সরকার কতটা রাজস্ব ক্ষতির শিকার হলো, সেটি কোনোভাবেই বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। যেটিকে সৎ ও বৈধ পন্থায় উপার্জনকারী করদাতাদের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করার মাধ্যমে কর ব্যবস্থায় খেলাপির সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের পাঁয়তারা বলে মনে করা মোটেই বাহুল্য হবে না।’

কোনো কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন ব্যতিরেকে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ সরকারের ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার’ অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধই করছে না, বরং দুর্নীতিবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখছে বলে উল্লেখ করা হয় টিআইবির বিবৃতিতে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আয়কর অধ্যাদেশের আইনি মারপ্যাঁচে থাকা অপ্রদর্শিত আয়ের মোড়কে কালোটাকা সাদা করার অন্যান্য সুযোগও বাতিল করার এখনই সময়। অপ্রদর্শিত অর্থ আর কালোটাকার মধ্যে পার্থক্য যে অতীব ক্ষীণ, তা কর্তৃপক্ষের অজানা থাকার কথা নয়। কোনো না কোনো কৌশলে দুর্নীতিবাজদের তোষণের নীতি থেকে বেরিয়ে এসে সরকার দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে মনোযোগী হওয়ার মাধ্যমে সাংবিধানিক অঙ্গীকার রক্ষায় এগিয়ে আসবে, এমনটাই প্রত্যাশা।’

সব ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব এবং স্বার্থান্বেষী অনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ প্রদান না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে টিআইবি বলেছে, ‘সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় যত দ্রুত হবে, দেশের অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত সুশাসনও তত ত্বরান্বিত হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর