বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অপরিপক্ব বাজেট: সানেম

  •    
  • ৫ জুন, ২০২১ ১৪:১০

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের পর্যবেক্ষণ, বাজেটে করোনাকালের পরিস্থিতি পরিপক্বতার সঙ্গে তুলে ধরা হয়নি। করোনার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সরবরাহে সরকারি সংস্থাগুলোর তেমন তৎপরতা ছিল না। অন্যদেশগুলো যেভাবে সরকারি উপায়ে গবেষণা করেছে, এখানে সেটা হয়নি। তবে বেসরকারি কিছু সংস্থা গবেষণা করে বাস্তবতা তুলে আনার চেষ্টা করেছে।

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে অপরিপক্ব হিসেবে উল্লেখ করেছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বাজেট শিরোনামে জীবন-জীবিকার কথা বলা হলেও এ বিষয়ে অসঙ্গতি রয়েছে। উপেক্ষা করা হয়েছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকেও।

বাজেট পরবর্তী পর্যালোচনা নিয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করে সানেম। এ সময় প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান এবং সানেমের গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা।

সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ, বাজেটে করোনাকালের পরিস্থিতি পরিপক্বতার সঙ্গে তুলে ধরা হয়নি। করোনার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সরবরাহে সরকারি সংস্থাগুলোর তেমন তৎপরতা ছিল না। অন্যদেশগুলো যেভাবে সরকারি উপায়ে গবেষণা করেছে, এখানে সেটা হয়নি। তবে বেসরকারি কিছু সংস্থা গবেষণা করে বাস্তবতা তুলে আনার চেষ্টা করেছে।

শ্রমবাজার পুনুরুদ্ধার ও দারিদ্র্য নিরসনে সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা বাজেটে নেই। বাজেট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও সন্দিহান সানেমের গবেষকরা। বলছেন, বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করতে পারাটা বাজেটের সাফল্য ধরা হয়। কিন্তু সুবিধাভোগীরা কতটুকু সুফল পাচ্ছেন সেটা বিবেচনায় নেয়া হয় না।

সেলিম রায়হান বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে করোনার কারণে নতুন করে দারিদ্র্য হার বেড়েছে। দারিদ্রের সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু দরিদ্র হয়েছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত্র। বড় সংখ্যক মানুষ গ্রামে চলে গেছে। এতে করে গ্রামের শ্রমবাজারে চাপ পড়েছে। কিন্তু এসব পরিস্থিতি উত্তরণের সামগ্রিক পরিকল্পনা বাজেটে নেই।

‘পুরাতন দরিদ্রদের পাশাপাশি নতুন করে অনেক মানুষ দরিদ্র হয়েছেন। কিন্তু এদের উত্তরণে কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি।’

সেলিম রায়হান জানান, প্রতিবছর দেখা যায় বাজেটের ২২-২৩ শতাংশ বাস্তবায়িত হয় না। বাজেটে খাত অনুযায়ী বরাদ্দ বাড়ানো আর বাজেট বাস্তবায়ন এক নয়। অর্থবছরের শেষ কয়েকমাসে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচের জন্য তাড়াহুড়ো শুরু হয়।’

সানেমের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘প্রতি বছর বাজেটের আকার বাড়ে। কিন্তু এ আকার জিডিপি অনুপাতে বাড়েনা। এজন্য পরিকল্পনা করে বাজেটের আকার বাড়ানো দরকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার জিডিপির ১ শতাংশ হারে ব্যয় হয়। এটা আরও বাড়াতে হবে। এ বাজেট এলডিসি উত্তরণে সহায়ক নয়।’

ব্যবসায়ীদের কর ছাড়ের বিষয়টি ‘অবাস্তব’ হিসেবে দেখছেন সেলিম রায়হান। বলেন, ‘ব্যবসায় উন্নতির জন্য ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন কর ছাড় দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখানেও বিষয়টা সাংঘর্ষিক। কর ছাড়ের পর কীভাবে কর আদায় বেশি হবে সেটা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।’

বাজেটে ঘাটতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের প্রক্ষেপণ ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে করোনার এসময়ে সেটা কতটা সম্ভব? বর্তমানে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ খুব কম। ব্যাংকগুলোও সতর্কভাবে তাদের কাজ পরিচালনা করছে। আগ্রাসী ঋণ বিতরণ করছে না। কারণ মহামারি পরিস্থিতিতে সবাই ব্যবসায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে। এজন্য ঘাটতি অর্থায়নে সরকারের ব্যাংক ঋণ কোনো সমস্যা হবে না। বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে।’

শিক্ষা নিয়ে বাজেটে তেমন কিছু বলা হয়নি বলেও মন্তব্য সানেমের নির্বাহী পরিচালকের। এ বিষয়ে বলেন, শিক্ষার বরাদ্দ বিষয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু গেল দেড় বছরে শিক্ষাতে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সেটা নিয়ে কিছু বলা হয়নি। অনলাইনে ক্লাসের সুবিধা পাচ্ছে মাত্র ২২ শতাংশ। শিক্ষর্থীদের বড় একটা অংশ ড্রপ আউট হচ্ছে, কিন্তু সে বিষয়ে বাজেটে কোনো আলোচনা নেই।’

এ বাজেটে ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দেয়া হলেও সাধারণ মানুষের জন্য তেমন কিছু নেই বলে উল্লেখ করেছেন সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বিদিশা।

তিনি বলেন, ‘এটা ব্যবসাবান্ধব বাজেট হয়েছে। অর্থনীতি সামগ্রিক পুনুরুদ্ধারে চেষ্টা হিসেবে ব্যবসায়ীদের অনেকক্ষেত্রে কর ছাড় দেয়া হয়েছে। কিন্তু সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষ এ ছাড়ের সুবিধা কতটা পাবে সেটা স্পষ্ট নয়। এ ছাড়ের ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে কিনা সেটাও সংশয় রয়েছে।’

বিদিশার পর্যবেক্ষণ, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসায়ীদের কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে কিন্তু করজাল বা আয়করের আওতা বাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। উচ্চবিত্তদের কীভাবে করজালে আনতে হবে সে বিষয়ে পরিকল্পনা জরুরি। এটা করতে পারলে বৈষম্য কমবে। এজন্য রাজস্ব খাতে বড় সংস্কার দরকার।

‘বাজেটে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাক রয়েছে। ছোট ছোট কিছু নীতির মাধ্যমে ব্যবসায় উন্নতির চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সার্বিকভাবে কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষায় কোনো পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। এসব খাত সংস্কারে বাজেটে সুস্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো ঢেলে সাজানোর এখনই উপযুক্ত সময়। কর্মসংস্থানমুখী কাঠামো তৈরি করতে হবে।’

শ্রমবাজারে যে ধস নেমেছে সেটা উত্তরণে কর্ম পরিকল্পনা দরকার। কিন্তু বাজেটে সেটার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন সানেমের গবেষণা পরিচালক।

কালো টাকা বিনিয়োগ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করার পরেও অর্থনীতিতে বড় ধরনের কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসেনি। কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দিলে সৎ ব্যবসায়ীদের অনুৎসাহিত করা হয়। ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বিনিয়োগ করছে। এ ধরনের সুযোগ থাকলে কালো টাকা কখনও বন্ধ হবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর